আয়ারল্যান্ডের কনকনে ঠাণ্ডার মাঝেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। নতুন ইতিহাস লেখা হতে পারে ডাবলিনে। প্রথমবারের মতো কোনো তিন জাতি সিরিজ বা টুর্নামেন্টের শিরোপা জয়ের হাতছানি মাশরাফীদের সামনে।
যেখানে মাশরাফীদের জন্য প্রেরণার নাম হতে পারেন রবার্ট ব্রুস। স্কটিশ স্বাধীনতার এই বীরের কথিত গল্পের সাথে মিলে যেতে পারে টাইগারদের গল্পটাও। টানা ষষ্ঠবার যুদ্ধে পরাজিত ব্রুস পাহাড়ে এক মাকড়সা দেখে নতুন স্বপ্ন দেখেছিলেন। কয়েকবার চেষ্টায় করেও জাল বুনতে পারছিলো না একটা মাকড়সা। তবু দমে যায়নি সে, টানা প্রচেষ্টায় ঠিকই সফল হয় সেই মাকড়সা। আর এতেই ঘুড়ে দাঁড়ানোর আত্মবিশ্বাস পান রবার্ট ব্রুস। বিশ্বাস করতে শুরু করেন অধ্যবসায় থাকলে সাফল্য আসবেই। এরপরের ইতিহাস তো সবারই জানা। বানুকবার্নের যুদ্ধে ইংরেজদের পরাজিত করে স্টারলিং দুর্গের দখল, ইতিহাসে লেখা হয় স্কটিশদের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস।
আয়ারল্যান্ড থেকে চারশো কিলোমিটার দূরত্বের সেই বীর ব্রুস হতে পারেন ‘মাশরাফীর’ আইকন। কেননা ক্রিকেট মাঠে এর আগে ছয়বার কোনো টুর্নামেন্ট বা তিনজাতি সিরিজের ফাইনালে উঠেও যে শিরোপা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। তীর এসে বার বার স্বপ্নভঙ্গের নীল বিশ হুল ফুটিয়েছে।
আরো একটি ফাইনালের সামনে বাংলাদেশ। আয়ারল্যান্ড-উইন্ডিজ-বাংলাদেশকে নিয়ে তিনজাতি সিরিজের ফাইনাল শুক্রবার, ডাবলিনে। যেখানে উইন্ডিজের মুখোমুখি হবে সাকিব-তামিমরা। তাই তো নতুন ইতিহাস লেখার হাতছানি।
ফাইনালের অতীত
সবশেষ গেল বছর সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছিলো বাংলাদেশের। সংযুক্ত আরব আমিরাতের মরুভূমিতে ফুল ফোটানো হয়নি মাশরাফীদের।
২০১৬’র এশিয়া কাপের ফাইনালেও ছিলো একই দৃশ্য, প্রতিপক্ষ সেই ভারত।
তবে দেশের কোটি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে গেছিলো ২০১২ এশিয়া কাপের ফাইনাল। পাকিস্তানের কাছে ২ রানের পরাজয়ে সাকিব, মুশফিকদের অঝোর ধারার কান্না স্মৃতি হয়ে আছে লাখো ক্রিকেট ভক্তের মানসপটে।
এশিয়া কাপের তিন ফাইনাল ছাড়াও আরো তিনটি আসরের ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে বাংলাদেশের। কিন্তু কখনোই ছোঁয়া হয়নি অধরা শিরোপা।
২০০৯ এ প্রথমবার কোনো আসরের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ত্রিদেশীয় সেই সিরিজে শ্রীলঙ্কার কাছে স্বপ্নভঙ্গ মোহাম্মদ আশরাফুলের দলের। এর ঠিক ৯ বছর পর ২০১৮’র জানুয়ারিতে ট্রাইনেশন সিরিজের ফাইনালে দেশের মাটিতে হাথুরুসিংহের শ্রীলঙ্কার কাছে ধরাশায়ী।
এর দু’মাস পর নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে টাইগার শিবির। ১৯-তম ওভারে দিনেশ কার্তকের অতিমানবীয় ব্যাটিং ঘুরিয়ে দেয় ম্যাচের গতিপথ। শেষ ওভারে ১২ রানের সমীকরণে কার্তিকের কাছে শেষ বলে হেরে যান সৌম্য সরকার।
ব্রুসের পথে মাশরাফী
কথায় বলে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু, তর্কে বহুদূর। ক্রিকেটেও তাই বিশ্বাসে মিলায় ফল, পরিসংখ্যানে বহুদূর। পরিসংখ্যান বদলে যেতে পারে এক জয়ে। অপয়া ফাইনালের গেরো কাটুক ডাবলিনে। স্কটিশ বীর ব্রুস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আয়ারল্যান্ডের বুকে মাশরাফীও লিখে আসুক বাংলাদেশ ক্রিকেটের বাঁক বদলের নতুন ইতিহাস। বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণও আছে, লড়াকু ম্যাশ যে হার মানতে জানে না।
তাহমিদ অমিত
ক্রিকেট প্রতিবেদক, যমুনা টিভি
Leave a reply