নিজস্ব প্রতিবেদক,নেত্রকোণা:
নেত্রকোণার পূর্বধলায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয় জানতে চাইলে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্ল্যাহ আল মুতাহসিম শুক্রবার রাত সোয়া নয়টার দিকে জানান, ‘পূর্বধলায় নির্বাচন স্থগিত রাখতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে কিছুক্ষণ আগে নির্দেশ পেয়েছি। নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব নয় বলে কমিশনের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে। তাই পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তা স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রকোণার পূর্বধলায় চেয়ারম্যান পদে দুই জন প্রার্থী প্রতিন্দ্বিতা করছেন। তাদের একজন হলেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম। অপর জন যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মাছুদ আলম তালুকদার। প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী কাযালয় ভাংচুর, প্রচারে বাধা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলায় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জনের মধ্যে আহত হয়েছেন।
তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সমর্থক প্রায় আটজনের মতো এখনো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলনসহ থানায় উভয় পক্ষেরই মামলা ও লিখিত অভিযোগ রয়েছে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রার্থীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করা হয়। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার দুপুরে হিরণপুর বাজারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী কাযালয় ভাংচুর চালায় বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকরা। এ সময় উভয় পক্ষের লোকজনের মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এতে আওয়ামী লীগের অন্তত ছয় জনের মতো আহত হয়।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল (বীর প্রতীক) এবং ওই থানার ওসি বিল্লাল উদ্দিন পছন্দের প্রার্থী মাছুদ আলম তালুকদারের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এর মধ্যে সাংসদ প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন স্থানে সভা সমাবেশ করে বেশ জোড়ে সোরেই সরাসরি নির্বাচনী প্রচার চালান।
একই সঙ্গে নৌকার প্রার্থীকে ভোট না দিতে এবং তাঁকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যও দিতে থাকেন। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাইল হয়। এ নিয়ে জাহিদুল ইসলাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সাংসদকে ‘উপজেলা পরিষদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬ এর ২২ বিধি স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়। একই সঙ্গে বিধিমালা প্রতিপালনের লক্ষে সাংসদকে ভোট প্রদান ব্যতীত পূর্বধলা উপজেলায় নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান এবং কোন প্রার্থীর প্রচারণায় অংশগ্রহণ না করাসহ নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখতে বলা হয়। এর পর থেকে সাংসদ নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করে। আর গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কমিশনের নির্দেশে থানার ওসি বিল্লাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে সাংসদ ওয়ারেসাত হোসেন আবারো নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নেন। বিষয়টি জাহিদুল ইসলাম এবং তাঁর সমর্থকরা কমিশনকে অবহিত করেন।
Leave a reply