ইফতারে আরবদের পাতে শোভা পায় যেসব ঐতিহ্যবাহী খাবার

|

আজ শনিবার (১ মার্চ) থেকে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচের দেশগুলোতে শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। সন্ধ্যায় বছরের প্রথম রমজানের ইফতারে বসবেন সেখানকার বাসিন্দারা। পৃথিবীর প্রতিটি দেশের ইফতারসামগ্রীতে রয়েছে আলাদা ঐতিহ্য। স্থান, ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে খাদ্যাভ্যাস যেমন ভিন্ন, তেমনি এর স্বাদ কিংবা মুখরোচকতায় মিশে থাকে আলাদা আবহ। আরবের ইফতারে মেনু ও আনুষঙ্গিক গল্পের সাথে পরিচিত হই চলুন।

সৌদি আরবে পারিবারিকভাবে একত্রিত হবার অন্যতম উপলক্ষ ইফতার। এ সময় পরিবার প্রধানের বাড়িতে মিলিত হয় সব বয়সীরা। একাকী ইফতার করার রীতি খুব একটা দেখা যায় না তাদের ক্ষেত্রে। পরিবার ছাড়াও মসজিদগুলো ইফতার উপলক্ষে একটি মেলবন্ধন তৈরি করে। প্রতিটি মসজিদেই ইফতারের আয়োজন করা হয়।

সাধারণত পরিবারগুলোর মধ্যে দুই পর্যায়ে ইফতারের রীতি আছে। প্রথমে শুধু গাহওয়া (আরবি কফি) ও খেজুর খাওয়া হয়। মাগরিবের নামাজের পর মূল পর্ব শুরু হয়।

দেশটির পশ্চিমাঞ্চল তথা মক্কা, জেদ্দা ও মদিনা শহরগুলোর ইফতারে হিজাজি রন্ধনশৈলীতে তৈরি খাবারের প্রচলন আছে। রমজানে বিশেষ সুস্বাদু খাবারের জন্য এই অঞ্চলটি খুবই পরিচিত। মূলত শাবানের শেষ সপ্তাহ থেকেই এসব প্রস্তুত করা হয়। দেশটির পশ্চিমাঞ্চলকে তথা লোহিত সাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলকে হিজাজ এরিয়া বলা হয়ে থাকে।

এই অঞ্চলের খাবারের মধ্যে রয়েছে শুরাইক রুটি, দুগগাহ, রুতাব ও সুক্কারিসহ বিভিন্ন ধরনের খেজুর, জমজমের পানি, সামবোসা, গাহওয়া, ফৌল, বালিলা ইত্যাদি। হিজাজ অঞ্চলে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ দুটি খাবারের একটি হলো বার্লি স্যুপ। হাব নামে পরিচিত খাবারটি বিশেষ সুগন্ধি ও স্বতন্ত্র স্বাদের জন্য বিখ্যাত।

আরেকটি খাবার হলো সামবোসা। মূলত তা ত্রিভুজ আকারের ভাজা সুস্বাদু পেস্ট্রি। এর ভেতরের অংশ গ্রাউন্ড বিফ বা চিকেন দিয়ে ভরা থাকে। হিজাজসহ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সাহরি ও ইফতারের অন্যতম উপাদান ফৌল। দেশ ও অঞ্চলভেদে তা তৈরির নিজস্ব নিয়ম আছে।

হিজাজ অঞ্চলে এ খাবারে বিশেষ ধরনের ধোঁয়াটে গন্ধ থাকে। ছোলা ও মসলা থেকে তৈরি বিশেষ ধরনের রুটি, যা ঘি ও সুহাইরা দিয়ে পরিবেশন করা হয়। রমজান মাসে এ খাবারের প্রতি সবার বেশ আগ্রহ থাকে।

