ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশের জন্য সেমিফাইনালের সমীকরণ একটু হলেও সহজ করে দিয়েছে শ্রীলংকা। এখন নিজেদের বাকি তিন ম্যাচে জিতলে এবং ইংল্যান্ড তাদের শেষ তিন ম্যাচের দুটিতে হারলে সেমিতে ওঠার ভালো সুযোগ থাকবে বাংলাদেশের। এমনকি অন্যসব ম্যাচের ফল অনুকূলে থাকলে শেষ তিন ম্যাচের দুটিতে জিতেও বিশ্বকাপের শেষ চারে চলে যেতে পারে বাংলাদেশ। স্বপ্ন এখনও বেঁচে থাকায় সম্ভাবনার সব দুয়ারেই কড়া নাড়তে চান মাশরাফিরা। কিন্তু সব সমীকরণের প্রথম শর্ত হল, আজ জিততেই হবে বাংলাদেশকে। প্রতিপক্ষ যেহেতু আফগানিস্তান, বিকল্প ভাবনার কোনো সুযোগই নেই।
সাউদাম্পটনের রোজ বোলে আজ আফগানদের বিপক্ষে ভীষণ প্রত্যাশিত জয়টা পরিস্থিতির কারণে অবশ্য কর্তব্যের কাতারে চলে গেছে। গত পরশু একই ভেন্যুতে ভারতকে সে যতই চোখ রাঙাক আফগানিস্তান, আজ পরিষ্কার ফেভারিট বাংলাদেশ। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ভারতকে কাঁপিয়ে দিয়ে ব্যাটিং ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত মাত্র ১১ রানে হেরে যাওয়া আফগানদের লড়াকু পারফরম্যান্সে মুগ্ধ সবাই। সমস্যা হল, শুকনো প্রশংসা ও বাহবায় কোনো পয়েন্ট মেলে না। আগের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং-বীরত্ব যেমন প্রশংসিত হলেও পয়েন্ট টেবিলে তা কোনো দাগ কাটতে পারেনি। ইতিহাস মনে রাখে শুধু বিজয়ীকে। বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষ আজ সেই বিজয়ীর বেশে দেখতে চায় মাশরাফিদের। কারও কাছে কিছু প্রমাণ নয়, প্রশংসাও নয়, আজ শুধু দুই পয়েন্ট চাই বাংলাদেশের।
আফগান স্পিনের জুজুর ভয় আত্মবিশ্বাসী টাইগারদের মনে আতঙ্কের ছাপ ফেলতে পারেনি। প্রতিপক্ষের বোলিং শক্তির প্রতি সমীহ থাকলেও নেই ভয়। সতর্কতার বাতাবরণে অঘটন এড়িয়ে প্রত্যাশিত জয়ের ছবিই আঁকছেন মাশরাফিরা। ছয় ম্যাচে পাঁচ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত পয়েন্ট টেবিলের ছয়ে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের পর খেলতে হবে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে। শেষ দুই ম্যাচের চ্যালেঞ্জ জয়ের জ্বালানি আজই খুঁজে নিতে হবে বাংলাদেশকে। চাপ এড়াতেই হয়তো আগেভাগে সেমির অঙ্ক না কষে প্রতিটি ম্যাচ ধরে এগোনোর লক্ষ্য স্থির করেছেন অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা, ‘অনেক কিছুই হতে পারে। তিনটি ম্যাচ যদি জিততে পারি, এরপর দেখা যাবে কী হয়। বেশি দূরে না তাকিয়ে এখন প্রতিটি ম্যাচ ধরে এগোতে হবে। সামনে যেহেতু আফগানিস্তান, আগে এই ম্যাচটা জিততে হবে। সেই সামর্থ্য আমাদের আছে। তবে আফগানিস্তানকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। ওদের স্পিন আক্রমণ সামলানো যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হবে।’
টানা ছয় হারে পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে পড়ে থাকা আফগানিস্তানও পয়েন্টের খাতা খুলতে উদগ্রীব। ভারতের বিপক্ষে দলের লড়াকু পারফরম্যান্সেই আশার আলো দেখছেন আফগান অধিনায়ক গুলবাদিন নাইব, ‘ভারতের মতো বিশ্বের অন্যতম সেরা দলকে হারানোর বড় সুযোগ হারিয়েছি আমরা। কিন্তু টুর্নামেন্টে বাজে শুরুর পর এখন আমরা দিনে দিনে আরও শানিত হচ্ছি। ভুল থেকে শিখছি। পরের ম্যাচে এই শিক্ষাটা কাজে লাগাতে চাই।’ সাউদাম্পটনের মন্থর উইকেট আরও বেশি আশাবাদী করে তুলেছে আফগানদের।
দলের মূল তিন স্পিনার রশিদ খান, মোহাম্মদ নবী ও মুজিব একেবারে নাকাল করে ছেড়েছিলেন ভারতের ব্যাটসম্যানদের। চার স্পিনারের ৩৪ ওভার থেকে ভারত তুলতে পেরেছিল মাত্র ১১৯ রান। ভারতের মতো শক্তিধর প্রতিপক্ষকে ২২৪ রানে বেঁধে ফেলা নিঃসন্দেহে বড় সাফল্য। এছাড়া বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সাত ওয়ানডেতে তিনটি জয় রয়েছে আফগানদের। কিন্তু বিশ্বকাপে দু’দলের পারফরম্যান্স পাশাপাশি রাখলে মেরু দূরত্বে এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। আফগান বোলিংকে নতজানু করার সামর্থ্য ও বিশ্বাস দুটোই আছে বাংলাদেশের। অনবদ্য ব্যাটিং পারফরম্যান্সে এই বিশ্বকাপের উজ্জ্বলতম মুখ হয়ে উঠেছেন সাকিব আল হাসান। পাঁচ ইনিংসে যার ব্যাট থেকে এসেছে ৪২৫ রান। শেষ ম্যাচে মুশফিকুরের সেঞ্চুরির সঙ্গে তামিম ও মাহমুদউল্লাহর ফিফটিতে অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের বিপক্ষে নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৩৩৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। তিনশ’ ছাড়ানো স্কোর এখন বাংলাদেশের জন্য স্বাভাবিক ব্যাপার।
আসল চ্যালেঞ্জটা অন্য জায়গায়। আফগান বোলিংয়ের চেয়ে নিজেদের বোলিং নিয়েই হয়তো বেশি উদ্বিগ্ন মাশরাফি। এই বিশ্বকাপে প্রতি ম্যাচে গড়ে ৩২৯ রান হজম করেছে বাংলাদেশ! ছন্নছাড়া বোলিং দলের সবচেয়ে দুর্বল দিক। ব্যাটিংয়ে এখন পর্যন্ত সত্যিকারের ভরাডুবি ঘটেনি বাংলাদেশের। সেই বাজে দিনটা যদি আজ এসে যায়, বোলাররা তা সামাল দিতে পারবেন তো? ছোট পুঁজি নিয়ে কীভাবে ম্যাচ বের করে নিতে হয়, মালিঙ্গা-বুমরাহদের কাছ থেকে তা শিখতে পারেন মোস্তাফিজরা।
Leave a reply