জায়ানকে শেষ দেখার অপেক্ষায় স্বজনরা, শোক জানিয়েছেন মন্ত্রী-এমপিরা

|

ইস্টার সানডেতে শ্রীলংকায় রেস্তোরাঁয় বোমা হামলায় নিহত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নাতি জায়ান চৌধুরীর (৮) লাশ আজ দেশে আসছে। দুপুর ১টা ১০ মিনিটে শ্রীলংকা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাশ পৌঁছানোর কথা রয়েছে। আদুরের জায়ানকে শেষ দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন স্বজনরা।

শিশু জায়ান ছিলেন পরিবারের মধ্যমণি। পরিবার তো বটেই নানাবাড়ি-দাদাবাড়ির সব আত্মীয়র প্রিয়মুখ ছিল জায়ান। সবার সঙ্গে মিশতে পারত ছোট্ট জায়ান।

বাসায় এলেই নানা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের সঙ্গে খুনসুটিতে মেতে উঠত সে। রাজনৈতিক শত ব্যস্ততার মাঝেও শেখ সেলিম নাতির জন্য সময় বের করতেন। ফুটফুটে নাতিকে হারিয়ে শোকে বিহ্বল শেখ সেলিম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ সেলিম। তাই পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাবা-মায়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা হয়ে যেত জায়ানের। দেখা হওয়া মাত্রই জায়ান প্রধানমন্ত্রীকে দাদু বলে জড়িয়ে ধরত। চুমু খেত। প্রধানমন্ত্রীও আদরের নাতিকে নিয়ে খুনসুটিতে মেতে উঠতেন। জায়ানে মৃত্যু দাগ কেটেছে প্রধানমন্ত্রীকে। মঙ্গলবার ব্রুনাই সফর থেকে ফিরে বিমানবন্দরেই শেখ সেলিমের কাঁধে হাত রেখে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী।

জায়ান চৌধুরী নিহত হওয়ার খবরে সর্বত্র নেমে আসে শোকের ছায়া। রোববার রাতে এ খবর প্রকাশের পর দলমত নির্বিশেষে সবাই শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। শোকের ছায়া নেমে আসে বনানীর বাড়িটিতে।

এ বাড়িতেই নানা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, নানি, দুই মামা- শেখ ফজলে ফাহিম ও শেখ ফজলে নাঈম, মা শেখ আমেনা ফজলুল করিম সোনিয়া, বাবা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্স ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে থাকত জায়ান। সারাক্ষণ ক্রিকেট খেলে মাতিয়ে রাখত সে। নানা-নানি, মামা-মামি, বাবা-মা এমনকি বাড়ির দারোয়ান-কেয়ারটেকারদেরও প্রিয় ছিল জায়ান। ক্রিকেট খেলায় সবার সঙ্গে গড়ে ওঠে তার সখ্য।

সেই ছোট্ট জায়ান চলে গেছে সবকিছু ছেড়ে। আর ফিরে আসবে না প্রিয় নানাবাড়িতে। আবদার করবে না আদুরে কণ্ঠে। তার জন্য বনানীর চেয়ারম্যানবাড়িতে নানা শেখ সেলিমের বাসায় দুদিন ধরে শোকাবহ পরিবেশ।

সোম ও মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্তরের মানুষ সেখানে আসেন সমবেদনা জানাতে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এমপি-মন্ত্রীরা গিয়েও শেখ সেলিমকে সমবেদনা জানিয়ে এসেছেন।

এদিকে সোম ও মঙ্গলবার দিনভর বাসার ভেতর দোয়া ও কোরআনখানি চলেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বাসার সামনে ও রাস্তার দুই পাশে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। নিকটাত্মীয় ও ভিআইপি ছাড়া অন্য কাউকে বাসায় ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না।

এদিকে মঙ্গলবার সকালে শোকসন্তপ্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে বনানীর বাসায় আসেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া। তারা শেখ সেলিমসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং গভীর সমবেদনা জানান।

একই দিন শেখ সেলিমের বাসায় আসেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ। বাসা থেকে বের হয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা খুবই মর্মাহত, বেদনাহত, এটি একটি সুখী পরিবার। শেখ সেলিম আমার খুব প্রিয় মানুষ, তার নাতিকে আমি আগে থেকে চিনি। এ দুর্ঘটনা সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের নেই। জানা গেছে, আজ দুপুরে জায়ানের লাশ আসার পর সরাসরি বনানীর ২ নম্বর রোডের ৯ নম্বরে তার নানার (শেখ সেলিম) বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। এর পর বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে জানাজা শেষে বাদ আসর বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে জায়ানকে।

এদিকে জায়ানের জানাজার জন্য বনানী চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠ প্রস্তুত করা হয়েছে। এরই মধ্যে প্যান্ডেল টানানো হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে আসেন শেখ সেলিম। নাতি জায়ান চৌধুরী নিহত হওয়ার পর প্রথমবারের জন্য বাসার বাইরে বেরিয়েছিলেন তিনি।

মাঠে প্রবেশ করেই শেখ সেলিম জায়ানের লাশ রাখার জন্য নির্ধারিত স্থানে যান। সেখানে পূর্বপরিকল্পিত ১৬ বাই ১২ ফুট মঞ্চের পরিবর্তে ১৮ বাই ১২ ফুট করার নির্দেশনা দেন। সেই সঙ্গে মঞ্চ ২ ফুট পর্যন্ত উঁচু করে তা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে ফেলার জন্য বলেন। পাশাপাশি জানাজা যেন সুষ্ঠু ও শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে শেষ হয় তার জন্য বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দেন। এ সময় আদরের নাতি জায়ানের জন্য সবার কাছে দোয়া চান শেখ সেলিম।

মঙ্গলবার বনানীর চেয়ারম্যানবাড়ি মাঠে জামাতা মশিউল হক চৌধুরী প্রিন্সের শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ খবর জানান শেখ সেলিম। রোববার শ্রীলংকায় একই হামলায় গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন প্রিন্স।

শেখ সেলিম সাংবাদিকদের জানান, তার জামাতার শরীর থেকে তিন লিটার রক্ত বের হয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। লিভারে বোমার স্প্লিন্টার পাওয়া গেছে। পাকস্থলী কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন আইসিইউতে আছে। ৭২ ঘণ্টা পার না হলে কিছু বলা যাবে না। তার পায়ের যে অবস্থা তাতে এখন হাসপাতাল থেকে সরানো সম্ভব নয়।

প্রসঙ্গত রোববার শ্রীলংকায় ভয়াবহ বোমা হামলায় নিহত হয় জায়ান চৌধুরী। এ সময় তার বাবা প্রিন্স গুরুতর আহত হন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply