ফেনীর সোনাগাজীতে পরীক্ষাকেন্দ্রে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে দগ্ধ সেই মাদ্রাসা ছাত্রীর অবস্থা শংকটাপন্ন।এই মুহূর্তে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেয়ার মতো অবস্থায় নেই তিনি।
মঙ্গলবার সকারে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স শেষে একথা জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, ওর অবস্থা সংকাটাপন্ন হওয়ায় এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরে নেয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।সিঙ্গাপুরে নিতে গেলে জার্নিতে যে ধকল থাকবে সেটি সামাল দেয়ার মতো অবস্থায় নেই সে। তাই তাকে আপাতত বার্ন ইউনিটেই চিকিৎসা দেয়া হবে।অবস্থার উন্নতি হলে তখন বিদেশ নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জানা গেছে, সোমবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডা. সামন্তলাল সেনকে ফোন করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছাত্রীর বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তাকে প্রয়োজনে সিঙ্গাপুরের বিশেষায়িত হাসপাতালে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেন। তার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতেই সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ডা. সামন্তলাল সেনসহ ওই ছাত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড। আগের দিনের চেয়ে অবস্থার অবনতি হওয়ায় সোমবার দুপুরে ওই ছাত্রীকে বার্ন ইউনিটের নিবিড় পরিচর্চা কেন্দ্র থেকে লাইফসাপোর্টে নেয়া হয়।
সোমবার সকালে সেই ছাত্রীকে দেখে এসে ডা. সামন্ত লাল সেন গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ছাত্রীর অবস্থা ভালো নয়। গত দিনের চেয়ে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান ও হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম জানান, মেয়েটির অবস্থা ভালো নয়। ওর অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন। তার ফুসফুস ঠিকভাবে কাজ করছে না। শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাই তাকে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়েছে।
অধ্যাপক আবুল কালাম বলেন, ‘এমনিতেই ওই শিক্ষার্থীর শরীরের ৭৫ শতাংশের বেশি পোড়া ছিল। আজ অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফসাপোর্টে দেয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে তার জীবন এখন সংকটে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
ওই ছাত্রীর চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছে, ওই ছাত্রীর অবস্থা গুরুতর। যেকোনো সময় পরিস্থিতি যেকোনো দিকে মোড় নিতে পারে।তার শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে। মানুষের শরীরে চামড়ায় ৭টি লেয়ার থাকে, ওই ছাত্রীর সব লেয়ার পুড়ে গেছে। শ্বাসনালিও পুড়ে গেছে। পাশাপাশি দগ্ধ হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাকে বার্ন ইউনিটে আনা হয়নি, সময়ক্ষেপণ হয়েছে। এতেও তার অবস্থার অবনতি হয়েছে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৭ মার্চ সকাল ১০টার দিকে অধ্যক্ষ তার অফিসের পিয়ন নূরুল আমিনের মাধ্যমে ছাত্রীকে ডেকে নেন। পরীক্ষার আধা ঘণ্টা আগে প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীর শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন অধ্যক্ষ।পরে পরিবারের দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার হন অধ্যক্ষ। সেই মামলা তুলে না নেয়ায় অধ্যক্ষের লোকজন ওই ছাত্রীর গায়ে আগুন দিয়েছে।
Leave a reply