স্টাফ রির্পোটার,নেত্রকোণা
নেত্রকোণা-৫ (পূর্বধলা) আসনের সাংসদ ওয়ারেসাত হোসেন বেলালের (বীর প্রতীক) বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। রোববার বেলা দুইটার দিকে জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্ল্যাহ আল মোতাহসিম পূর্বধলায় থানায় এই মামলাটি দায়ের করেন।
তবে জানতে চাইলে পূর্বধলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুর রহমান ওই দিন বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বলেন, ‘জেলা রির্টানিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছ থেকে এরকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। কিন্তু এখনো মামলাটি রেকর্ড করা হয়নি। উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরে মামলায় অন্তভূর্ক্ত করা হবে। এর জন্য কিছুটা সময় নিচ্ছি।
আর রির্টানিং কর্মকর্তা আব্দুলল্ল্যাহ আল মোতাহসিম বলেন, ইসির নির্দেশ অনুযায়ী যথাযথভাবে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা রেকর্ড করার বিষয়টি এখন পুলিশের।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এর আগে বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সাংসদের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত এই নির্দেশ দেওয়া হয়।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নেত্রকোণার পূর্বধলায় প্রথম ধাপের এই নির্বাচন গত ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর দুই দিন আগে ৮ মার্চ রাতে নির্বাচন স্থগিত করা হয়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছিল, ‘নির্বাচন ন্যায়সংগত ও নিরপেক্ষভাবে এবং আইন অনুযায়ী পরিচালনা করা সম্ভব নয় বলে ইসির কাছে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই কমিশন নির্বাচন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন প্রার্থীর একজন আওয়ামী লীগ মনোনীত জাহিদুল ইসলাম সূজন এবং অপরজন মাছুদ আলম তালুকদার টিপু। জাহিদুল ইসলাম উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। আর মাছুদ উপজেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক। প্রতীক বরাদ্দ হওয়ার পর থেকে এই দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর, প্রচারে বাধা, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে বিভিন্ন সময় উভয় পক্ষের অন্তত ২৫ জনের মতো আহত হয়।.
আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদুল ইসলামের অভিযোগ, স্থানীয় সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং ওই থানার তৎকালীন ওসি বিল্লাল উদ্দিন পছন্দের প্রার্থী মাছুদ আলম তালুকদারের পক্ষে অবস্থান নেন। সাংসদ বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ করে সরাসরি নির্বাচনী প্রচার চালান। এ নিয়ে জাহিদুল ইসলাম জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও প্রধান নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এরপর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ইসি সচিবালয় থেকে সাংসদকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার কথা বলা হয়। সাংসদ নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করেন। আর ইসির নির্দেশে ওসি বিল্লাল উদ্দিনকে প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু সাংসদ ওয়ারেসাত নির্বাচনের তিন দিন আগে আবারও নিজের নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান নেন। বিষয়টি জাহিদুল ইসলাম ও তাঁর সমর্থকেরা কমিশনকে জানান। নির্বাচনের দুই দিন আগে নির্বাচন স্থগিত করা হয়।
গত ৩০ মার্চ ইসি সচিবালয়ের যুগ্ম সচিব ও জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশনস) মো. আবদুল বাতেনের নেতৃত্বে বিষয়টির তদন্ত হয়। তদন্তে ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় সাংসদের বিরুদ্ধে ওই মামলার নির্দেশনা আসে। স্থগিত হওয়া এই নির্বাচন আগামী ১৮ জুন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
এ বিষেয়ে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল্ল্যাহ আল মোতাহসিম রোববার জানান, ‘ওই নির্দেশনায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বাদী হয়ে মামলা করার কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে আজ পূর্বধলা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের কাযকরী কমিটির সদস্য। তিনি টানা তিন বারের সাংসদ।
Leave a reply