চারিদিকে ধোঁয়ার অন্ধকার। শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। চোখ আর মুখে একটু পর পর ওড়না দিয়ে চেপে ধরতে হচ্ছে। পুরুষরা গায়ের শার্ট খুলে নিয়ে চেপে ধরছেন নাক-মুখে। ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরে আগুনের লেলিহান শিখা। ১৯ তলা ভবনের উপরের ফ্লোরগুলো থেকে নিচে নামার কোনো উপায় নেই। ধোঁয়ার তোপে বুঝার উপায় নেই আগুন থেকে তারা কত দূরে আছেন। আগুন দূরে থাকলেও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসছে। প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কেউ ভবনের দেয়াল হিসেবে থাকা কাঁচের ক্লাস ভেঙে কোনো মতে মুখ বাড়িয়ে হাত দিয়ে ইশারা করছেন বাইরের দিকে। দেখে বুঝা যাচ্ছে চিৎকার করছেন। কিন্তু কী বলছেন কারো বুঝার উপায় নেই।
আজ বনানীর এফ আর টাওয়ারে আগুন লাগার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর এসব দৃশ্য দেখা গেছে বিকাল সাড়ে চারটার দিকেও। অসহায় মানুষের আকুতিতে সাড়া দেয়ার চেষ্টা করছেন সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ক্রেন আর হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দুয়েকজন করে তুলে নিয়ে আসা হচ্ছে অভিশপ্ত ভবনটি থেকে।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, থেমে থেমে আগুন জ্বলে উঠছে। কখনো পানির ঝাপটায় আগুনের তোপ কিছুটা কমে এলেও কিছুক্ষণ পর আবারও লাল হয়ে উঠছে শিখা।
বিকাল সাড়ে চারটা পর্যন্ত হতাহতের কোনো প্রকৃত তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে একজনের লাশ গ্রহণ করার কথা জানিয়েছে কুর্মিটোলা হাসপাতালের জরুরি বিভাগ। এছাড়া অন্তত ৩০ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের অনেকে আবার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে চলে গেছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, নিহত ব্যক্তির নাম নিরস। তিনি শ্রীলঙ্কার নাগরিক। স্ক্যান ওয়েল ফ্রেইড ফরওয়ার্ডিং নামক একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ভবনটিতে আরও কয়েকজন বিদেশি নাগরিক ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দুপুর ১টার আগে বনানীর ২৭ নম্বর রোডের ২২ তলা ভবনটিতে আগুন লাগে। ভবনের ভেতরে লোকজন আটকা পড়েছেন।
দুপুর ২টার দিকে ভেতর থেকে একজন নারী ফেসবুক লাইভে এসে তাদেরকে বাঁচানোর আকুতি জানান। ভিডিওতে শোনা যায় এক নারীর কণ্ঠ। তিনি বারবার বলছেন, ‘আমাদের জন্য সিঁড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। নাহলে ধোঁয়ায় আমরা মারা যাবো।”
বেশ কয়েকজনকে দেখা গেছে ভবনের পাশ ঘেঁষে থাকা পাইপ বেয়ে নামতে গিয়ে গড়িয়ে পড়েছেন। তবে তাদের সর্বশেষ অবস্থা জানা যায়নি।
ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি টিম উদ্ধার কাজে নেমেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। বিমান বাহিনীর ৩টি হেলিকপ্টার আটকে পড়াদের উদ্ধার করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বনানীর ২৭ নম্বর রোডে হোটেল সারিনার বিপরীত দিকে অবস্থিত ভবনটিতে নিচের পাঁচটি তলায় প্রথমে আগুন দেখা গেলেও ধীরে ধীরে তা উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। লাগোয়া অন্যান্য ভবনগুলোতে কাজ করা কয়েক হাজার লোকজন রাস্তায় নেমে আসেন।
যমুনা অনলাইন/কিউএস
Leave a reply