সম্প্রতি দেশব্যাপী সমালোচিত ও নিন্দিত যে নামটি – গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম।
চলতি মাসে একটি জাতীয় দৈনিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আবাসন পল্লিতে আসবাবপত্র কেনাসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজে দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশের আলোচনায় চলে আসেন তিনি।
এবার গুরুতর অভিযোগ উঠল বালিশ কাণ্ডের হোতা এই মাসুদুল আলমের ছোট ভাই আমেরিকা প্রবাসী মাহমুদুল আলম সোহেলের বিরুদ্ধে।
অভিযোগটি এসেছে মাহমুদুল আলম সোহেলের স্ত্রী সেলিনা আক্তারের পক্ষ থেকে।
তার অভিযোগ, বিভিন্ন সময় মাহমুদুল আলম তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। আর ছোট ভাইকে এ কাজ করতে ইন্ধন জুগিয়েছেন প্রকৌশলী মাসুদ আলম।
এ বিষয়ে ২০১৮ সালে টাঙ্গাইল থানায় মামলা করেছেন বলে জানান সেলিনা আক্তার।
এছাড়াও মাহমুদুল আলম সোহেলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক বিয়ে ও অবৈধ সম্পর্ক স্থাপনের অভিযোগ আনেন স্ত্রী সেলিনা।
এক গণমাধ্যমকে সেলিনা আক্তার বলেন, ‘প্রকৌশলী মাসুদুল আলমের পরিবার নারী নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত। ওই পরিবারের এমন অপকর্মের বিচার চাওয়ায় মাসুদ আলম আমার ভাইকে হুমকি দিয়েছিল। এ নিয়ে আমার ভাই মো. হুমায়ুন কবির ২০১৮ সালে টাঙ্গাইল থানায় ওই পরিবারকে অভিযুক্ত করে থানায় একটি মামলা করেন।’
সেই মামলার তথ্য সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শান্তিনগর এলাকার সেলিনা আক্তারের বিয়ে হয় প্রকৌশলী মাসুদুলের যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছোট ভাই মাহমুদুল আলম সোহেলের সঙ্গে।
বিয়ের পর সেলিনা জানতে পারেন যে, এর আগেও সোহেল দুটি বিয়ে করেছিলেন যে বিষয় তাদের কাছে লুকানো হয়েছিল।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রে একাধিক মেয়ের সঙ্গে সোহেলের অবৈধ মেলামেশা হাতেনাতে ধরা পড়ে।আর প্রতিবারই স্ত্রীর কাছে মাফ চেয়ে বিষয়টি মীমাংসা করে নেন সোহেল।
সেলিনা জানান, ২০১৮ সালে শ্বশুরের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্বামীসহ থেকে দেশে আসেন সেলিনা। দেশে আসার পরেও সোহেলের একই চরিত্র দেখতে পান সেলিনা।
সোহেলের এমন কাণ্ডে সেলিনা প্রতিবাদ করলে মাসুদুল আলমের পরিবারের সবাই তাকে মারধর করেন। এ সময় সোহেল সেলিনার গায়ে পেপার স্প্রে মারলে তার মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়।
ওই ঘটনার পর স্থানীয় মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সালিশ-বৈঠক করে বিষয়টি মিটমাট করেন এবং সংসার রক্ষার স্বার্থে সেলিনা তা মেনে নেন। এরপর সোহেলের সঙ্গে সেলিনা আবার যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
কিন্তু এতো কিছুর পরও শোধরাইয়নি সোহেল। সেখানে গিয়েও একই অপকর্মে লিপ্ত হন সোহেল। সেলিনা আবার প্রতিবাদ করলে সোহেল ফের তাকে মারধর করেন।
এরপর সোহেল থেকে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নেন সেলিনা। দেশে পরিবারকে ঘটনার কথা জানালে সেলিনার ভাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে টাঙ্গাইলে প্রকৌশলী মাসুদুল আলমের মা, বাবা এবং ছোট ভাইকে আসামি করে একটি মামলা করেন।
মামলা প্রসঙ্গে সেলিনার ভাই মো. হুমায়ুন কবির জানান,‘প্রভাব খাটিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নিজেদের পক্ষে নিয়েছেন মাসুদুল আলম। ওই পরিবারের সবার নামের বিরুদ্ধে মামলা করলেও শুধু সোহেলের নাম রেখে বাকিদের নাম বাদ দিয়েছে তদন্তকারীরা।’
এছাড়াও মামলা তুলে নিতে কয়েকবার প্রাণ নাশের হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন হুমায়ুন।
হুমায়ুনের এমন অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আশরাফ উদ্দিন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্তে শুধু মাহমুদুল আলম সোহেলের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। পরিবারের অন্যদের সংশ্লিষ্টতা না থাকায় নাম বাদ দেয়া হয়েছে।’
এ মামলায় মাহমুদুল আলম সোহেলের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে বলে জানান এসআই আশরাফ উদ্দিন।
জানা গেছে, বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন আসামি মাহমুদুল আলম সোহেল। অথচ এখনও সোহেলকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ।
গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও এখনও কেন সোহেলকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে সাইদুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ওয়ারেন্টভুক্ত যে কোনো আসামিকে পুলিশ তন্ন তন্ন করে খোঁজে। মামলাটি ২০১৮ সালের, তখন আমি এ থানায় ছিলাম না। তাই বিষয়টি আমার জানা ছিল না।’
অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট থাকলে আসামিকে নিশ্চিত আসামিকে খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আসামি এ এলাকায় আছে কিনা, সেটা আগে খতিয়ে দেখতে হবে’।
এদিকে স্বামীর বিরুদ্ধে শুধু শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগই নয় স্বামীর বড় ভাই প্রকৌশলী মাসুদ আলমের বিরুদ্ধেও অবৈধ অর্থপাচারের অভিযোগ এনেছেন সেলিনা আক্তার।
তিনি অভিযোগ করেন, মাসুদ আলম ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ১২ হাজার ডলার পাচার করে করেছেন। চরিত্রহীন ছোট ভাইকে প্রথম স্ত্রীর মামলা থেকে বাঁচাতে অবৈধ পথে এ টাকা পাঠান তিনি।
এছাড়াও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় বোন ও নিকটাত্মীয়দের নামে মাসুদুল আলমের বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখেন মাসুদুল আলমের। ঢাকার খিলগাঁওয়ে কোটি টাকা মূল্যের একটি ফ্ল্যাট রয়েছে। বসুন্ধরায়ও স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট আছে তার।
প্রসঙ্গত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের আবাসন পল্লিতে আসবাবপত্র কেনাসহ অন্য আনুষঙ্গিক কাজে দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদনে প্রকাশ হয় যে, ওই প্রকল্পে এক হাজার ৩২০টি বালিশ কেনা হয়ে। এদের প্রতিটির মূল্য দেখানো হয়ে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা। আর সেই প্রতিটি বালিশ নিচ থেকে ভবনের ওপরে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে ৭৬০ টাকা!
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, শুধু বালিশের বিষয়েই নয় প্রকল্পের আসবাবপত্র কেনা ও ফ্ল্যাটে তোলার ব্যয়েও পুকুর চুরি করার মতো বিল করা হয়।
সেখানে ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য কেনা টিভি, ফ্রিজ ওয়াশিং মেশিন ও মাইক্রোওয়েভের ক্রয়মূল্য ও সেগুলোকে ফ্ল্যাটে তুলতে যে ব্যয় দেখানো হয়েছে তা রীতিমতো অস্বাভাবিক।
আর এসব দুর্নীতির মূল হোতা ছিলেন গণপূর্ত অধিদফতরের পাবনা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাসুদুল আলম।
Leave a reply