বগুড়া ব্যুরো
আবুল হোসেন মণ্ডল! জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক বয়স ৯২ বছর। বয়সের ভারে চশমাটা যে কখন নাকের ডগার নিচে নেমে গেছে, সেটিও মাঝেমাঝে টের পাচ্ছেন না। কাঁপা আঙুলে স্ক্যানারে চাপ দিতেই মনিটরে যখন নিজের ছবি ভেসে উঠলো, ততক্ষণে যেনো স্মিত হাসি দেখা গেলো এই প্রবীণের চোখে-মুখে। ভোট দিয়ে বেরিয়ে বললেন, ‘বয়স হয়া গেছে, বাবা! তাই বুঝতে অ্যানা (অল্প) সময় লাগলো! সিল দিয়া ম্যালাবার ভোট দিছি, এবার মেশিনত দিনু, সহজেই হয়া গেলো‘
প্রথমবার যন্ত্রে ভোট দেয়া নিয়ে খানিক ধোঁয়াশা থাকলেও, বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএমে ভোট দিয়ে আনন্দিত ভোটাররা। সোমবার সকাল থেকেই আসনের ১৪১ ভোটকেন্দ্রে পুরুষ ভোটারদের ভালো উপস্থিতি দেখা গেছে। তবে বেলা ১১টার পর থেকে কেন্দ্রগুলোতে নারী ভোটারদের উপস্থিতিও বাড়ছে।
এরুলিয়া ইউনিয়নের এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে সকাল ৯টার আগে থেকেই ভোটারদের উপস্থিতি দেখা গেছে। ৯টাতেই ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে যান অনেক ভোটার। এরুলিয়ার ভোটার ছৈয়দ আলী প্রামাণিক জানান, বয়স সত্তরের কাছাকাছি যাওয়ায় খানিক সংশয় ছিলো মেশিনে ভোট সহজে দিতে পারবেন কী না। কিন্তু মাত্র ৩টি বোতাম চেপে নিজের ভোট দিতে পারার পর ইভিএম নিয়ে ধারণা পাল্টে গেছে এই বয়োজ্যোষ্ঠ নাগরিকের। তার মতে, পর্যায়ক্রমে সব নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহার করা দরকার।
গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বগুড়া-৬ আসনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয়ী হলেও পরে তিনি শপথ নেন নি। এতে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে আবারো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ পেয়েছেন এই আসনের ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫৮ জন ভোটার। রাজশাহী ও রংপুরের পর উত্তরের তৃতীয় জেলা সদর হিসেবে বগুড়ায় ইভিএম ব্যবহার করছে নির্বাচন কমিশন। ১৪১টি ভোটকেন্দ্রে মোট ৯৬৫টি ইভিএমে ভোটগ্রহণ চলছে। সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বগুড়ায় এসে জানিয়েছেন,বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনের পর স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে সব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।
এই উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, মুসলিম লীগ ও বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী এবং দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ মোট সাত জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই নির্বাচনেই প্রথম সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টার পরিবর্তে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন।
Leave a reply