স্বাধীন বাংলাদেশে ৪৮তম বাজেট ঘোষণা আজ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদনে মন্ত্রিসভার বৈঠক ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন মিললে আজ বেলা ৩টায় জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটি দেশের ৪৮তম ও বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের প্রথম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে আ হ ম মুস্তফা কামালের এটি প্রথম বাজেট। যদিও গত সরকারের পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে অনেক বাজেট প্রণয়নে পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম বাজেট ঘোষণা করেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। ১৯৭২ সালে। সেই বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। সেই পথ ধরে সংসদ আজ ৪৮তম বাজেট পেশ করছে জাতির সামনে।প্রথম বাজেটের কয়েকগুণ বেড়ে আজকের বাজেটের আকার হয়েছে প্রায় সোয়া পাঁচ লাখ কোটি টাকা। এই হিসেবে সাড়ে চার দশকে বাংলাদেশের সরকারি ব্যয়ের ফর্দ বাড়ছে ৬৬৬ গুণ।
স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে সামরিক থেকে গণতান্ত্রিক বিভিন্ন সরকারে ১৫ জন অর্থমন্ত্রী (অর্থ উপদেষ্টা অথবা সামরিক আইন প্রশাসকসহ) ৪৭টি বাজেট উপস্থাপন করেছেন এর আগে।
তিন মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে সর্বোচ্চ ১২ টি বাজেট দেয়ার রেকর্ডটি ছিল বিএনপি সরকারের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের। গত বছর ৮৫ বছর বয়সে এসে সেই রেকর্ডে ভাগ বসান আওয়ামী লীগের আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অবশ্য টানা বাজেট দেয়ার রেকর্ড মুহিতেরই। আওয়ামী লীগের গত দুই মেয়াদে মোট দশটি বাজেট দিয়েছেন তিনি। তার হাতে গত দশ বছরে বাংলাদেশের বাজেটের আকার বেড়েছে চারগুণের বেশি।
এর আগে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের আমলে দুটি বাজেট (১৯৮৩-৮৪ ও ১৯৮৩-৮৪) দিয়েছিলেন মুহিত।
সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। নতুন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালের হাতে নতুন বাজেটে তা ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯১ কোটি টাকার মত হতে যাচ্ছে।
মুহিতের শেষ বাজেটের শিরোনাম ছিল ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ।’ আর অর্থমন্ত্রী কামাল তার প্রথম বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম ঠিক করেছেন ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’।
‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’- শিরোনামের এবারের বাজেট শুধু এক বছরের জন্য নয়, তৈরি করা হয়েছে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে। তবে এ বাজেট সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সরকারকে মুখোমুখি হতে হবে নানা প্রতিকূলতার।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- প্রবৃদ্ধিতে অসমতা, বিনিয়োগ সংকট, সুশাসনের ঘাটতি, ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, অর্থনীতির আকারে রাজস্ব আদায় কম, বৈদেশিক লেনদেন ঘাটতি।
তবে এসব চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে অর্থমন্ত্রী প্রবৃদ্ধিকে আগামী তিন বছরে ৮ দশমিক ৬ শতাংশের ঘরে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বিশাল ব্যয়কে মেলাতে গিয়ে উচ্চ রাজস্ব আদায়ের হিসাবও করেছেন তিনি।
শুধু তাই নয়, তিনি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে চান ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে এ প্রবৃদ্ধিকে টেনে নিতে চান ৮ দশমিক ৬ শতাংশে।
সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের টানা ১০টি বাজেট থেকে কী এমন পরিবর্তন আনা হয়েছে এবারের বাজেটে- এমন প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, এবারের বাজেট হবে ‘স্মার্ট’ বাজেট। এবার গতানুগতিক বাজেট হবে না। প্রচলিত ধারা থেকে বেরিয়ে নতুন আঙ্গিকে তৈরি করা হচ্ছে এই বাজেট। বাজেট বক্তার বইও হবে সংক্ষিপ্ত।
সাবেক অর্থমন্ত্রীর ২০১৪-১৫ অর্থবছরের জন্য ‘অগ্রগতির ধারাবাহিকতা : সম্ভাবনাময় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বই ছিল ১৬৩ পাতার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জন্য ‘সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ, উচ্চ প্রবৃদ্ধি রচনা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বই ছিল ১২৮ পাতার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জন্য ‘প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বই ছিল ১১৮ পাতার। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জন্য ‘উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বইয়ের পরিধি ছিল ১৫০ পাতার। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের জন্য ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতার বইয়ের আকার ছিল ১৫৬ পাতার।
এবারের বাজেটকে কেন স্মার্ট বাজেট বলছেন, জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, এবারের বাজেটের আকার বাড়লেও বাজেট বক্তৃতার বই হবে সংক্ষিপ্ত। বাজেটের লক্ষ্য সুদূরপ্রসারী হলেও তা অর্জন করতে চেষ্টা থাকবে সাধ্যের মধ্যে, যা সর্বস্তরের জনসাধারণের জন্য হবে সহজপাঠ্য। দেড়শ-দুশ পাতার বাজেট বক্তৃতার বই নয়, এবার বাজেট বক্তৃতার বই সর্বোচ্চ ১০০ পাতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা চলছে। আর এর মধ্যেই থাকবে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নপূরণের অঙ্গীকার। আমরা কাজে বিশ্বাসী।
তিনি আরও বলেন, ‘বাজেট প্রণয়ন কোনো বড় কথা নয়, বাজেট বাস্তবায়নই বড় কাজ। এটিই আমার বড় চ্যালেঞ্জ। শুধু এক বছরের জন্য নয়, সূদুরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ করে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে তৈরি হবে এবারের বাজেট। সাধারণ মানুষের জন্যই তৈরি হচ্ছে এ বছরের বাজেট।
আ হ ম মুস্তফা কামাল ৬ জানুয়ারি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পাঁচ মাসের কিছু বেশি দিনের মাথায় দিচ্ছেন এ বাজেট। এর আগে পরিকল্পনামন্ত্রী হিসেবে আওয়ামী লীগ সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। পেশায় চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মুস্তফা কামাল ২০১৮ সালে চতুর্থ মেয়াদে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচিত হন।
Leave a reply