মালিঙ্গা ঝড়ে ইংল্যান্ড বধ

|

লাসিথ মালিঙ্গার গতিতে উড়ে গেল ইংল্যান্ড। শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৩৩ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে ২১২ রানে অলআউট বিশ্বকাপের হট ফেবারিট ইংল্যান্ড। মালিঙ্গার বোলিং নৈপুণ্যে ২০ রানের জয় পায় শ্রীলংকা। এই জয়ে ছয় ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন জিইয়ে রাখল ১৯৯৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা।

শ্রীলংকার বিপক্ষে ২৩৩ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে শুরুতেই বিপদে পড়ে যায় ইংল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই ইংল্যান্ড শিবিরে আঘাত হানেন লাসিথ মালিঙ্গা। প্রথম ওভারের দ্বিতীয় বলে ইংলিশ ওপেনার জনি বেয়ারস্টোকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন মালিঙ্গা। গোল্ডেন ডাক হয়ে সাজঘরে ফেরেন বেয়ারস্টো।

নিজের দ্বিতীয় ওভারে জেমস ভিন্সের উইকেট তুলে নেন মালিঙ্গা। দুই ওভারে ২ ওপেনারের উইকেট হারিয়ে প্রাথমিক বিপর্যয়ে পড়ে যায় বিশ্বকাপের স্বাগতিকরা। এরপর তৃতীয় উইকেটে ইয়ন মরগানকে সঙ্গে নিয়ে ৪৭ রানের জুটি গড়েন জো রুট।

তাদের এই জুটি ভাঙেন ইসুর উদানা। তার বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক ইয়ন মরগান। তিনি ৩৫টি বল খেলে ২১ রান করেন। এর মধ্যে দুটি চার রয়েছে। ইতিমধ্যে ২০ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ৭৬ রান সংগ্রহ করে ইংল্যান্ড।

বেন স্টোকসকে সঙ্গে নিয়ে অনবদ্য ব্যাটিং করে যান জো রুট। চতুর্থ উইকেটে তারা স্কোরবোর্ডে ৫৪ রান যোগ করেন। এরপর ৫১ রানের ব্যবধানে ৫ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। ৮৯ বলে ৫৭ রান করা রুটকে তৃতৃীয় শিকারে পরিণত করেন লাসিথ মালিঙ্গা। মাত্র ১০ রান করে মালিঙ্গার চতুর্থ শিকার জস বাটলার। মঈন আলী ও ক্রিস ওকসকে উইকেটে থিতু হতে দেননি ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা।

শ্রীলংকা ২৩২/৯

সেমিফাইনালে যেতে হলে জয়ের বিকল্প নেই। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩২ রানের বেশি করতে পারেনি ১৯৯৬ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকা। এবারের বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত কোনো ম্যাচে আড়াইশ রান করতে পারেনি লংকানরা। শুক্রবার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের একার লড়াইয়ের পরও ২৩২ রানে ইনিংস গুটিয়ে যায় শ্রীলংকা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ১১৫ বলে ৮৫ রান করেন ম্যাথিউস।

শুক্রবার ইংল্যান্ডের হেডিংলি লিডসে বিশ্বকাপের ২৭তম ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় শ্রীলংকা। দলীয় ২.২ ওভারে মাত্র ৩ রানে দুই ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ও কুশল পেরেরার উইকেট হারিয়ে চাপের পড়ে যায় লংকানরা।

তৃতীয় উইকেটে কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গে দলকে খেলায় ফেরান অভিষেক ফার্নান্দো। ইংলিশ পেসারদের তোপের মুখে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তারা। ৫৯ রানের জুটি গড়েন ফার্নান্দো ও মেন্ডিস। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটির পথেই ছিলেন ফার্নান্দো। কিন্তু মার্ক উডের বলে আদিল রশিদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন তিনি। তার আগে ৩৯ বলে ৬টি চার ও দুটি ছক্কায় ৪৯ রান করেন ফার্নান্দো।

এরপর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও কুশল মেন্ডিস দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে যান। ইংলিশ পেসারদের চাপ এড়িয়ে অনবদ্য ব্যাটিং করেন তারা। চতুর্থ উইকেটে তাড়া গড়েন ৭১ রানের জুটি। এরপর শূন্য রানের ব্যবধানে ২ উইকেট হারায় শ্রীলংকা। আদিল রশিদের লেগ স্পিনে বিভ্রান্ত হয়ে ফেরেন কুশল মেন্ডিস ও জীবন মেন্ডিস। ৬৮ বলে ৪৬ রান করে ফেরেন কুশল। রানের খাতা খুলার সময় পাননি জীবন মেন্ডিস।

এরপর ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে জুটি বেধে দলকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। ৪৭ বলে ২৯ রান করে ফেরেন সিলভা। তার বিদায়ের পর মাত্র ২ রান করে ফেরেন থিসেরা পেরেরা।

তবে অফ ফর্মে থেকে ছন্দে ফিরে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই অফ ফর্মে ছিলেন অ্যাঞ্জেলো। সবশেষ তিন ম্যাচে তার সংগ্রহ মাত্র ৯ রান। প্রথম দুই ম্যাচে ডাক পেয়েছেন তিনি।

তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শুক্রবার দায়িত্বশীল ব্যাটিং করেছেন শ্রীলংকার সাবেক এই অধিনায়ক। তার ব্যাটে ভর করে ২৩২ রান তুলতে সক্ষম হয় লংকানরা। ১৩তম ওভারে ব্যাটিংয়ে নেমে ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ১১৫ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন ম্যাথিউস। মূলত তার দায়িত্বশীলতায় দুইশো পেরিয়ে ২৩২ রান তুলতে সক্ষম হয় শ্রীলংকা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলংকা: ৫০ ওভারে ৩২৩/৯ (ম্যাথিউস ৮৫*, ফার্নান্দো ৪৯, মেন্ডিস ৪৬, সিলভা ২৯; মার্ক উড ৩/৪০, আর্চার ৩/৫২, আদিল রশিদ ২/৪৫)।

ইংল্যান্ড: ৪৭ ওভারে ২১২/১০ (জো রুট ৫৭, বেন স্টোক ৮২*, মরগান ২১; মালিঙ্গা ৪/)।

ফল: শ্রীলংকা ২০ রানে জয়ী।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply