রমজানে বাজার তদারকিতে সরকারের ৭ সংস্থা

|

আসন্ন রমজানে নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে বাজার তদারকিতে ৭ সংস্থাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

সংস্থাগুলো হচ্ছে- র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি), কৃষি বিপণন অধিদফতর, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ, সিটি কর্পোরেশনের বাজার মনিটরিং সেল ও পুলিশ বাহিনী।

তারা খুচরা বাজার থেকে শুরু করে পাইকারি ও মোকামে অভিযান চালাবে, যাতে রমজানকে পুঁজি করে কারসাজির মাধ্যমে কেউ অতি মুনাফা লুটে নিতে না পারে। তবে নানা পদক্ষেপের মধ্যেও ভোক্তা পর্যায়ে শঙ্কা কাটছে না। তারা বলছেন, প্রতিবছরই একটি চক্র কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের পকেট কাটে। এবার তাদের কতটা নিবৃত্ত করা যায় সময়ই তা বলে দেবে।

কথা হয় বাণিজ্য সচিব মফিজুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও টিসিবি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে। রমজানকে ঘিরে অন্যান্য সংস্থাও বাজার মনিটরিং করবে। তাই রমজাননির্ভর পণ্যের দাম বাড়বে না। তিনি বলেন, রমজানে যে পণ্যগুলোর বেশি চাহিদা থাকে সেগুলোর সরবরাহে ঘাটতি নেই। চাহিদার তুলনায় বেশি মজুদ আছে। মূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে। কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়ালে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোরশেদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বাজারে বিশেষ মনিটরিং সেল কাজ করছে। রমজানজুড়েই চলবে। কেউ অসাধু পন্থায় পণ্যের দাম বাড়ালে কঠোর শাস্তির দেয়া হবে। তিনি বলেন, রমজানকে ঘিরে একটি স্পেশাল মনিটরিং টিম খুচরা বাজার থেকে শুরু করে পাইকারি ও মোকাম পর্যায়ে অভিযান চালাচ্ছে। এ ছাড়া সপ্তাহে ৫ দিন নিয়মিত মনিটরিং করতে ৩টি টিম বাজার তদারকি করছে। ব্যবসায়ীদের অসৎ পন্থা অবলম্বনের সুযোগ নেই। করলেই প্রয়োজনে প্রতিষ্ঠান সিলগালা করা হবে।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের উপ-পরিচালক (বাজার তথ্য ও গবেষণা) দেওয়ান আসরাফুল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, প্রতিদিন কর্মকর্তারা বাজার তদারকি করছে।

বাজারে পণ্যের সরবরাহ নিয়ে কথা হয় পুরান ঢাকার মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাফেজ মো. এনায়েতুল্লাহর সঙ্গে। তিনি যুগান্তরকে বলেন, সব পণ্যই পর্যাপ্ত আছে। দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। নিয়ন্ত্রণটা ঠিক রাখতে হবে। পুরান ঢাকার নয়াবাজারে মুদি পণ্য কিনতে আসা চাকরিজীবী আসমা বেগম যুগান্তরকে বলেন, এখন পর্যন্ত ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, ডাল ও খেজুরের দাম স্থিতিশীল। তবে মাছ থেকে শুরু করে গরুর মাংস, সব ধরনের মুরগি, ডিম ও সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়তি। মনে হচ্ছে এবারও রমজানে পণ্যের দাম বাড়বে।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম যুগান্তরকে বলেন, আমরা অভিযান শুরু করেছি। আগামীতে আরও জোরদার করা হবে। রমজানজুড়েই অভিযান চলবে। রমজানে খাবারের চাহিদা বেড়ে যায়। এ সুযোগে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ ও ভেজাল খাবার বিক্রি করে। ভেজাল খাবার পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সম্প্রতি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেখানে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি এসএম রুহুল আমিন বলেন, রমজানে পণ্যবাহী গাড়িতে চাঁদাবাজির ব্যাপারে পুলিশ জিরো টলারেন্সে থাকবে। তিনি ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে বলেন, চাঁদাবাজির ঘটনা নিকটবর্তী পুলিশকে অবহিত করুন। তারা ব্যবস্থা না নিলে এসপিকে বলুন। কাজ না হলে পুলিশ সদর দফতরে স্পেশাল সেল থাকবে। সেখানেও অভিযোগ করুন। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে দেয়া যাবে না। ঢাকা মহানগর ফল আমদানি রফতানিকারক ও আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফারুক সিদ্দিকী বলেন, দেশে খেজুরের মজুদ পর্যাপ্ত। ফলে কম দামে বিক্রি করতে পারব। দাম বৃদ্ধির কারণ নেই।

বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অতিরিক্ত সচিব মীর জহুরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে উৎপাদিত ৭৯ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন ও আমদানি পর্যায়ে ৮৪ হাজার ৬৭৫ মেট্রিক টন চিনি আছে। মোট এক লাখ ৬৪ হাজার ৫২৫ মেট্রিক টন চিনি আছে। রমজানের জন্য এগুলো পর্যাপ্ত। চিনির দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, দেশে তিন লাখ হেক্টরের বেশি সবজি চাষের টার্গেট নিয়ে চাষাবাদ চলছে। ফলে আগামী এক মাসের মধ্যে বাজারে সবজির দাম কমবে।

বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, রমজানে মূলত কয়েকটা কারণে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ে। এর মধ্যে একটি হল- চাহিদার তুলনায় পণ্য সরবরাহ কম। তবে কৃত্রিমভাবে ঘাটতি দেখিয়ে অনেক সময় দাম বাড়ানো হয়। তাই সরকারের কঠোর নজরদারি প্রয়োজন, যাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা সংকট তৈরি করতে না পারে। আর এতগুলো সংস্থা বাজার তদারকির কাজ করবে। তাদের মধ্যেও সমন্বয় রাখতে হবে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply