মাহবুবুর রহমান রিপন, সিলেট ব্যুরো
মর্যাদার আসন সিলেট-১। স্বাধীনতার সব কটি জাতীয় নির্বাচনে এই আসনে যে দল জিতেছে তারাই সরকার গঠন করেছে । এই মিথের কারণে সব দলই জয় নিশ্চিত করতে হেভিওয়েট প্রার্থী কে মনোনয়ন দেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর ব্যতিক্রম নয়। আওয়ামী লীগ আসনটি ধরে রাখতে প্রার্থী দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের ছোট ভাই ও স্থানীয় রাজনীতিতে বাইরে থাকা সাবেক আমলা ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে।
আর বিএনপিতে দলের ভাইস চেয়ারম্যান, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী আর দলের চেয়ারপাারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মোক্তাদীরকে মনোনয়নন দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগে প্রার্থী নিয়ে স্বস্তি থাকলেও দুই প্রার্থীতে বিভক্ত ছিল বিএনপি নেতাকর্মীরা। পছন্দের পেছনে একপক্ষের যুক্তি হেভিওয়েট ঠেকাতে হেভিওয়েট এবং অন্যপক্ষ চান তৃণমূলের কাছের মানুষ। প্রথম যুক্তিতে এগিয়ে ছিলেন ইনাম আহমদ চৌধুরী আর দ্বিতীয় খন্দকার মুক্তাদীর। তবে শনিবার রাতে দলের চুড়ান্ত মনোনয়ন দিতে তৃণমূলের পছন্দকেই বেছে নিয়েছে দলের হাইকমান্ড।
এই আসনে অতীতের ইতিহাস ও বলছে তৃণমূলের পছন্দের উপর সব সময়ই টেক্কা দিয়েছে হেভিওয়েট প্রার্থীরা। এক সময়ে সিলেট বিএনপির কান্ডারি ছিলেন খন্দকার আব্দুল আব্দুল মোক্তাদিরের বাবা খন্দকার আবদুল মালিক। তার হাত ধরেই সিলেট বিএনপির বীজ বপন হয়। সিলেট-১ আসনে ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে সাংসদ নির্বাচিত হন খন্দকার মালিক। ১৯৯১ সালে সিলেটের ১৯টি আসনের মধ্যে কেবল এই আসনেই বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছিলেন। হেভিওয়েটদের চালে নিরবে রাজনীতি থেকে সরে পড়েন খন্দকার আব্দুল মালিক । এরপর আর সক্রিয় রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি খন্দকার আবদুল মালিক। তাকে সরিয়ে ১৯৯৬ সালে প্রার্থী হয়ে সিলেটের রাজনীতি দখলে নেন হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক অর্থমন্ত্রী এম. সাইফুর রহমান। ২০০৮ পর্যন্ত তারই আধিপত্য ছিল সিলেটে। তার মৃত্যুর পর ২০১৪ সালের দশম জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০১২ সালের শুরুর দিকে সিলেট-১ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দোহাই দিয়ে মাঠে নেমেছিলেন দলটির তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী বীরবিক্রম। একই সময়ে সিলেট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক এমপি মরহুম খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে খন্দকার আবদুল মোক্তাদীরও তৎপর হয়ে ওঠেন। সমশের মবিন প্রার্থী হতে চাইলে বাবার মতই পরিনতি হতে যাচ্ছিল খন্দকার মোক্তাদিরের তবে ২০১৫ সালের অক্টোবরে আকস্মিককভাবে মবিন দল থেকে পদত্যাগ করলে মাঠ দখলে নেন খন্দকার মোক্তাদির। দলে পদ পদবী না থাকলেও তৃণমূল গোছাতে কোমর বেঁধে নামেন তিনি।
দলীয় নেতাকর্মীদের একতাবদ্ধ করতে প্রতিটি ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডে সভা সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের আস্থা অর্জন করেন। সেই সাথে নেতাকর্মীদের জেল, মামলায় পাশে থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে খুব কম দিনেই কাছের মানুষ হয়ে পড়েন খন্দকার আবদুল মোক্তাদীর। ২০১৬ সালের ৬ আগষ্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ ব্যাংকিং ও রাজস্ব সম্পাদক হিসেবে খন্দকার মোক্তাদিরকে মনোনীত করা হয়। এর তিন দিন পরই তা সংশোধন করে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনোনীত করা হয়। এর পর সিলেট-১ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন এটা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায়।
এবার প্রার্থী হন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। ইনাম আহমদ কে মনোনয়ন দেয়ার পরই আবারো অতীতের সেই হেভিওয়েট বিড়ম্বনা শুরু হয়েছিল খন্দকার মোক্তাদিরের ভাগ্যে। কিন্তু এবার আর বাবার মত পিছু হটতে হয়নি তাকে । রাজনৈতিক দুরদর্শিতায় হেভিওয়েট ইনাম আহমদ চৌধুরীকে টেক্কা দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন রাজনীতিতে বাবার চেয়ে ভাল খেলোয়াড় তিনি। খন্দকার আবদুল মোক্তাদিরের ব্যবসায়ী পরিবারেই জন্ম। নিজেও সেই পথেই ছিলেন। ১৯৮৯ সালে ছাত্র অবস্থায় সিলেট পরিবহন সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হন। শিক্ষাজীবনে সিলেট ক্যাডেট কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। পরবর্তীতে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রী নেন। পড়াশুনা শেষে তিনি গার্মেন্টস শিল্পের সাথে জড়িত হয়। বর্তমানে তিনটি আমদানী রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান ও ৩ টি টেক্সটাইল কারখানা রয়েছে তার।
Leave a reply