স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির অমানুষিক নির্যাতনের ন্যায়বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন জনপ্রিয় পপ গানের কণ্ঠশিল্পী মিলা। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বুধবার বিকালে রাজধানীর বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয় তিনি সংবাদ সম্মেলন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মিলার বাবা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল শহিদুল ইসলাম, মা ও ছোট বোন দিশা।
সংবাদ সম্মেলনে মিলা বলেন, ‘আজ আমি ও আমার পরিবার আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আমার ভালো-খারাপ সকল সময়ের সাক্ষী আপনারাই। তাই এখন একমাত্র আপনাদের সাহায্যই পারবে আমাকে ন্যায্য বিচার দিতে। সবাইকে আমার পাশে থাকার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।’
তার উপর হয়ে যাওয়া অন্যায়ের সঠিক বিচারের প্রত্যাশা করেন তিনি। সেজন্য তার পাশে সবাইকে থাকার জন্য আহ্বান জানান মিলা
এর আগে ১৭ এপ্রিল (বুধবার) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেয়া এক পোস্টে নির্যাতনের অভিযোগ করেন মিলা।
স্ট্যাটাসে মিলা লেখেন, ‘কত কত জীবিত ‘নুসরাত’ আইনের কাছে দাঁড়ান দিনের পর দিন…কিন্তু না মেরে ফেলা পর্যন্ত তাদের জন্য কোনো আওয়াজ উঠবে না.. আইন দেশের সুন্দর..দুই বছর হয়ে যাচ্ছে.. কোর্ট এ উল্টা জঘন্যভাবে চিৎকার দিয়ে অপবাদ দেয়া হয় আমাকে .. বিচার তো দূর…দাখিল করা ‘খ’ ধারার চার্জশিট আমাকে না বুঝতে দিয়ে ‘গ’ ধারায় মামলা চার্জ গঠন করা হয়…
আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে.. আমার জানা ছিল, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায় কোনো রকমের হস্তক্ষেপে নেত্রীর কঠোর নিষেধ রয়েছে .. তিন বার আদালতের আদেশ টানা অমান্য করলে জামিন বাতিল হওয়ার কথা..পাঁচবার আমাকে কোর্ট নানান বুঝ দিয়ে পার্মানেন্ট জামিন দেয়…আমি এখন বলতেও পারি নাই শেষের দিন আমার শাশুড়ি, আমার স্বামীর কথায় আমাকে কিভাবে বাথরুম থেকে দরজা ভেঙে বিনা কাপড় পরিহিত অবস্থায় জঘন্যভাবে টেনে আমার দেবর তার স্ত্রী এবং তার স্ত্রীর বাবা মায়ের সামনে এক ঘণ্টা গালিগালাজ করতে থাকে… আমার বাবা ভাইবার এ ভিডিও কলের মাধ্যমে পুরোটা ঘটনা দেখে.. এক পর্যায়ে আমি হাত জোড় করে ভিক্ষা চাই এই বলে ‘আম্মু আমাকে মেয়ে বলে নিয়ে আসছিলেন ..আমার গায়ে কাপড় নাই.. দয়া করে আমাকে ঘরের দরজা বন্ধ করে যা বলার বলেন..কিন্তু এই অপমান করেন না’ …ভিডিও টা এখনও আমার কাছে…
দেশের শিল্পী আমি?
আজকে এই টাও বলে ফেললাম… এর চাইতে কাপড়পরা অবস্থায় আমার গায়ে আগুন দিয়ে দিত… আমি যাই বললাম তাতে পুরাে মিডিয়া, শিল্পীরা, আমার ভক্তরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করার কথা… কাপড় ছাড়া ওই ছেলেকে রাস্তায় নামিয়ে জুতার বাড়ি দিয়ে মারার কথা… তাইনা? আমার এই পোস্টটাই তো সবার শেয়ার করার কথা তাইনা? কেও করবে নাহ্… কেও নাহ.. কারণ আমি বেঁচে আছি..এই মিলা কেন এখনও প্রতিদিন চিৎকার করে কাঁদে উত্তর পাও তোমরা?
আমি দেশের জাতীয় পর্যায়ের শিল্পী? এখনও আজকেও বার বার ইউএস বাংলার এমডিকে কল দিয়েছি…কথা বলতে চেয়েছি .. ’ কেন আমার ন্যায্য বিচার তারা তাদের ক্ষমতা দিয়ে আটকে রেখে ওই কুলাঙ্গারকে চাকরিতে রাখছেন? কীভাবে আমার উপর এত অন্যায় এরপর ইউএস বাংলার কেবিন ক্রুয়ের সঙ্গে বিছানায় ঘুমিয়ে থাকা ওই জঘন্য ছবি ফাঁস হয়ে যাওয়ার পরও এই ছেলেকে সামাজিক মর্যাদা দিয়ে ইউএস বাংলার এমডি সবাইকে বলে বেড়ান যে ‘That in any cost এই মেয়েকে জিততে দেব না’ …
দেশের নাগরিক হিসেবে আজকে এই বলব… ওই ছেলের বিচার চাই আমি তাইলে… ইউএস বাংলা আরও দুইজন পাইলট যারা আমাকে রাস্তায় রাস্তার অপদস্থ করে নোংরা কথা বলে.. তাদের নাম রেজোয়ান আহমেদ খান ও শামস রেজোয়ান। তারা শুধু আমাকে না বরং আমার বাবাকে নিয়েও প্রকাশ্যে গালি দেয়া.. উল্টা দিকে এরা আমাকে আইসিটি অ্যাক্টের হুমকি দিতে থাকে….
আমি ইউএস বাংলার এই তিনজনের বিচার চাই…আমি আমার দেশ ও দেশের সরকার এর কাছে আমার ভেঙে দেয়া মেরুদণ্ড ফিরে চাই…ফাইলের উপর ফাইল করা সকল প্রমাণ আমার কাছে জমা…কিন্তু বাকিদের বিচার কই চাইব? এদিকে ওই ছেলে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য বিভিন্ন বিদেশি এয়ার লাইনে চেষ্টা করে যাচ্ছে… আমার আবেদন আমার নেত্রীর কাছে, আমার অপরাধী যাতে পালাতে না পারে.. আমার মামলাটি দয়া করে আবারও সঠিক ধারায় চার্জ গঠন করার আর্জি জানাই…
গত দশ দিন আগে আমি ওই ছেলেকে হাতেনাতে পতিতা নিয়ে ধরলে ওই ছেলে আমাকে ‘গুলি করে হত্যা করে সেলফ ডিফেন্স বলে প্রমাণ করে দেবে’ বলে আমাকে আর আমার বাবাকে এসএমএস করে… গুলি খাওয়ার আগে বিচার চাই…বিচার চাই.. আমি বিচার চাই…
ইতি- একজন জীবিত নুসরাত’
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের মে মাসে পারিবারিকভাবে বৈমানিক পারভেজ সানজারির সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন মিলা ইসলাম। বিয়ের পর গানে হয়ে পড়েন অনিয়মিত। জড়িয়ে যান সংসার জীবনে।
কিন্ত কিছুদিন পরই সেখানে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব-বিবাদ। হুট করেই শোনা যায় মিলার সংসার ভাঙনের খবর। মারধরের শিকার হয়ে নারী নির্যাতন-যৌতুকের অভিযোগে এনে স্বামী সানজারির বিরুদ্ধে মামলাও করেন তিনি। সেই মামলা চলমান।
Leave a reply