ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছয়টি সংসদীয় আসনে ৪০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যাচাই-বাছাই শেষে ওই ৪০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির কয়েকজন হেভিওয়েট প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা রয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের প্রার্থী মো. মঞ্জু মিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের একজন নিয়ম অনুযায়ী এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটি এবং আরেকজন আয়কর রিটার্ন জমা না দেয়ায় মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আটজন প্রার্থী।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে ১১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী আনিছুর রহমান, সৈয়দ তানভীর হোসেন, শাহজাহান আলম সাজু, মো. সফিউল্লাহ্, আশরাফ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তাদের দাখিল করা এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটির কারণে। এছাড়া হলফনামা ও আয়কর রিটার্নে গড়মিলের কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোখলেছুর রহমান ও আয়কর না দেয়ায় মো. গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। আর বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আবু আসিফ আহমেদ আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে করা পদত্যাগপত্র গৃহিত হয়েছে কিনা-তার কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। ঋণ খেলাপী হওয়ায় বিএনপির আরেক প্রার্থী আখতার হোসেনের মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন মোল্লা তার হলফনামায় চলমান মামলার বিবরণ না দেয়ায় এবং গণফোরামের প্রার্থী শাহ্ মফিজের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে হলফনামা ও আয়করের তথ্যে মিল না থাকায়। এ আসনে ২৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর ও বিজয়নগর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিলকারী ১৬ জনের মধ্যে ১০ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। পৌরকর পরিশোধ না করায় জাতীয় পার্টির আবদুল্লাহ আল হেলাল, হলফনামায় মামলার তথ্য না থাকায় এবং এক শতাংশ ভাটারের সমর্থনসূচক সাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী জামাল রানা, ভোটার তালিকায় ত্রুটি ও আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় মো. আবু হানিফ, মো. বশির উল্লাহ জুরু এবং আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় মো. ওমর ইউসুফ খান ও মো. মাঈন উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এছাড়া আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দ মাহমুদুল হক আক্কাছ, কর প্রদান না করায় বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, আয়কর রিটার্ন দাখিলের তথ্য সঠিক না হওয়ায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী সৈয়দ আনোয়ার আহম্মদ লিটন, পৌরকর পরিশোধ না করায় এবং হলফনামায় আয়ের উৎস না থাকায় গণফোরামের তারিকুল রৌফের মনোনয়পত্রটি বাতিল করা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী মুশফিকুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। তার দাখিল করা মনোনয়নপত্রের ফরম নম্বর ২১ পূরণ না করায় মনোনয়নপত্রটি বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এই ফরমে সম্পদ ও দায় এবং বাৎসরিক আয় ও ব্যয়ের হিসেব লিপিবদ্ধ করতে হয়।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য মুশফিকুর রহমান আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এডভোকেট আনিসুল হকের বিপরীতে নির্বাচন করার জন্যে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। তিনি ছাড়াও বিএনপির আরেক প্রার্থী ও আখাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুসলিম উদ্দিনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। মুসলিম উদ্দিন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের পদ থেকে যে পদত্যাগ করেছেন তা গৃহিত হয়েছে কিনা সেই মর্মে কোনো কাগজ দেখাতে না পারায় বাতিল করা হয় তার মনোনয়নপত্র।
ঋণ খেলাপী হওয়ায় ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মো. দেলোয়ার হোসেন, এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটির কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদুছ আক্তার এবং ঋণ খেলাপী হওয়ায় আহমেদ শাহ মোর্শেদ শাহীনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এ আসনে ১০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনে ১৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছিলেন। এর মধ্যে ছয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নের সুপারিশপত্র না থাকায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ.কে.এম মমিনুল হক সাঈদ, ঋণ খেলাপী হওয়ায় বিএনপির প্রার্থী কাজী নাজমুল হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। এছাড়া জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী কাজী মো. মামুনুর রশিদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে মামলার বিবরণীতে তথ্য সঠিক না হওয়ার কারণে। নরসিংদীর একটি মামলার তথ্য দেননি তিনি। একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম ভূইয়া ও সায়েদুল হক সাঈদের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয় এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সাক্ষরযুক্ত তালিকায় তালিকায় ত্রুটির কারনে। এছাড়া হলফনামায় আয়ের উৎস না থাকায় মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী মাওলানা মেহেদী হাসানের।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ (বাঞ্ছারামপুর) আসনে মনোনয়নপত্র দাখিল করা ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে হলফনামায় মামলার কথ্য না থাকায় বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ আবদুল খালেক, দলীয় সুপারিশপত্রের স্বাক্ষরে ঘষামাজা থাকায় বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ জিয়াউদ্দিন, আয়কর রিটার্ন না দেয়ায় বিএনপির আরেক প্রার্থী রফিকুল ইসলাম সিকদার, ক্রটিপূর্ণ হলফনামা ও নোটারী না করায় জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী জেসমিন নূর বেবী, আয়কর রিটার্নের সনদ সত্যায়ন না করায় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রার্থী কে.এম জাবির এবং এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক সাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটি থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী কবির হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া এসব প্রার্থী আগামী তিনদিনের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তার আদেশের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে আপিল করতে পারবেন। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন। এরপর ১০ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে বলে জানা গেছে।
এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও রিটানিং কর্মকর্তা হায়াত-উদ-দৌলা খান জানান ৪০ জন প্রার্থী মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে ৬টি আসনে বৈধ প্রার্থী ৪৭ জন। মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আপিল করার সুযোগ পাবে।
Leave a reply