খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়িতে গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে চেঙ্গী ও মাইনী নদীসহ স্থানীয় ছড়া-খালের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩৮টিরও বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবারের কয়েক হাজার মানুষ। বন্ধ আছে দীঘিনালা-লংগদু সড়ক। খোলা হয়েছে ৪৫ টি আশ্রয় কেন্দ্র। সেখানে ঠাঁই নিয়েছে ৬শতাধিক পরিবার। এসব পরিবারের সদস্যদের খাবার, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে কাজ করছে প্রশাসন।
৫দিনের টানা বর্ষণে খাগড়াছড়ি জেলা সদরের গঞ্জপাড়া, মুসলিম পাড়া, বাঙ্গালকাঠি, শান্তিনগর পেরাছড়া, কালাডেবা, বটতলী ও ইসলামপুর প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৮শতাধিক পরিবার। এসব পরিবারের এলাকার প্রায় ৬শতাধিক লোক আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন গেলো সোমবার দুপুর থেকে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় জেলা সদরে খোলা হয় ১০টি আশ্রয় কেন্দ্র। এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ পানিবন্দী পরিবারের সদস্যরা সেসব আশ্রয় কেন্দ্রেই থাকছেন।
একইসাথে তাদের শুকনা খাবারের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন সবধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছে। আজ বুধবার দুপুরে জেলা সদরের মুসলিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ, শিশু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১০ টি আশ্রয় কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম। এসময় পানিবন্দী পরিবারের খোঁজ খবর নেন। তুলে দেন শুকনা খাবারের পাশাপাশি খিঁচুড়ি। একইসাথে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে প্লাবিত হওয়া এলাকার লোকজনদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে ট্যাবলেট ও পানির জার দেয়া হয়েছে।
এদিকে, টানা বর্ষণে নতুন করে প্লাবিত হয়েছে দীঘিনালা উপজেলার ৩০ টি গ্রাম। ২ শতাধিক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের পানিবন্দী পরিবারগুলো ১২ টি আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে বলে নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন।
এছাড়া দীঘিনালা-মেরুং সড়কের বড় মেরুং এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এলাকাটির সাথে দীঘিনালার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। একইসাথে বন্ধ রয়েছে দীঘিনালা-রাঙ্গামাটির লংগদু উপজেলার সড়ক যোগাযোগ। এছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা পরিবারদের শুকনা খাবারের পাশাপাশি খিঁচুড়ি বিতরণ করেছে সেনা জোন ও ইউনিয়ন পরিষদ। সার্বিকভাবে খোঁজ-খবর রাখছেন উপজেলা প্রশাসন।
এর আগে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) বিকালে জেলা সদরের শালবন এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ও উঁচু স্থানে ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী ৩০ পরিবারকে সেনা ও পুলিশের সহযোগিতায় অভিযান চালিয়ে স্থানীয় আশ্রয় কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও খাগড়াছড়ি পৌরসভার উদ্যোগে অভিযানের নেতৃত্ব দেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামসুন নাহার।
প্রশাসন সুত্রে জানানো হয়, টানা বর্ষণের কারণে পাহাড় ধসের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে। এরপরও অনেকে বসবাস করছেন। তাদের মধ্যে অধিক ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে চিহ্নিত করে ঘরে ঘরে গিয়ে জোরপূর্বক নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। যাতে করে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা না ঘটে। একই দিন সন্ধ্যায় দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়ায় পাহাড় ধসে একজনের মৃত্যু হয়। এর আগে শহরের মোল্লাপাড়া ও মাটিরাঙ্গা উপজেলার বাইল্যাছড়িতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে কোনধরণের হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম জানান, পানিবন্দী এলাকার লোকজনদের নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন নিশ্চিত করতে জেলায় ৪৫ হাজার ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে জেলা শহরের সবকটি আশ্রয় কেন্দ্র ও প্লাবিত এলাকায় প্রায় ৪ হাজার ট্যাবলেট দেয়া হয়েছে একইসাথে প্রয়োজন অনুসারে স্যানিটেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম জানান, যে কোন ধরণের দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। পানিবন্দী মানুষদের সাহায্যার্থে খাবারের পাশাপাশি ৫০ মেট্রিক টন চাউল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া দীঘিনালার বাবুছড়ায় পাহাড় ধসে নিহতের পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
Leave a reply