আহাদুল ইসলাম:
ইংরেজি ভাষায় এইটি শব্দ রয়েছে ‘salvation’। যার অর্থ ‘পরিত্রাণ’। বলা যায়, রমজান এমন একটি মাস যেই মাসে ইবাদাতের মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করা যায়। পাওয়া যায় পাপ থেকে মুক্তি। তাই মহান আল্লাহ ঈমানদারদের জন্য এই মাসটি উপহার দিয়েছেন। তাই এই মাসটি বছরের বাকি মাসগুলোর মতো সাধারণ নয়; বরং অসাধারণ। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত— মোট তিনটি ধাপ রয়েছে এই মাসে। এছাড়াও মানবজাতির কল্যাণের জন্য পবিত্র কোরআন মাজিদ নাজিল হয় এই মাসেই ।
মহান আল্লাহ সূরা আল বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘শাহরু রামাদানাল্লাজি উনযিলা ফিহিল কুরআন‘ অর্থাৎ এ সেই রমজান মাস, এ মাসেই কুরআনুল কারীম নাজিল হয়েছে।
তাই, এই মাসে যেই আমলই করা হবে, সেই আমলকে দ্বিগুণ করে দেয়া হবে। এমনকি যেই পূর্বের পাপ কাজের জন্য ক্ষমা চাইবে, তাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে। ফজিলতপূর্ণ এই মাসটিকে কেন্দ্র করে নিতে হবে প্রস্তুতি। তবে, সেটা সেহরি কিংবা ইফতারের খাবার আয়োজন নিয়ে নয়; বরং পুরো মাসজুড়ে কীভাবে ইবাদাত করা যায়; সেটির জন্য নিতে হবে প্রস্তুতি।
এ বিষয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ যমুনা টেলিভিশনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, বিশেষ এই মাসে ইবাদাতের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। সারা বছরে যাদের সালাত কাজা হয়েছে, তারা এই মাসে বেশি বেশি করে সেই সালাতগুলো পড়ে ফেলতে পারেন। সেই সাথে, কোরআন মাজিদ যারা সারা বছরে পড়তে পারেননি, তারা অর্থ বুঝে কোরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। এছাড়াও, প্ল্যান করে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার চেষ্টাও করা যেতে পারে।
আজ ১ম রমজান। তাই রমজানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন মাজিদ পড়ার অভ্যাস হতে পারে ভালো কিছুর সুচনা। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য সূরার মধ্যে একটি সূরা গুরুত্ব সহকারে পড়া নিয়ে আজকের আয়োজন। সূরাটির নাম কাফ। পবিত্র কোরআনের ৫০তম সুরা এটি। এটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়।
অবিশ্বাসীদের মতে পার্থিব জীবনই শেষ, পুনরুত্থান বলে কিছু নেই, তাদের লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ এই সূরা নাজিল করেছেন। সূরাটির ৪৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমিই জীবন দেই, আমিই মৃত্যু দেই, আর আমার কাছেই সবাইকে ফিরে আসতে হবে’।
এছাড়াও আল্লাহ লক্ষ্য করতে বলেছেন কীভাবে নিথর মাটি কীভাবে আবার জীবনীশক্তিতে ভরে ওঠে এবং নুহ (আ.)–এর সম্প্রদায়, সামুদ সম্প্রদায়, আদ জাতি, ফেরাউন ও লুত সম্প্রদায় এক আল্লাহকে অস্বীকার করার কারণে কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছে।
সূরাটির ২০ থেকে ৩১ নম্বর আয়াত পর্যন্ত মহান আল্লাহ কিয়ামতের প্রসঙ্গে বিষদভাবে বর্ণনা করেছেন। ‘অতঃপর সিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। সেটাই হল শাস্তির দিন (সেই দিন সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছিলো)। ওইদিন প্রত্যেক ব্যক্তি আসবে এমন অবস্থায় যে একজন (ফেরেশতা) তাকে হাঁকিয়ে নিয়ে আসবে আর একজন (ফেরেশতা) থাকবে সাক্ষ্যদাতা হিসেবে।
বলা হবে, এ দিন সম্পর্কে তুমি ছিলে উদাসীন। তোমার সামনে যে পর্দা ছিলো; তা আমি সরিয়ে দিয়েছি। (সে কারণে) তোমার দৃষ্টি আজ খুব তীক্ষ্ম। তার সঙ্গী (ফেরেশতা) বলবে ‘এই যে আমার কাছে (আমালনামা) প্রস্তুত।’
নির্দেশ দেয়া হবে, তোমরা উভয়ে প্রত্যেক অবাধ্য কাফিরকে নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। যারা ছিলো কল্যাণের প্রতিবন্ধক, সীমালঙ্ঘনকারী ও সন্দিগ্ধ চিত্ত। যে আল্লাহর সঙ্গে অন্যকে ইলাহ্ বানিয়ে নিয়েছিলো। কাজেই তোমরা উভয়ে তাকে কঠিন ‘আযাবে’ নিক্ষেপ কর।
তার সঙ্গী বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমি তাকে বিদ্রোহী বানাইনি বরং সে নিজেই ছিল সুদূর গুমরাহীর মধ্যে।’ আল্লাহ বলবেন, ‘আমার সামনে বাদানুবাদ করো না, আমি আগেই তোমাদেরকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম। আমার কথা কক্ষনো বদলে না, আর আমি আমার বান্দাহদের প্রতি যুলমকারীও নই।
সেদিন আমি জাহান্নামকে জিজ্ঞেস করব, ‘তুমি কি পরিপূর্ণ হয়েছ’? সে বলবে, ‘আরো বেশি আছে কি?’ মুত্তাক্বীদের জন্য জান্নাতকে নিকটে আনা হবে- তা মোটেই দূরে থাকবে না।
এরপর ৩৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বিশ্বাসীদের উদ্দেশে বলেন, যে না দেখেই দয়াময় (আল্লাহকে) ভয় করতো, আর আল্লাহর নির্দেশ পালনের জন্য বিনয়ে অবনত অন্তর নিয়ে উপস্থিত হতো। তাদেরকে বলা হবে ‘শান্তির সঙ্গে এতে (জান্নাতে) প্রবেশ কর, এটা চিরস্থায়ী জীবনের দিন। সেখানে তাদের জন্য তা-ই আছে; যা তারা ইচ্ছে করবে, আর আমার কাছে (তাছাড়াও) আরো বেশি আছে।’
এরপর সূরার শেষ দুই আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন পৃথিবী দীর্ণ বিদীর্ণ হবে, আর মানুষ ছুটে যাবে হাশরের পানে। এই একত্রীকরণ আমার জন্য খুবই সহজ। তারা (তোমার বিরুদ্ধে) যা বলে তা আমি ভাল করেই জানি, তুমি তাদের ওপর জবরদস্তিকারী নও। কাজেই যে আমার শাস্তির ভয়প্রদর্শনকে ভয় করে, তাকে তুমি কুরআনের সাহায্যে উপদেশ দাও।’
কিয়ামত কতোটা ভয়াবহ কিংবা এটি ঘটবেই; এই বিষয়টি মানবজাতিকে বোঝানোর জন্য এই সূরাটি নাজিল করা হয়েছে। সেই সাথে মুত্তাকীদের জন্য কি ধরনের পুরস্কার রয়েছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে মহান আল্লাহ বিস্তারিতভাবে বলেছেন। সূরাটি বুঝে পড়ার মাধ্যমে প্রত্যেক মুমিন নিজেকে নতুনভাবে গড়বার খোরাক খুঁজে পাবে; এমনটাই আশা!
/এআই
Leave a reply