গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
গাইবান্ধায় সবকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। এরমধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তা, ব্রক্ষপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি। এরমধ্যে ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৪৬ সে. মি, তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৬ সে. মি এবং ঘাঘট নদীর পানি শহর পয়েন্টে ২২ সে. মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে করতোয়া নদীর পানি এখনো বিপদসীমার ১৮.২৭ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও যে কোন সময় তা বিপদসীমা অতিক্রমের আশষ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। অব্যহত পানি বৃদ্ধির জেলার চার উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নঞ্চলের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে অন্তত ২০ হাজার পরিবারের বসতভিটায় পানি ঢুকে পড়েছে।
এদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী বেষ্টিত সুন্দরগঞ্জের তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, কাপাসিয়া, শ্রীপুর, সদরের মোল্লারচর, কামারজানী, ফুলছড়ির উড়িয়া, উদাখালী, এরেন্ডাবাড়ী, ফজলুপুর, গজারিয়া, ফুলছড়ি এবং সাঘাটার ভরতখালী, সাঘাটা, হলদিয়া, জুমারবাড়ী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া নদীর তীরবর্তী নিম্নঞ্চলের আরও ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট, ধানের বিজ তলা, পাট, মরিচসহ বিভিন্ন ফসলের জমি। চরাঞ্চল ও নিম্নঞ্চলের প্রায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে অনন্ত ২০ হাজার পরিবারের বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। এতে চলাচলসহ গবাদি পশুর মধ্যে গরু, ছাগল ও হাঁস-মুরিগি নিয়ে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন মানুষরা।
অপরদিকে, পানি বৃদ্ধির ফলে নদী তীরবর্তী এলাকায় ব্যাপক নদী দেখা দিয়েছে ভাঙন। তিস্তার ভাঙনে সদর, সুন্দরগঞ্জ, ব্রক্ষপুত্রের ভাঙনে ফুলছড়ি ও যমুনা নদীর ভাঙনে সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে শতশত ঘরবাড়ি, মসজিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গাছ-পালাসহ ফসলি জমি। নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো আশ্রয় নিচ্ছে উচু জায়গাসহ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। ভিটেমাটি হারিয়ে আশ্রয় নেয়া অসহায় মানুষরা অনেকটা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘নদ-নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ব্রক্ষপুত্র নদের তিস্তামুখ ঘাটে পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪৬ সে. মি ও ঘাঘট নদীর শহর পয়েন্টে পানি বেড়ে বিপদসীমার ২২ সে. মি এব তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে ১৬ সে. মি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া করতোয়া নদীর পানি কাটাখালি পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮.২৭ সে. মি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানির চাপে নদী ভাঙন কবলিত এলাকাতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ মেরামতেও কাজ চলমান রয়েছে। তবে বৃষ্টি আর উজানের ঢল না আসলে দ্রুতই নদ-নদীর পানি কমবে।
এ বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন বলেন, ‘নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চল ও নিম্নঞ্চলের কিছু কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে পানিবন্দি পরিবার ও মানুষের সংখ্যা নির্ধারণ কাজ করা হচ্ছে। শনিবার দুপুর থেকেই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া বন্যা মোকাবেলায় সকল ধরণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মারাত্বক হবেনা এজন্য সকলে সতর্ক ও আতষ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে’।
Leave a reply