নরেন্দ্র মোদি বড় মুশকিলে পড়েছেন। সামনে নির্বাচন। হাতে আর তিন মাসও নেই। এই সময়টিতেই পড়লেন বিরাট এক পরীক্ষায়। ভারত সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা করে বসলো কাশ্মিরের স্বাধীনতাকামী বিদ্রোহীরা। এক গাড়িবোমায় হত্যা করা হয়েছে ৪১ ভারতীয় সেনাকে। কাশ্মিরে এত বড় প্রাণহানির মুখে অতীতে কখনো পড়তে হয়নি ভারতীয় বাহিনীকে।
হামলার পরপরই পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত সরকার। অভিযোগ করা হয়েছে, পাক সরকারের মদদেই এমন হামলা সম্ভব হয়েছে (যদিও ইসলামাবাদ সরাসরি তা অস্বীকার করেছে)। মোদি এবং তার মন্ত্রীরা বলেছেন, এই হামলার জবাবে পাকিস্তানকে ‘কঠিন শিক্ষা দেয়া হবে।’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতজুড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জোয়ার চলছে। এমন বড় হামলার পর তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানবিদ্বেষী মনোভাব জনগণের মধ্যে তুঙ্গে। ভারতীয়রা চাচ্ছেন, তাদের দেশের সেনাদের হত্যার কঠিন প্রতিশোধ নেয়া হোক। মূলধারার মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে। এটাই প্রধানমন্ত্রী মোদির জন্য উভয়সংকটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হামলার জবাবে বড় কিছু করে দেখাতে না পারলে তার বিরোধীরা জনগণের সেন্টিমেন্টকে মোদির বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে সক্ষম হতে পারে। আবার জনগণকে সন্তুষ্ট করার মতো ‘বড় জবাব’ দেয়ার মতো উল্লেখযোগ্য কোনো পথ তার সামনে নেই। হামলাকারী গোষ্ঠি বা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কী কী পদক্ষেপ নেয়ার সুযোগ মোদির হাতে আছে সে বিষয়ে একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা এপি।
তাতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোদি টেবিলে থাকা সবচেয়ে বড় অপশনটি হলো, ইসলামাবাদকে কূটনৈতিকভাবে একঘরে করে ফেলা। ইতোমধ্যে পাকিস্তানকে দেয়া ‘সবচেয়ে পছন্দের বানিজ্য অংশীদার’ এর মর্যাদা বাদ দিয়েছে নয়া দিল্লী।
এরপর চেষ্টা চলবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, চীন এবং রাশিয়াসহ অন্যান্য শক্তির কাছে পাকিস্তানকে কোনঠাসা করা। হামলার পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় এসব দেশ ভারতের প্রতি সহানূভূতি প্রকাশ করেছে। তবে চূড়ান্তভাবে একটাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নেয়া কতটা সম্ভব হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
বিশেষ করে চীনের সাথে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠতা এবং তালেবান ইস্যুতে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন করে গড়ে ওঠতে থাকা সম্পর্কের মধ্যে দেশ দুটি ইসলামাবাদকে কতটা চাপে রাখতে চাইবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
কূটনৈতিকভাবে একঘরে করার বাইরে যে বিকল্প মোদির সামনে আছে সেটা হলো সামরিকভাবে জবাব দেয়া। ভারতীয় আম-পাবলিক এটাতে সবচেয়ে বেশি খুশি হবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে মিছিল হচ্ছে ‘পাকিস্তানে হামলা করো’ স্লোগান দিয়ে।
কিন্তু সামরিক জবাব দেয়া খুব সহজ হবে বলে মনে করার কারণ নেই। ২০১৬ সালে একই ধরনের হামলায় যখন ১৯ জন ভারতীয় সেনা মারা গিয়েছিল তখন ভারত কথিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে অনেক বিদ্রোহীকে হত্যা দাবি করেছিল। যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে। কোনো তৃতীয় কোনো পক্ষ থেকেও ভারতের দাবির পক্ষে কোনো বক্তব্য বা প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আগের চেয়েও ভয়াবহ হামলার জবাবে আরও বড় এবং দৃশ্যমান কোনো সামরিক হামলার কথা ভাবতে হতে পারে ভারতীয় বাহিনীকে।
কিন্তু পাকিস্তানের পক্ষ থেকে এর পাল্টা জবাবের কথা মাথায় রাখতে হবে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে। তবে এপি জানাচ্ছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী ধারণা করছে ভারতের পক্ষ থেকে হামলা হতে পারে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারতের পক্ষ থেকে কাশ্মিরের সীমান্ত ‘লাইন অব কন্ট্রোলে’ ওপারে কিছু এলাকায় হামলা চালানো হতে পারে। এবং কিছু এলাকা আপাতত দখলে নিয়ে সেসব জায়গা বিদ্রোহীদের আস্থানা গুড়িয়ে দিতে চায় ভারতীয় বাহিনী।
পাকিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত জি পার্থসারথি বলেছেন, কী ধরনের সামরিক পদক্ষে নেয়া হতে পারে তা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা না করাই ভাল।
Leave a reply