বইমেলায় ফারুক সুমনের ‘শিল্পের করতালি’

|

এবারের একুশে গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ফারুক সুমনের শিল্প-সাহিত্য বিষয়ক প্রবন্ধের বই ‘শিল্পের করতালি’। বইটি বের হয়েছে ভিন্নচোখ প্রকাশনি থেকে। ৮০ পৃষ্টার বইটির দাম রাখা হয়েছে ২০০ টাকা আর মেলায় পাওয়া যাবে ৪০৭ নম্বর স্টলে।

লেখক ফারুক সুমন বলেন, ‘মূলত শিল্পাঙ্গনে কবিতাই আমার আরাধ্য। কিন্তু কখনোবা পাঠাভিজ্ঞতার আলোকে শিল্প সংশ্লিষ্ট গদ্য লিখি। এসব গদ্য একান্তই ব্যক্তিগত বোঝাপড়ার বহিঃপ্রকাশ। খুব বেশি তত্ত্বনির্ভর সমালোচনা নয় বলে একজন সাধারণ পাঠকও বিষয় ঘনিষ্ঠ গদ্যের রসাস্বাদনে উৎসাহী হবেন। ব্যক্তির পঠনপাঠনের মাত্রা ভেদে শিল্পবোধেও স্বতন্ত্র অভিপ্রায় আভাসিত হয়। বোধকরি এটাই সহজাত এবং স্বাভাবিক। তবুও লেখক মাত্রই একজন একনিষ্ঠ পাঠক। বিভিন্ন সময়ে পড়তে পড়তে মাথার মধ্যে যে চিন্তাবিন্দু জমা হয়েছে, গ্রন্থভুক্ত প্রবন্ধগুলোতে তার প্রকাশ হয়তো দেখা যাবে। মূলত প্রবন্ধকার যে বিষয়ে লিখছেন সেটাই শেষ কথা নয়। বরং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কৌতূহলী মনোভাব তৈরি করাই একজন গদ্য লেখকের অভীষ্ট লক্ষ্য। প্রবন্ধকার হিসেবে আমি এই স্বাধীনতা গ্রহণ করেছি।

লেখক ফারুক সুমন ১৯৮৫ সালের ১ মার্চ চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার অন্তর্গত শিবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্থানীয় দেয়ালিকায় ছড়া ও কবিতা দিয়ে লেখালেখির হাতেখড়ি। তখন শিল্পসাহিত্যে আনাড়ি এই বালকের নতুন বিস্ময় ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। কারণ এখানে এসে কিছু সৃষ্টিশীল গুণী মানুষের সংস্পর্শ তাঁর ভাবনাবিশ্বকে প্রবল ভাবে আলোড়িত করে। প্রয়াত নাট্যকার, নাট্যাচার্য সেলিম আলদীন, কবি মোহাম্মদ রফিক, কবি খালেদ হোসাইন, লেখক ও গবেষক আবু দায়েন, কবি ও গল্পকার রায়হান রাইন, কবি হিমেল বরকত, কবি সুমন সাজ্জাদ প্রমুখ ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্য তাঁকে শিল্পের সড়কে হাঁটতে শেখায়। ছাত্রাবস্থায় যৌথ সম্পাদনায় প্রকাশ করেন সাহিত্য সংশ্লিষ্ট ছোট কাগজ ‘অক্ষৌহিণী’। বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক পাঠচক্র ‘কালবোধন’ এর সংগঠক ছিলেন।

ফারুক সুমন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে যথাক্রমে স্নাতক (২০০৫), স্নাতকোত্তর (২০০৬) প্রথম শ্রেণি এবং উচ্চতর এম. ফিল. (২০১৪) ডিগ্রি অর্জন করেন। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়েছে। কবিতার প্রতি দুর্নিবার আকর্ষণ থাকলেও মননশীল গবেষণার প্রতি তিনি সমান আগ্রহী। তাঁর প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ গবেষণা-কেন্দ্রিক। গ্রন্থের নাম ‘শামসুর রাহমানের কবিতা: নগর-চেতনা ও নাগরিক অনুষঙ্গ ‘(২০১৫)। এই গ্রন্থের জন্য তিনি “উপমা-খোলাচিঠি সম্মাননা- ২০১৬” লাভ করেন। এছাড়া একাডেমিক কৃতিত্বের জন্য ২০০৬ সালে “নিপ্পন ফাউন্ডেশন অব জাপান” থেকে শিক্ষাবৃত্তি লাভ করেন। প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘অচঞ্চল জলের ভিতর নিরাকার বসে’ (২০১৭) এবং “আঙুলের ডগায় সূর্যোদয়’ (২০১৮)। ‘শিল্পের করতালি’ তাঁর চতুর্থ (প্রবন্ধ) গ্রন্থ। পরিচিত মহলে একজন আবৃত্তিকার হিসেবে তাঁর সুনাম রয়েছে।

এদিকে ফারুক সুমন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ প্রতিষ্ঠিত ‘বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র’- এ ইউনিট ইনচার্জ হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও শিক্ষকতাই তার আসল ব্রত। তিনি যথাক্রমে ‘গুলশান কমার্স কলেজ’ এবং ‘কুইন মেরী কলেজ’- এ বাংলা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ‘বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ’ (রাইফেলস কলেজ, বিজিবি সদর, পিলখানা, ঢাকা)- এ বাংলা বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

ফারুক সুমন তার ভবিষ্যৎ ভাবনা বিষয়ে জানান, ইতোমধ্যে বেশকিছু গদ্য লেখা হয়েছে। যেগুলো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সাহিত্য সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এই গ্রন্থে সর্বমোট ১০টি গদ্য সন্নিবেশিত হয়েছে। ভবিষ্যতে অবশিষ্ট গদ্যগুলো অন্য কোনো গ্রন্থে মলাটবন্দি করার ইচ্ছা রাখি।

‘শিল্পের করতালি’গ্রন্থে সর্বমোট ১০টি প্রবন্ধ সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রবন্ধগুলো হলো-

১. রবীন্দ্রনাথঃ সমগ্রতাস্পর্শী শিল্পপ্রতিভা

২. লিয়েফ তলস্তোয়: মানবদরদি মহত্তম শিল্পী

৩. জয়নুল আবেদিন: অমর চিত্রকর

৪. শামসুর রাহমানের কাব্য-ভাবনা

৫. বিতর্কের বৃত্তে ‘শামসুর রাহমান-আল মাহমুদ’

৬. বেলাল চৌধুরী: ব্যক্তি ও কবি

৭. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী: সম্মুখ থেকে সম্মুখে

৮. তপন বাগচী: একনিষ্ঠ শিল্প-সাধক

৯. অনিকেত শামীমের কবিতা: উপলব্ধির উৎসার

১০. দশকধারণা, শূন্যদশকের কবি ও কবিতা


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply