দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে নির্বাচন দরকার। এটাকে আমি রাজনৈতিক সফলতা হিসেবে দেখি। এবিষয়ে আমি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তাদেরকে আস্থায়ও এনেছি। কিন্তু বিরোধীরা আমার কথা শোনেনি। তারা নির্বাচনকে বানচাল করে দিতে চায়।
আসন্ন একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যুতে ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত নির্বাচনে তারা যা করেছে তা ছিল খুবই ভয়াবহ। তারা ককটেল ছুঁড়েছে, ৩৯০০টি গাড়ি পুড়িয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। কিন্তু আমি জনগণের শক্তিতে বিশ্বাসী এবং আমরা তাদের সহযোগিতায় জয়ী হয়েছি, যদিও প্রধান বিরোধী দল এতে অংশগ্রহণ করেনি।
এই নির্বাচনেও আমরা প্রস্তুত। তারা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে।
সাক্ষাতকারে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন। এরমধ্যে তার সরকারের অর্জন, তিস্তা চুক্তি, রোহিঙ্গা ইস্যু, বিরোধী পক্ষ, সার্ক ইস্যু, সন্ত্রাসবাদ উল্লেখযোগ্য।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ভারত আমাদের জনগণকে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দিয়ে সহায়তা করেছিল। এজন্য আমরা এখনও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরাও রোহিঙ্গাদেরকে মানবিক দিক বিবেচনায় সহায়তা করেছি। মিয়ানমারের সঙ্গে আমরা কোনো বিবাদ চাই না। তবে তাদের সঙ্গে আমরা একটি চুক্তি করেছি, সেখানে তারা আমাদেরকে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা তাদেরকে বলেছি আপনারা উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করুন, তারা চিরদিন ক্যাম্পে থাকতে পারে না। ভারত ও চীন সমর্থন দিচ্ছে মিয়ানমারকে। এক্ষেত্রে আমরা ভারতের একটু সাহায্য চাই।
তিস্তা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতে অব্যাহত গণতন্ত্র আছে। এটা জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছে। সম্ভবত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু কারণ আছে যার কারণে তিস্তা চুক্তি হচ্ছে না। আমাদের দেশের নদীগুলোতে বেশি পানি ধরে রাখার জন্য ড্রেজিং করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমি পরামর্শ দিয়েছি যে, তাদের নদীগুলোকেও একই রকমভাবে খনন করা উচিত। আর যৌথ নদী কমিশন যেহেতু ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে, এখন আমাদের অভিন্ন নদীগুলোও যৌথভাবে ড্রেজিং করা যেতে পারে।
বিগত সময়ে তার সরকারের অর্জন নিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার অনেক ভাল কাজ করেছে, ফলে আমরা আশা করি আবারও সরকার গঠন করতে পারবো। বর্তমানে আমাদের জাতীয় প্রবৃদ্ধি শতকরা ৭.৮৬ ভাগ। অন্যদিকে মুদ্রাস্ফীতি শতকরা ৫ ভাগের সামান্য বেশিতে ধরে রাখতে পেরেছি। বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। পদ্মাসেতুর মতো বড় প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছিল, কিন্তু আমরা নিজেরাই তা করার সিদ্ধান্ত নেই। আমরা ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০০তম জন্মবার্ষিকী ও দেশের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে চাই। আমরা ক্ষমতায় না ফিরলে আমি মনে করি, বাংলাদেশের সৌভাগ্যে ঘাটতি হবে।
বিরোধীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপির মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামী যুক্ত আছে। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ তাদের আদর্শকে গ্রহণ করবে না কখনও। নির্বাচনের একটি উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমরা।
সার্ক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময়ই প্রতিবেশী ও আঞ্চলিক সহযোগিতাকে মূল্যায়ন করি। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আমরা ক্ষমতার থাকলে পাকিস্তান আমাদের বিরুদ্ধে নানা কর্মকাণ্ড চালানোর চেষ্টা করে। সন্ত্রাসবাদকে উস্কে দেয় তারা। এখন পাকিস্তানের অবস্থা দেখেন। তাই এক দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আরেক দেশের কখনও হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
Leave a reply