তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ গোপন ভিডিও ফাঁস হয়ে যাওয়ায় আবারও সমালোচনার মুখে ফিলিপাইনের মাদক বিরোধী অভিযান। গত মাসে ম্যানিলায় নিরাপত্তা বাহিনীর সাথে গুলিতে প্রাণ যায় ৩ মাদক ব্যবসায়ীর। পুলিশ তখন দাবি করেছিলো, আত্মরক্ষার্থে গুলি করেছিলো নিরাপত্তা বাহিনী। কিন্তু ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, আত্মরক্ষা নয়, বরং ঠান্ডা মাথায় আয়োজন করে গুলি করা হয় ওই ব্যক্তিদের। ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ভিডিওতে দেখা যায়, ম্যানিলার বারাঙ্গে-১৯ এলাকায় ব্যস্ত এক বাজারে লোকজন হাঁটাচলা করছেন। এর মধ্যেই হঠাৎ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়। সবাই যারযার মতো পথ খুঁজতে থাকে স্থানত্যাগের। অল্পক্ষণের মধ্যে ক্যামেরার র্যাঞ্জে আবির্ভূত হন কয়েকজন অস্ত্রধারী ব্যক্তি। গায়ে তাদের বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট। বাজারের একটি কোণা থেকে জনসাধারণকে মূহুর্তেই সরিয়ে দেয় তারা।
কিছুক্ষণ পায়চারি করে নিশ্চিত হয় কোনো লোক বা ক্যামেরা ঘটনাস্থলে নেই। এরপর একটি গলির আড়ালে নিয়ে গুলি করা হয় এক ব্যক্তিকে, যা ধরা পড়ে সিসি ক্যামেরায়। একইভাবে গুলি করা হয় আরও দুজনকে। গুলিবিদ্ধ তিন লাশ টেনে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও ধরা পড়ে। আরও দেখা যায় গুলি করার সময় এক পুলিশ সদস্য একটি সিসি ক্যামেরা ঘুরিয়ে দিচ্ছেন।
বারাঙ্গের এই ঘটনাকে ম্যানিলা পুলিশ বন্দুকযুদ্ধ বলে চালিয়ে দিয়েছিলো। বলেছিলো, আত্মরক্ষার্থেই গুলি করতে হয়েছিলো তাদের। যদিও ভিডিও বলছে অন্য কথা।
গত বছর জুনে ক্ষমতায় আসেন ফিলিপিনো রাজনীতির মাচো ম্যানখ্যাত রদ্রিগো দুতের্তে। শপথ নিয়েই ঘোষণা দেন যেকোনো মূল্যে দেশ থেকে শক্তিশালী মাদকচক্রকে উৎখাত করবেন।
গঠন করা হয় মাদক বিরোধী বিশেষ টাস্ক ফোর্স। বারাঙ্গে-১৯ এ গত ১১ অক্টোবরের ওই বন্দুকযুদ্ধের সিসিটিভি ফুটেজের ভিত্তিতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনের পর ফের ঝড় উঠেছে বিশেষ এই বাহিনীর কাজের বৈধতা নিয়ে। শুরুতে এমন অভিযান আর তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধ গোপনে চালানো হলেও এখন তা চলে অনেকটাই প্রকাশ্যেই।
এ বিষয়ে ফিলিপাইনের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার এক কর্মকতা গোয়েন্ডেলেন পেমেল্টাল্গানা বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, আত্মরক্ষায় তারা গুলি করছে। এখন প্রশ্ন হলো প্রত্যেকটাই অভিযানেই কি তাদের ওপর হামলা হয়? নইলে গ্রেফতার বা আটকের ঘটনা নেই কেন?
সরকারি হিসেবেই গত ১৭ মাসে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণ গেছে প্রায় চার হাজার মানুষের। যদিও মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে এ সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার। অভিযানের সময় মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর ৮৫ সদস্যও নিহত হয়েছেন বলে দাবি ফিলিপাইন পুলিশের।
দেশটির পুলিশের মুখপাত্র দিওনার্দো কার্লোস বলেন, আক্রান্ত না হলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কখনই আগ্রাসী রূপ ধারণ করবে না। যাই করা হচ্ছে আইন মেনেই করা হচ্ছে। আগের চেয়ে ফিলিপাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অনেক ভালো, অপরাধের মাত্রা এখন সবচেয়ে কম।
মাদক পাচারের অন্যতম বড় রুট হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে ফিলিপাইনকে। মূলত চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, কম্বোডিয়া এবং মালয়েশিয়া থেকে মাদক এনে তা প্রক্রিয়াজাত করে পাঠানো হয় পশ্চিমা বিশ্বে।
https://www.facebook.com/JamunaTelevision/videos/1511315582297631/
Leave a reply