মিষ্টান্ন খাবার হিসেবে কলা, বাদাম, পনির ও ক্রিম কুনাফা ও জুবনিয়া। পেস্ট্রি ময়দার তৈরি জুবনিয়া মিষ্টি পনির দিয়ে রাখা হয়। এরপর তা ভালোভাবে ভেজে চিনির সিরাপে ডুবিয়ে খাওয়া হয়। ইফতারসামগ্রী হিসেবে এ খাবারের প্রাচীন ঐতিহ্য আছে।

এখানকার আরেকটি জনপ্রিয় মিষ্টি খাবার হলো সাগদানা, যা সাগু, দুধ ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। এই অঞ্চলের বহুল জনপ্রিয় সতেজ পানীয় হলো সোবিয়া। কয়েক শ বছর আগে মিসরীয় হাজিদের মাধ্যমে তা হিজাজে জনপ্রিয় হয়। বার্লি, ময়দা, শুকনো রুটি ও চিনি দিয়ে তৈরি এ পানীয় সাধারণত রাস্তায় বিক্রি হয়।

আরেকটি জনপ্রিয় পানীয় হলো কামর আল-দিন। খুবই ঘন ও মিষ্টি এ শরবত এপ্রিকট ফল থেকে বানানো হয়। মদিনার আল-খোসা, মক্কার আল-খোদারি ও আল-হুসাইনি এবং জেদ্দায় হানবাজাজা পরিবারসহ হিজাজের বিখ্যাত পরিবারগুলো সবচেয়ে সেরা সোবিয়া পরিবেশন করে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের জাজানে ইফতারসামগ্রী হিসেবে মগশ, মারসা ও মাশগৌথার মতো ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি ও সুস্বাদু খাবার পরিবেশন করা হয়। প্রথমে তা তাজা দুধের সঙ্গে মিশ্রিত ময়দা দিয়ে তৈরি করা হয় এবং খেজুরের সঙ্গে গরম করে পরিবেশন করা হয়। অধিকাংশ পরিবারই এসব খাবার তৈরিতে ঐতিহ্যবাহী রন্ধনশৈলী অনুসরণ করে। তা ছাড়া মাংস, সামবোসা, মাছ, কামার আল-দিনের জুস, শাফুটসহ শস্যের স্যুপ ও মাখলুটা ইফতার হিসেবে পরিবেশন করা হয়।

দেশটির মধ্য অঞ্চলের ইফতারসামগ্রীতে রয়েছে কিছুটা ভিন্নতা। এখানকার বাসিন্দারা আসিদাহ, মারগুগ, মাফরুক ও মাতাজিজ দিয়ে ইফতার করেন।

ঐতিহ্যবাহী নাজদি মিষ্টান্ন খাবারগুলো বাদামি শস্য, গরুর মাংস, শাকসবজি, মধু, পেঁয়াজ বা ঘি দিয়ে তৈরি করা হয়। শীত মৌসুমে এসব গরম খাবার শরীরে শক্তি ও উষ্ণতা তৈরি করে।

সৌদি আরবের পূর্বাঞ্চলে ইফতারে কিছুটা বৈচিত্র্য রয়েছে। এখানকার জনপ্রিয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে খেজুর গুড়ের সারিদ ও ভাজা ডাম্পলিং। সারিদ হলো এক ধরনের সবজির মিশ্রণ, যা চিনি, গাজর ও আলু দিয়ে তৈরি করা হয়।

রিয়াদ থেকে কাসিম অঞ্চলে ইফতারসামগ্রীর অন্যতম একটি উপাদান তাওয়া। তা গমের আটা, কালিজিরা ও চিনি দিয়ে তৈরি করা হয়। হায়েল অঞ্চলের জনপ্রিয় একটি খাবার হলো মাকশুশ। তা ঘি, মধু, খেজুর, গুড় ও চিনি মিশিয়ে তৈরি করা হয়। গত মাসে খাবারটি সৌদি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের রন্ধনশিল্প কমিশন জাতীয় ডেজার্ট হিসেবে নির্বাচিত হয়।

/এমএইচআর


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply