পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বাদ না দিয়েই বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেছে ছাত্রলীগ। সোমবার ধানমণ্ডি ৩২-এ এ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন তারা।
এর আগে ১৫ মে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে সংগঠনটির নতুন কমিটির শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছিল। তখন অপরাধী ও বিতর্কিতদের কমিটি থেকে বাদ দিতেও নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ সেই নির্দেশনা পালন না করে রোববার মধ্যরাতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন কর্মসূচি ঘোষণা করে ছাত্রলীগ।
ফলে সেদিন রাত ১টা থেকে ফের আন্দোলনে নামেন পদবঞ্চিতরা। সোমবার দুপুরে রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান কর্মসূচি থেকে ঘোষণা করা হয়- বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পদায়ন না করা পর্যন্ত তারা অবস্থান চালিয়ে যাবেন। দাবি না মানলে তারা বাড়ি যাবেন না, ঢাকাতেই ঈদ করবেন।
এর আগে গত ১৩ মে সম্মেলনের এক বছর গঠিত হয় ছাত্রলীগের ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। নবগঠিত এ কমিটি থেকে সর্বশেষ কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ ও অবস্থানে থাকা অর্ধশত নেতা বাদ পড়েন ও প্রত্যাশিত পদবঞ্চিত হন।
ফলে সেদিনই এ কমিটি প্রত্যাখ্যান করে এবং বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পদ প্রদানের দাবিতে বিক্ষোভ করেন পদবঞ্চিতরা। এরপর মধুর ক্যান্টিন ও টিএসসিতে কয়েক দফায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা তাদের ওপর হামলা চালান।
পদবঞ্চিতরা ১৬ মে বিভিন্ন অপরাধ অপকর্মে জড়িত এবং সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও রেওয়াজ পরিপন্থী উপায়ে পদ পাওয়া বিতর্কিত ৯৯ নেতার নাম প্রকাশ করেন।
এসব নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছলে ১৯মে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সিনিয়র চার নেতার হস্তক্ষেপে আন্দোলন স্থগিত করেন পদবঞ্চিতরা।
পদবঞ্চিতরা জানান, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের চার জ্যেষ্ঠ নেতা তাদের সব দাবি মেনে নেয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন। তাদের আশ্বাসেই আন্দোলন থেকে সরে এসেছেন তারা।
তাদের যেসব আশ্বাস পেয়েছেন সেগুলো হলো- খুব দ্রুত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে পদবঞ্চিত নেতাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দেয়া হবে, গত ১৩ মে পদবঞ্চিতদের ওপর মধুর ক্যান্টিনে হামলার ঘটনা এবং গত শনিবার মধ্যরাতে টিএসসিতে ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার হবে, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিতর্কিতদের পদগুলোকে শূন্য ঘোষণা করে যোগ্যতার ভিত্তিতে সেসব পদে পদবঞ্চিতদের দিয়ে পূরণ করা হবে।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, তাদের এসব আশ্বাসের একটিও পূরণ হয়নি।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারীদের অন্যতম সর্বশেষ কমিটির দফতর বিষয়ক উপসম্পাদক শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন যুগান্তরকে বলেন, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা যখন আমাদের ডাকলেন, তাদের প্রতি সম্মান রেখে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। তারা তখন বলেছেন আমাদের সব দাবি মেনে নেবেন। অথচ একটি দাবিও মানা হয়নি। বরং আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। মধুর ক্যান্টিনে হামলায় আহত কেন্দ্রীয় নেত্রী জারিন দিয়াকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আন্দোলন স্থগিত করিয়ে সময়ক্ষেপণ করে তারা প্রতিশ্রুতি রাখলেন না। এগুলো এক ধরনের বেঈমানি।
তিনি বলেন, অপরাধীদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন হতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত রাজাকারের সন্তানরা জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দেবে- আমরা তা মেনে নিতে পারি না। সেজন্য এ কর্মসূচি আমরা প্রত্যাখ্যা করেছি।
এই পদবঞ্চিত নেতা আরও বলেন, যেদিন শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হবে তার আগের রাতে ফেসবুকে তা জানানো হয়। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে এর প্রতিবাদে রাত ১টা থেকে অবস্থান নিয়েছি। আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে আহ্বান জানিয়েছিলাম অপরাধীদের বাদ দিয়ে এ কর্মসূচি পালন করতে। কিন্তু তারা তা করেননি। বিতর্কিতদের নিয়ে আমাদের আবেগ, শ্রদ্ধা ও সম্মানের জায়গায় ফুল দিয়েছেন।
শেখ নকিবুল ইসলাম সুমন বলেন, আপার (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) নির্দেশ ছিল বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে হবে। অথচ তারা তা অমান্য করলেন। এর মাধ্যমে তারা একটা কলঙ্কিত অধ্যায় রচনা করলেন। যেখানে সংবাদ সম্মেলন করে তারা বিতর্কিত ১৭ জনের নাম ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বললেন- তাদেরকেও বাদ দিলেন না। তারাও ফুল দিতে গেল। এছাড়া ৪৬-৪৭ জনের বিতর্কিতর প্রমাণসহ একটি তালিকা নানক ভাইকে (আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক) ভাইকে দেই। সেই তালিকা থেকেও কাউকে বাদ দেয়া হয়নি। এটি এক ধরনের প্রহসন।
ফলে আমরা রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান নিতে বাধ্য হয়েছি। কমিটি থেকে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে যোগ্যদের পদ দেয়া না হলে লাগাতার আন্দোলন চলবে। দাবি না মানলে ঢাকাতেই ঈদ করবেন এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান তারা।
এদিকে সোমবার দুপুরে ধানমণ্ডি ৩২-এ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে ছাত্রলীগ। নবগঠিত ৩০১ সদস্যের কমিটি সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর নেতৃত্বে কয়েক ধাপে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এদের মধ্যে বিতর্কিত অর্ধশত নেতাও ছিলেন। এমনকি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করে বিতর্কিত যেই ১৭ জনের নাম ঘোষণা করেছিলেন তাদের অনেককেও দেখা গেছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে।
Leave a reply