স্টাফ রিপোর্টার, মাদারীপুর
মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার বালিগ্রাম ইউনিয়নের বোতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৫ম ও ৭ম শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে দু‘দিন আটকে রেখে গণধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এই ঘটনায় বালিগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা এবং ডাসার থানার এসআই দেলোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে সালিশ-বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। তারা ৩ লাখ টাকা নিয়ে মীমাংসার নামে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার পাশাপাশি নির্যাতিতদের পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
তবে শুক্রবার গভীর রাতে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে ৪ জনকে আসামি করে ডাসার থানায় একটি মামলা হয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ডাসার থানার বালিগ্রাম ইউনিয়নের বোতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ৫ম ও ৭ম শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে আটিপাড়া এলাকার মজিবুর হাওলাদারের ছেলে শাকিব, জাকির মোল্লার ছেলে নয়ন, মান্নান খানের ছেলে আল-আমিন, হুমায়ুন হাওলাদারের ছেলে হৃদয় ও তার বন্ধুরা নয়নের চাচা মাহবুবের ফ্লাটে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালায়।
বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয়রা বিষয়টি টের পেয়ে কিশোরীদের ফ্লাট থেকে উদ্ধার করে। পালিয়ে যায় শাকিব, নয়ন, রবিউল, হৃদয়, আল-আমিন ও তার বন্ধুরা। পরে পুলিশ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে। ডাসার থানার এসআই দেলোয়ার ও বালিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মতিন মোল্লা সালীস মীমাংসার নামে অপকর্মকারীদের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আদায় করে এবং দুই কিশোরীর পরিবারকে মামলা না করা ও বিষয়টি কাউকে না জানাতে হুমকি ধামকি দেয় বলে ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ করেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীরা বিষয়টি জানতে পেরে শুক্রবার বিকেলে ঘটনাস্থালে গেলে সালিশ মীমাংসার কথা অস্বীকার করে পুলিশ ও মতিন মোল্লা।
নির্যাতিতা একজন মাদ্রাসার ছাত্রী বলেন, ‘আমার সাথে সাকিবের প্রেম ও আমার বান্ধবীর সাথে হৃদয় নামে আর একটি ছেলের প্রেম ছিল। আমাদেরকে মাদ্রাসা থেকে ফোন দিয়ে ডেকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে মাদারীপুরের বিভিন্নস্থান ঘুরতে যায়। এরপর বিয়ের করার কথা বলে রাতে আটকে রেখে শারিরীক নির্যাতন চালায়। আমরা চলে আসতে চাইলেও আমাদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে একটি ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। পরে ওদের ডেকে এনে জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করায়।’
নির্যাতনের শিকার এক কিশোরীর মা বলেন, আমার মেয়ে ও আরেক মেয়ে বুধবার স্কুলে যায়। এর পরে আমরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুজি করেও পাইনি। পরে বৃহস্পতিবার রাতে শুনি স্থানীয়রা আমার মেয়েসহ আরেক মেয়েকে এক ফ্লাট থেকে উদ্ধার করেছে। এখানের মাতুব্বররা সালিশ মীমাংসা করে দেয়ার কথা বলে আমাদের মামলা করতে দেয়নি। বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্যও হুমকি দিয়েছে এবং মেয়েকে কয়েক দিন লুকিয়ে রাখতে বলেছে। তাই মেয়েকে ওর মামা বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছি।’
স্থানীয় বাসিন্দা সেলিম মেম্বার বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি টের পেয়ে দুই কিশোরীকে উদ্ধার করি। এসময় ওই ফ্লাট থেকে ৭/৮জন পালিয়ে যায়। আমরা ধারণা করছি বখাটেরা ওই মেয়েদের সাথে খারাপ কিছু করেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন, ‘দেলোয়ার দারোগা এবং মতিন মোল্লা বিষয়টি মীমাংসা করে দেয়ার নাম করে ৩ লক্ষ টাকা নিয়েছে বলে আমরা শুনেছি। একারণেই নাকি মামলা হয়নি।’
তবে এ ব্যপারে ফ্লাট মালিক মাহবুব সরদারের ফ্লাটে গেলে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পরে তারা ফ্লাটে তালা দিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
অভিযুক্ত মতিন মোল্লা বলেন, ‘মেয়ে পক্ষের লোকজন বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে আমার কাছে এসেছিল। তবে আমি টাকাও নেইনি মীমাংসাও করিনি।’
বোতলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক আবু আলেম বলেন, ‘এরা দু‘জন বুধবার সকাল দশটার দিকে বইখাতা রেখে চলে যায়। এরপর আর এদের আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। এখন তো বাড়িতে এসে জানতে পারলাম এ ঘটনা। এ ঘটনায় দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।’
টাকা নিয়ে সালিশ মিমাংসার ব্যাপারে ডাসার থানার এসআই দেলোয়ারের কাছ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনারা তো নেগেটিভ কথাই ভালো শুনেন। শুনলে তো কিছু করার নাই। তবে আপনারা আরো তদন্ত করে দেখুন। টাকা নিয়ে মীমাংসার কোন কথা হয়নি।’
এ ব্যাপারে মাদারীপুর পুলিশ সুপার সুব্রত কুমার হালাদার বলেন, ‘এই ঘটনা সালিশযোগ্য নয়। মামলা হয়েছে। যদি পুলিশের কোন সদস্যের এই অপরাধের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ মেলে তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
যমুনা অনলাইন/কিউএস
Leave a reply