গাইবান্ধায় পানিবন্দি আড়াই লাখ মানুষ একজনের মৃত্যু

|

গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে জেলার সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের চরাঞ্চল ও নিম্নঞ্চলের ২১৩টি গ্রামের দুই লাখ ৫৪ হাজার মানুষ। তবে সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় আছেন সাঘাটা উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নঞ্চলের ৬৫টি এলাকার ৮৯ হাজার মানুষ।

এদিকে সোমবার বিকেলে সুন্দরগঞ্জে বন্যার পানিতে ডুবে আনারুল ইসলাম (৩২) নামে এক যুবকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি হরিপুর ইউনিয়নের গেন্দুরাম গ্রামের দুলা মিয়ার ছেলে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চেয়ারম্যান নাফিউল ইসলাম জিমি।

বন্যার পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার বসতবাড়ি ও ১২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ভেসে গেছে প্রায় তিন শতাধিক পুকুরের মাছ। এছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁচাপাকা রাস্তা ব্রিজ-কালভার্ট। পানিবন্দি অধিকাংশ মানুষ তাদের ঘরবাড়ি, গবাদি পশু নিয়ে আশেপাশের উচু জায়গা, বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধসহ আশ্রয় কেন্দ্রে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।

টানা পাঁচদিন ধরে দুর্গত এলাকার অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু আশ্রয় নেয়া মানুষসহ দুর্গত এলাকার মানুষদের মধ্যে খাদ্য সংকট ও বিশুদ্ধ পানির অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে দুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে অনেকটা দুর্ভোগ বাড়ছে। এছাড়া গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে আরও বেশি বিপাকে পড়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষরা। তাদের অভিযোগ, অনেকের ঘরে খাবার যা ছিল তা শেষ হয়েছে। এখন খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। অথচ দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবারসহ ত্রাণ তৎপরতা অব্যহত থাকলেও তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তাই দুর্গত এলাকার মানুষের জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানান তারা।

এদিকে, নদ-নদীর পানির প্রবল চাপে বন্যা নিয়স্ত্রণ বাঁধগুলো ক্রমেই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গত দুইদিনে অন্তত ছয়টি জায়গায় বাঁধের ধ্বস নেমেছে। এরমধ্যে ফুলছড়ির কাতলামারী, সদরের গিদারীর বাগুড়িয়া এলাকায় ব্রক্ষপুত্র নদের বাঁধ ও ঘাঘট নদীর শহর রক্ষা বাঁধের খোলাহাটির ফকিরপাড়া, সোনাইল ও কুটিপাড়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায়। মুর্হুতে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় আশপাশের অন্তত ৩০টি গ্রাম। এতে প্রতিদিনেই পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলছে। এছাড়া সিংড়া, রতনপুর, কামারজানি, বেলকা ও কাপাসিয়া এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের একাধিক জায়গায় বড় বড় গর্ত, ফাটলসহ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। যে কোন সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্কে পড়েছেন আশপাশ এলাকার হাজার হাজার মানুষ।

তবে বাঁধের ভেঙে যাওয়া অংশে বালু বস্তা ফেলে সংস্কারের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘বাঁধের ধ্বসে যাওয়া অংশে জিও ব্যাগ ফেলে মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে। এছাড়া ভাঙন ঠেকাতে ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের অংশগুলোতেও কাজ চলছে। ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজনের সঙ্গে স্বেচ্ছাশ্রম দিচ্ছেন স্থানীয়রাও। সবকটি বাঁধের পুরো এলাকাজুড়ে নজরদারি ও সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা’।

অপরদিকে, নিম্নঞ্চল, চরাঞ্চল ও নদী বেষ্টিত চারটি উপজেলার বির্স্তীন এলাকায় পানি ঢুকে পড়ায় ২৪৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা এবং বন্যার্ত মানুষের আশ্রয় স্থানের কথা চিন্তা করেই স্কুলগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তাছাড়া বন্যার পানিতে প্রায় শতাধিক প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরেই মধ্যে ফুলছড়ি ও সদরে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে পাঠদান বন্ধ থাকা উচু এলাকার ১১৫টি বিদ্যালয়ে আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৬০টি বিদ্যালয়ের আশ্রয় কেন্দ্রে ৪২ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হোসেন আলী।

পানিবন্দি মানুষদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা অব্যহত রেখেছে জেলা প্রশাসন। গত শুক্রবার থেকে সোমবার পর্যন্ত বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর জন্য ৪০০ মেট্রিকটন চাল, নগদ ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়েছে । এছাড়া নতুন করে বন্যা দুর্গত মানুষদের তালিকা তৈরী করে ত্রাণ সহায়তার জন্য আরও ৭৫০ মেট্রিকটন চাল ও সাড়ে দশ লাখ টাকা এবং পাঁচ হাজার শুকনো খাবার প্যাকেটের চাহিদা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানান গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) রোকসানা বেগম।

বন্যার্ত মানুষের চিকিৎসা সহায়তা দেয়ার জন্য চার উপজেলায় ১০০টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রত্যেকটি টিম বন্যা কবলিত এলাকা এবং আশ্রয়স্থানগুলোতে চিকিৎসা সেবা প্রয়োজনীয় ঔষধ ও খাবার স্যালাইন বিতরণ করছে বলে জানান গাইবান্ধা সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply