শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, পশ্চিমবঙ্গে বাস করতে গেলে বাংলায় কথা বলতেই হবে। তিনি দাবি করেন, বিজেপি ক্ষমতা দখল করতে বাঙালি ও সংখ্যালঘুদের টার্গেট করে ‘গুজরাট মডেল’-এর অনুসরণ করতে চাইছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, পশ্চিমবঙ্গকে তিনি গুজরাট বানাতে দেবেন না বিজেপিকে।
পাশাপাশি তিনি জানিয়ে দেন, ‘‘বাঙালিকে বাংলায় ঘরছাড়া হতে দেব না।” মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ”আমরা বাংলাকে (ভাষা) এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। যখন আমরা দিল্লি যাই, আমরা হিন্দিতে কথা বলি। যখন পঞ্জাবে যাই, পঞ্জাবিতে কথা বলি। আমি তো তাই বলি। যখন আমি তামিলনাডু যাই, তামিল না জানলেও অল্প কিছু জানি। সুতরাং একইভাবে যখন আপনি বাংলায় আসবেন আপনাকে বাংলায় কথা বলতে হবে। আমরা মেনে নিতে পারি না বাইরে থেকে লোক আসবে আর বাঙালির মারধর করবে।”
এদিন উত্তর ২৪ পরগনার কাঁচরাপাড়ায় একটি সভায় যোগ দেন মমতা। বিজেপি নেতা মুকুল রায়ের এলাকা এটি। মুকুলের পুত্র শুভ্রাংশু বিজপুর বিধানসভার বিধায়ক। তিনি সম্প্রতি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও বলেন, ‘‘নৈহাটি, কাঁকিনাড়া, ব্যারাকপুরে বাঙালিদের বাড়িতে লুট হচ্ছে। আমরা এটা সহ্য করব না। আমাদের দলীয় সমর্থকরা কিন্তু অবাঙালিদের বাড়িতে লুঠতরাজ চালাচ্ছে না। আমরা এই ধরনের হিংসার বিরুদ্ধে।”
বিজেপির উদ্দেশে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মমতা বলেন, ‘‘ইভিএমে কারচুপি করে কয়েকটা আসনে জিতেছে মানে এই নয় যে তোমরা রাজ্যের বাঙালি আর সংখ্যালঘুদের মারবে। আমরা এসব সহ্য করব না। পুলিশ এই হুলিগানদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। বাংলায় যে থাকবে তাকে বাংলা বলতেই হবে।”
এবারের লোকসভায় তৃণমূকে জোর টক্কর দিয়েছে বিজেপি। শাসক দল যেখানে ২২টি আসন পেয়েছে, সেখানে বিজেপি পেয়েছে ১৮টি আসন। বিজেপি ইভিএম কারচুপি করেছে, এই অভিয়োগ তুলে মমতা ব্যালট পেপারে ভোটের দাবি তুলেছেন।
‘‘উত্তর ভারতের বিশেষ করে বিহারের বাসিন্দাদের মহারাষ্ট্রে মারধর করা হয়েছে কয়েক বছর আগেও।” এই কথা বলে মমতা বলেন, বাংলার মানুষ সব ধর্ম, সম্প্রদায়, জাতির সহাবস্থানে বিশ্বাস করে। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাংলায় বসবাসকারী অবাঙালিদের বিরোধী নই। কিন্তু বিজেপি বাংলায় বাঙালি-অবাঙালি ভেদাভেদ করতে চাইছে। আমি বলে দিচ্ছি, আমাদের ধৈর্যের পরীক্ষা নেবেন না। আমরা বাংলায় বাঙালিকে ঘরছাড়া হতে দেব না।” মমতা দাবি করেন, বিজেপি বাংলাকে গুজরাত হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে। গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ আনেন, দাঙ্গা বাঁধিয়ে পশ্চিমের রাজ্যগুলিতে তারা ক্ষমতায় এসেছে। সেই একই পদ্ধতি তারা বাংলাতেও প্রয়োগ করতে চাইছে। তিনি বাংলায় তেমন কিছু করতে দেবেন না বলে জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
গোটা রাজ্য তো বটেই, দেশজুড়ে চিকিৎসকদের ধর্মঘট একটি জ্বলন্ত ইস্যু। সেই বিষয়েও এদিন বক্তব্য রাখেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দাবি করেন, বহিরাগতরা এসে চিকিৎসকদের আন্দোলনকে প্রভাবিত করেছে। তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের ভিতরে গিয়েছিলেন। তখন তিনি কয়েকজন বহিরাগতকে দেখতে পান বলে দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারা সরকার বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিল।
মমতা বলেন, ‘‘আমি গতকাল বলেছিলাম, বহিরাগতরা যুক্ত ছিলেন গতকালের ঘটনায়। আমি কয়েকজন বহিরাগতকে দেখেছি স্লোগান দিতে।” চিকিৎসকদের চার ঘণ্টার মধ্যে ধর্মঘট তুলে কাজে ফেরার হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি। সেই হুঁশিয়ারি মানেননি চিকিৎসকরা। আজ অপর্ণা সেনের মতো নামী অভিনেত্রী ও পরিচালক এসএসকেএমে আসেন। সেই প্রসঙ্গ তুলে কারও নাম না করে মুখ্যমন্ত্রী ‘‘ছদ্ম আঁতেল” বলে কটাক্ষ করে বলেন, তিনি কখনও কোনও ঘটনাকে যাচাই না করে মন্তব্য করেন না।
বিজেপির ‘জয় শ্রী রাম’-এর উত্তরে ‘জয় বাংলা’ ও ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে বক্তৃতা শেষ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Leave a reply