স্টাফ রির্পোটার,নেত্রকোণা
কাজ শুরু হয়েছে ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টম্বর। কাজের সময়সীমা দেড় বছর। কিন্তু নির্মাণাধীন সেতুটির দুই পাশে পাইল ও ভিত্তি তৈরি করতেই কেটে গেছে দেড় বছর। এরমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদও শেষ হয়েছে বছর খানেক আগে। কিন্তু সেতু নির্মাণের তেমন কোনো অগ্রগতি নেই।
স্থানীয়রা বলছেন,ঠিকাদারের গাফিলতি এবং সেতুর তদারকির দায়িত্বে থাকা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তাদের উদাসীনতার জন্যই এমনটি হয়েছে। এ চিত্র নেত্রকোণা-সিধলী সড়কের রাজাপংর সেতু প্রকল্পের। আসন্ন ঈদে ঘরে মুখো যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়বে স্থানীয়দের।
নেত্রকোণা এলজিইডি কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৫ মে রাজাপুর সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুটির দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং প্রস্থ ৫ দশমিক ২৫ মিটার। ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা ব্যয়ে কাজ পায় মেসার্স রিজভী কনস্ট্রাকশন নামে ময়মনসিংহের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০১৬ সালের ৭ সেপ্টম্বর থেকে সেতুর কাজ শুরু করে ২০১৮ সালের ১৬ জুন তা শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে শুধু সেতুর বিকল্প পথ (ডায়াবেশন) তৈরি করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয় মূল সেতুর কাজ। কিন্তু সেতুর দুই পাশে পাইল ও ভিত্তি তৈরি করতেই কেটে গেছে পুরো বছর। দেড় বছর মেয়াদের এইসেতুটি এখনো ৩০ শতাংশ কাজ বাকি রয়েছে।
তবে, এলজিইডি বলছে সেতুতে শুধু ঢালাই কাজ ও দুই পাশের সংযোগ সড়ক (এপ্রোচ) বাকি আছে। সব মিলিয়ে আগামী দুই তিন মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।
এদিকে বৃষ্টির পানি বেড়ে যাওয়ায় গত তিনসপ্তাহ ধরে পথচারীদেরবিকল্প পথ দিয়ে চলাচল করা দুর্বিসহ হয়ে ওঠছে। কারণ ওই বিকল্প পথটির স্থানে স্থানে পানি জমে বিশাল গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে যানবাহন নিয়ে চলাচলকারী ও পথচারীরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। ব্যস্ত ওই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন কলমাকান্দা ও পার্শ্ববতী দুর্গাপুর উপজেলার প্রায় ২৫ হাজারের মতো মানুষ চলাচল করেন। এ ছাড়া স্কুল কলেজে যাওয়া-আসা করে শতাধিক শিক্ষার্থী।
নেত্রকোণা থেকে কলমাকান্দা ও দুর্গাপুর উপজেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) আওতায় প্রধান সংযোগ সড়ক দু’টিগত তিন বছর ধরে চলাচলের অনুপযোগী হওয়ায় লোকজনদের বাধ্য হয়ে নেত্রকোণা-কলমাকান্দার সিধলী সড়ক দিয়ে এসে গন্তবে পৌঁছতে হয়।
গত বুধবার দুপুর সরেজমিনে দেখা গেছে, ৮/১০ জন শ্রমিক সেতুর উত্তর পাশে রড় বাঁধাইয়ের কাজ করছেন। তাদের মধ্যে একজন জানান, এভাবে কাজ করে সম্পূর্ণ সেতু সমাপ্ত করতে আরো ৫/৬ মাসের প্রয়োজন।
কলমাকান্দার কৈলাটি ইউনিয়নের নক্তিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম জানান, নিয়মিত জেলা শহরের আসতে হয় ওই সড়ক দিয়ে। তিনি বলেন, ‘রাজাপুর সেতুটি নির্মাণের দীর্ঘসূত্রিতার জন্য এখন এই দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ রীতি মতো অতিষ্ট হয়ে পড়ছে। এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের চরম গাফিলতির কারণেই এমনটি হয়েছে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকলে তা হতো না।’
সেতুর সংযোগ সড়কে পানি জমে গর্তে আটকে পড়া সিএনজি চালক বাবুল মিয়া বলেন, ‘প্রতিদিনই এই পথ দিয়ে সিএনজি চালাই। কিন্তু রাজাপুর সেতু এলাকায় এলেই আতঙ্কে থাকি কখন যান নিয়ে গর্তে আটকে পড়ি। মানুষজন ছোট নৌকায় ও দূর দিয়ে আলপথ হেঁটে স্থানটি পার হতে হয়। তিনি সেতুটি দ্রুত শেষ হওয়ার দাবি জানান।’
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রিজভী কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী হোসাইন আহম্মেদ ওরফে পান্না মুঠোফোনে জানান, খোয়া বালু ফেলে সচল রাখছি। আর এখন দ্রুত গতিতেই কাজ হচ্ছে। শেষ না হওয়ায় আমিও সেতুটি নিয়ে সমস্যায় আছি। জুনের ১৭ তারিখ পযন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। হয়তো এর মধ্যে শেষ হবে।
এলজিইডির সদর উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী মো. আরিফুল্লাহ খানের দপ্তরে গিয়ে জানতে চাইলে জানান, ‘সেতুর কাজ ঠিক মতোই চলছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন ঢালাই ও সংযোগ সড়কের কাজ বাকি আছে। এত সময় লাগার কারণ ও কাজের মান জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কক্ষ থেকে চলে যান।
সেতু নির্মাণের তদারকির দায়িত্বে থাকা নেত্রকোণা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান জানান,সেতুর ডিজাইন করার সময় বিকল্প সড়ক ছিল না। ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সময় ক্ষেপণ করায় নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি। আমি জেলায় যোগদান করারপর প্রতিষ্ঠানটিকে দ্রুত কাজ শেষ করতে নোটিশ দিয়েছি। এখন কাজের গতি এগোচ্ছে। তিনি জানান, ওই সেতুটি সদর উপজেলা এলজিডির কার্যালয় দেখভাল করছে।
Leave a reply