বর্ষা মৌসুম শুরু হলেও তাপমাত্রা না কমায় কমছে না রোগব্যাধি। সম্প্রতি থেমে থেমে হালকা বৃষ্টি হলেও পরক্ষণেই সূর্যের প্রখরতা ও বাতাসের আর্দ্রতা স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যাচ্ছে।
এ ধরনের বৈরী পরিবেশ রোগজীবাণুর জন্য ভীষণ সহায়ক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বৈরী আবহাওয়া ও তাপমাত্রা চলতে থাকলে বিভিন্ন রোগের সংক্রমণ বাড়তে থাকবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন ডেঙ্গুর সংক্রমণ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। পাশাপাশি ঋতু পরিবর্তনের ফলে দেখা দিয়েছে ঋতুকালীন ইনফ্লুয়েঞ্জা ও চিকেনপক্স। ডায়রিয়া, আমশায়, চর্মরোগ, সাইনাসজনিত মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত রোগের প্রকোপও কম নয়।
রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিদিনই উচ্চতাপমাত্রা নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছেন। যাদের অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। আবার জরের সঙ্গে শরীর ব্যথা নিয়ে অনেক চিকুনগুনিয়ার রোগীও হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।
চিকেনপক্সে আক্রান্ত শিশুরাও চিকিৎসা নিতে আসছে। কথা হয় মুগদা মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম শামছুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব রোগের প্রদুর্ভাব দেখা দিয়েছে, সেগুলো ভাইরাসের সংক্রমণ।
বিদ্যমান আবহাওয়া ভাইরাসজনিত এসব রোগের জন্য দায়ী। তিনি বলেন, তীব্র গরম, বাতাসে আর্দ্রতার আধিক্য ইত্যাদি কারণে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। এ কারণেই এমন সময়ে ভাইরাসজনিত রোগের সংক্রমণ বাড়ে। অধ্যাপক শামছুজ্জামান বলেন, বর্তমানে ঋতুকালীন ইনফ্লুয়েঞ্জায় অনেক মানুষ অক্রান্ত হচ্ছে। যাদের বেশির ভাগেরই শরীরে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এটা একজন থেকে আরেক জনে ছড়িয়ে পড়ে। তবে এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া আবহাওয়ার উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে চিকেনপক্সের আক্রমণ বাড়ে। এটি হলে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে এর টিকা রয়েছে।
এ রোগ একবার হলে দ্বিতীয়বার হওয়ার আশঙ্কা কম। তবে দ্বিতীয়বার একই জীবাণু আক্রমণ করলে ‘হারপিস জোস্টার’ নামে একধরনের রোগের সংক্রমণ ঘটে। তবে এ রোগেরও প্রতিষেধক বাজারে রয়েছে।
ডায়রিয়া পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে আইসিডিডিআর,বির হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডা. আজহারুল ইসলাম খান বলেন, ডায়রিয়ার অবস্থা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ‘হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম’ এর তথ্য মতে, ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৯ জন। এর মধ্যে সাধারণ ডেঙ্গু ফিভারে ৪৮ জন এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে আক্রান্ত হয়েছেন ১ জন। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত আক্রান্ত ১৪৬১ জন। যার মধ্যে ১০৩১ জনই বেসরকারি হাসপাতলে বা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত এ রোগে ২ জনের মৃত্যু ঘটেছে।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এবং অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, ডেঙ্গুর এ তথ্য সামগ্রিক নয়। কারণ রাজধানীসহ দেশের অনেক হাসপাতাল থেকে আমাদের নিয়মিত তথ্য পাঠায় না।
সামগ্রিক বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. সানিয়া তাহমিনা বলেন, তীব্র গরমের কারণে ভাইরাসজনিত রোগব্যাধির সংক্রমণ বেড়েছে। তবে এতে চিন্তিত হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বলেছেন, এবার ডেঙ্গুর সঙ্গে ইনফ্লুয়েঞ্জা দেখা দিলেও এখন পর্যন্ত চিকুনগুনিয়ার কোনো তথ্য আমরা পাইনি। ডেঙ্গুর তথ্যের বিষয়ে তিনি বলেন, অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পক্ষ থেকে রাজধানীসহ দেশের সব বড় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালকে নিয়মিত তথ্য প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানই সেটি মানছে না।
তবে বারবার নির্দেশনা দেয়ার পরও যারা তথ্য পাঠাবে না, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
Leave a reply