বিমান ছিনতাইচেষ্টাকারী পলাশ আহমেদের কার্যক্রম রহস্যেঘেরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় পলাশের জীবন মিথ্যায় ভরা ও প্রতারণায় পূর্ন।
নিজ গ্রাম নারায়ণগঞ্জে পলাশ আহমেদ নামে পরিচিত হলেও ঢাকায় সে পরিচয় দিতো মাহিবি জাহান নামে। ফেসবুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক পাশের তথ্য দিলেও পরিবারের কাছ থেকে জানা যায়, এ তথ্য পুরোপুরি মিথ্যা। তবে লোক প্রশাসন বিভাগের সামনে তোলা একটি ছবি সে ফেসবুকে পোস্ট করেছে বিশ্বাসযোগ্যতা আনার জন্য।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, পলাশ ২০১২ সালে সুনামগঞ্জের তাহেরপুরের একটি মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করে সোনারগাঁও ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। কলেজে পড়া অবস্থায় সে ঢাকায় চলে যায় ও সেই সময় থেকেই তার আচরণে পরিবর্তন দেখা দেয়। মাঝেমধ্যে পলাশ ঢাকা থেকে বাড়িতে যেতো, কিন্তু এলাকার লোকজনের সঙ্গে আগের মতো কথা বলত না।
দুপুরে র্যাবের মিডিয়া এন্ড লিগ্যাল উইং কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ২০১২ সালে এক নারীকে অপহরণ ও মুক্তিপণ দাবির মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছিলো পলাশকে। নারীকে অপহরণ করে ৮ লক্ষ টাকা মুক্তিপণের দাবি করেছিলো। তখন তাকে এক সহযোগীসহ আটক করে র্যাব-১১। একইসাথে সেই নারীকেও উদ্ধার করা হয়। অপহরণের সময় পলাশের বয়স ছিল মাত্র ১৮ বছর। র্যাবের তথ্য অনুযায়ী সে সময়ই পলাশ বিবাহিত ছিলো।
এদিকে পলাশ ব্রিটেনের গ্লাসগোতে বসবাস করছেন বলে ফেসবুকে উল্লেখ করলেও তা সত্য নয়। জানা যায়, মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাশ করার পর কলেজে পড়ার সময় সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ে। এসময়ই তার পরিচয় চিত্রনায়িকা শিমলার সাথে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত এই অভিনেত্রীকে নিজের স্ত্রী বলে পরিচয় দেয় সে। ফেসবুকে তাদের বেশ কিছু অন্তরঙ্গ ছবি দেখা গেছে।
পলাশের বাবা পিয়ার জাহান জানান, গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাতের বেলা চিত্রনায়িকা শিমলাকে নিয়ে পলাশ বাড়িতে আসে। ছেলের কাছ থেকেই তিনি প্রথম জানতে পারেন, সাথের মেয়েটির নাম শিমলা ও সে চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী। গত বছর এপ্রিলের দিকে আবার সিমলাকে নিয়ে এসে পলাশ জানায় যে, তারা বিয়ে করেছে। এ সময় শিমলাও নিজেকে পলাশের স্ত্রী বলে জানায়। ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায় বলে জানান পলাশের বাবা।
পলাশের বাবা ও ভাই মুদি দোকানদার। পলাশ অবাধ্য ছেলে ছিল জানিয়ে তার বাবা বলেন, ছেলে যেন ভালো পথে ফিরে আসে সে জন্য তারা শিমলাকে অনুরোধও করেন। গত ফেব্রুয়ারিতে পলাশ বাড়ি এলে তার আচরণে অনেকটা পরিবর্তন দেখেন পিয়ার জাহান। ছেলেকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে দেখেন তিনি।
তিনি বলেন, “ছেলেকে শুধরে যেতে দেখে মন খুশিতে ভরে ওঠে আমার। পলাশ নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দেয়। এখন কেমন চলছে জিজ্ঞেস করলে, কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে বলে জানায়।
সবমিলিয়ে বিমান ছিনতাই চেষ্টাকারী পলাশের জীবন রহস্য আর বৈপরীত্যে ঘেরা। কেন তিনি বিমান ছিনতাই করতে চেয়েছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। ছিনতাইয়ের সময় তার স্ত্রীর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলতে চেয়েছেন। কেন, কী কথা বলতে চেয়েছেন তাও জানা যায়নি। সে কি শুধু একজন নায়িকার জন্যই কি? ছিনতাই কাণ্ডের কয়েক ঘন্টা আগে তার সর্বশেষ ফেসবুক স্ট্যাটাস দেন, “ঘৃণা নিশ্বাসে প্রশ্বাসে”। সেটারই বা কী কারণ। গোঁজামিল, প্রতারণা আর অপহরণের মতো অপরাধের ইতিহাস যার সেকি এমনই আবেগপ্রবণ হবে? পলাশ কী ঝোঁকের মাথায় এই বিমান ছিনতাই করতে চেয়েছেন নাকি এর আড়ালে ছিলো অন্য কোন উদ্দেশ্য?
Leave a reply