চাকরি নেই তিন মাস ধরে, সন্তানের ক্ষুধার যন্ত্রণা মেটাতে তাই বাধ্য হয়ে সুপারশপ স্বপ্ন থেকে দুধ চুরি করেছিলেন বাবা। সেটা আবার ধরাও পড়ে গিয়েছিল। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খবর ভাইরাল হবার পর ঘটনা নজরে আসে স্বপ্ন কর্তৃপক্ষের।
প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক সাব্বির হাসান নাসির সেই বাবা ও সন্তানের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। আজ শনিবার এই তথ্য সাংবাদিকদেরকে জানিয়ছেন স্বপ্ন’র হেড অফ মার্কেটিং তানিম করিম।
তিনি জানান, হৃদয়বিদারক ঘটনাটি জেনে আমাদের কোম্পানি সেই বাবাকে চাকরি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যাচাই করে ওই ব্যক্তির এমন পরিস্থিতিতে থাকার সত্যতা মিললে তাকে চাকরি দেয়া হবে।
তানিম আরও জানান, তবে এই মাস চলার জন্য যেসব জিনিস প্রয়োজন তা আমরা এখনই তাকে দিয়ে দেব। প্রয়োজনে যে পুলিশ কর্মকর্তা ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেছেন তার সহায়তা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম গতকাল রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। তাতে জানান, একজন ব্যক্তি চাকরি না থাকায় অর্থ সংকটে পড়ে সন্তানের জন্য স্বপ্ন থেকে দুধ চুরি করার সময় ধরা পড়েন। জাহিদুল ইসলামের পোস্টটি হুবহু তলে ধরা হলো–
“গতকাল রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট, বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম।
একজন বললো, “স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল”। পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বললো, “স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল”।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বললো, “স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল”। আমার খটকা লাগলো, আমি জিজ্ঞেস করলাম “দুধ”? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, “স্যার বাচ্চাদের ন্যানো দুধের প্যাকেট”। আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বললো, “স্যার, তিন মাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।”
সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল!! মনে হল কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে!! ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম। সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বললো, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।
আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে…কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোঁচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে..হয়ত আমি ভালো চাকুরী করে আজ ভাল আছি, কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরূপায়!!! এর দায়ভার কার??!!”
Leave a reply