চিটাগংকে বিদায় করে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ঢাকা

|

টুর্নামেন্টে টিকে থাকতে এ ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না কোনো দলের। সেই যাত্রায় উতরে গেল ঢাকা ডায়নামাইটস। ব্যর্থ হলো চিটাগং ভাইকিংস। চাটগাঁর দলটিকে ৬ উইকেটে হারাল রাজধানীর দলটি। এ জয়ে বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে উঠে গেল সাকিব বাহিনী। সেখানে প্রথম কোয়ালিফায়ারে পরাজিত দলের মোকাবেলা করবে তারা। এরই সঙ্গে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় ঘটল মুশফিক বাহিনীর।

জবাবে উড়ন্ত শুরু করে ঢাকা ডায়নামাইটস। ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে নেমে রীতিমতো তোপ দাগান সুনিল নারাইন ও উপুল থারাঙ্গা। দুই ওপেনারের তাণ্ডবে ৪ ওভারেই ৪৪ রান তুলে ফেলে রাজধানীর দলটি। তুলনামূলক বেশি আগ্রাসী ছিলেন নারাইন। অতিরিক্ত চড়াও হওয়ার খেসারত গুনে খালেদ আহমেদের বলে নাঈম হাসানকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। ফেরার আগে মাত্র ১৬ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৩১ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার।

দলকে দুরন্ত সূচনা এনে দেয়ার পর রনি তালুকদারকে নিয়ে এগিয়ে যান থারাঙ্গা। দারুণ সঙ্গও পান তিনি। আচমকা থেমে যান রনি। খালেদের এলবিডব্লিউ হয়ে ব্যক্তিগত ২০ রানে ফেরেন তিনি। পরে বলেই সাকিব আল হাসানকে ডেলপোর্টের ক্যাচ বানিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান এ পেসার। তবে তা আলোর মুখ দেখেনি। ঢাকা শিবিরে যা একটু আতঙ্ক ছড়ান এ খালেদই।

চিটাগংয়ের বাকি বোলাররা ব্যর্থ থেকেছেন। স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে জয়ের পথে এগিয়েছে ঢাকা। টপঅর্ডারের ৩ ব্যাটসম্যান ফিরলেও একপ্রান্ত আগলে শক্ত হাতে খেলা ধরে থাকেন থারাঙ্গা। ধরার বল ধরে ও মারার বল বাউন্ডারি ছাড়া করে দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যান তিনি। তুলে নেন নান্দনিক ফিফটি। তাকে যথার্থ সঙ্গ দেন নুরুল হাসান। তবে ফিফটির পর বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে পারেননি থারাঙ্গা। ৪৩ বলে ৭ চারে ৫১ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে ফেরেন এ লংকান।

ততক্ষণে জয় হাতছোঁয়া দূরত্বে। কাইরন পোলার্ডকে নিয়ে বাকি কাজটুকু সারেন নুরুল। শেষ পর্যন্ত ২০ বল ও ৬ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে নোঙর করে ঢাকা। ২০ বলে বলে ১ চারে ২০ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন নুরুল। তাকে সঙ্গ দিয়ে ৭ রানে অপরাজিত থেকে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়েন পোলার্ড।

বিপিএলের ষষ্ঠ আসরের এলিমিনেটরে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং নেন চিটাগং অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। ফলে আগে বোলিং শুরু করে সাকিব আল হাসানের ঢাকা ডায়নামাইটস। তবে শুরুতেই ধাক্কা খায় চিটাগং। রুবেল হোসেনের অসাধারণ রিভার্স সুইংয়ে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে নুরুল হাসানের গ্লাভসবন্দি হয়ে ফেরেন ইয়াসির আলি।

দ্বিতীয় উইকেটে সাদমান ইসলামকে নিয়ে প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে ওঠেন ক্যামেরন ডেলপোর্ট। দারুণ মেলবন্ধন গড়ে ওঠে তাদের মধ্যে। তবে হঠাৎই ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি। রানআউটে কাটা পড়েন দুর্দান্ত খেলতে থাকা ডেলপোর্ট। ফেরার আগে ২৭ বলে ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩৬ রানের ক্যামিও খেলেন তিনি। কাজী অনিক ও নুরুল হাসানের যৌথ প্রচেষ্টায় সাজঘরে ফেরেন এ ইনফর্ম ওপেনার।

পরে খেলা তৈরির চেষ্টা করেন মুশফিকুর রহিম। কিন্তু আস্থার প্রতিদান দিতে পারেননি তিনি। সুনিল নারাইনের বলে প্লেড-অন হয়ে ফেরেন মিস্টার ডিপেন্ডেবল। এতে পথ হারায় বন্দরনগরীর দল। ডেলপোর্টকে রানআউট করেছিলেন সাদমান। কিন্তু এর ঋণ শোধ করতে পারেননি তিনি। পরক্ষণেই শুভাগত হোমকে ক্যাচ প্র্যাকটিস করিয়ে নারাইনের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন সাদমান। ড্রেসিংরুমের পথ ধরার আগে ১৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ২৪ রান করেন এ বাঁহাতি।

এরপর দাসুন শানাকাকে নিয়ে খেলা ধরার চেষ্টা করেন মোসাদ্দেক হোসেন। তবে তাকে যোগ্য সহযোদ্ধার মতো সমর্থন জোগাতে পারেননি শানাকা। কাজী অনিকের বলে সোজা বোল্ড হয়ে তিনি ফিরলে বিপর্যয়ে পড়ে চট্টলার দলটি। এ পরিস্থিতিতে নিজের কারিশমা দেখাতে পারেননি চার ম্যাচ পর ইনজুরি থেকে ফেরা রবি ফ্রাইলিংক। নারাইনের বলে শুভাগত হোমকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। সেই রেশ না কা্টতেই এ মায়াবি স্পিনারের এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে ফেরেন হারদুস ভিলজোন। এতে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার শংকা দেখা দেয় চিটাগংয়ের।

তবে তা হতে দেননি মোসাদ্দেক। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করেন তিনি। ইনিংসের অন্তিমলগ্নে কাইরন পোলার্ড ও নুরুল হাসানের যৌথপ্রচেষ্টায় সাজঘরে ফেরার আগে ৩৫ বলে ৩ চার ও ১ ছক্কায় ৪০ রানের লড়াকু ইনিংস খেলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। মূলত তার ব্যাটেই ৮ উইকেটে ১৩৫ রানের সম্মানজনক স্কোর পায় চিটাগং।

মুশফিক বাহিনীকে এত কম রানে বেঁধে রাখার জন্য কৃতিত্ব পাবেন ঢাকার সব বোলার। তবে বিশেষ করে পাবেন সুনিল নারাইন। ৪ ওভারে মাত্র ১৫ রান খরচায় একাই ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ১টি করে উইকেট নিয়ে তাকে সমর্থন জোগান কাজী অনিক ও শুভাগত হোম।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply