ঠোঁট কাটা বলেই কি রাস্তায় ফেলে দেয়া হলো নবজাতকটিকে?

|

রাত সাড়ে নয়টা হবে তখন। নিজের অফিস থেকে রাজধানীর বাসাবো এলাকার বাসায় ফিরেছেন ইমা। এমন সময় পাশের ফ্ল্যাটের পরিচিত এক ছেলে এসে দরজায় কলিংবেল টিপলো। ইমা বের হয়ে এলে ছেলেটি তাকে জানালো, বাসার গেটের বাইরে রাস্তার পাশে একটা বাচ্চা পড়ে আছে! লোকজন জড়ো হয়েছে। বাচ্চাটা কাঁদছে।

দ্রুত নিচে যান ইমা। গিয়ে দেখেন বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ কাপড়ের ছোট একটা স্তুপের ছবি তোলা নিয়ে ব্যস্ত। একটু এগিয়ে দেখলেন কাপড়টির মধ্যে পেচানো অবস্থা একটা ফুটফুটে শিশু। হাত-পা ছুঁড়ছে। মাঝে মাঝে কাঁদছে।

“কী করবেন ভেবে পাচ্ছিলাম না। কেউ বাচ্চাটাকে কোলে নিচ্ছে না। সবাই ছবি তুলছে। তখন মনো হলো বাচ্চাটাকে এভাবে রাখা যাবে না। তাই কোলে তুলে নিলাম”, যমুনা টিভির ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে বললেন ইমা।

তিনি জানান, তখনই ৯৯৯-এ কল করলাম। তখন কিছুটা ভয় হচ্ছিল। বাচ্চাটার উপরের ঠোঁট জন্মগতভাবে কাটা। এটা দেখে ভয় বেড়েছিলো। যদি অসুস্থ হয় আর হাসপাতালে নেয়ার আগে আমার কাছেই মারা যায়! তাহলে তো সমস্যায় পড়তে হতে পারে। অবশ্য কয়েক মিনিটের মধ্যে সবুজবাগ থানার এসআই জিয়া এসে পৌঁছালেন। এরপর তার সহায়তায় বাচ্চাটিকে নিয়ে গেলাম ঢাকা মেডিকেলে।”

হাসপাতালে বাচ্চাটিকে অজ্ঞাত হিসেবে ভর্তি করা হয়। এরপর সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের শিশু সদন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তার চিকিৎসা শুরু হয়। বর্তমানে শিশু বিভাগে চিকিৎসাধীন আছে নবজাতক।

হাসপাতালে ভর্তির পর ইমা বাচ্চাটির ভিডিও ও ছবি তুলেন। কিছু ছবি দিয়েছেন যমুনা টিভিকে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাচ্চাটির ঠোঁট জন্মগতভাবে কাটা।

ইমা বুধবার রাতে জানান, সকাল থেকে অফিস থাকায় হাসপাতালে যাওয়া হয়নি। তবে তিনি সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যারা বাচ্চাটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন তাদের কাছ থেকে জেনেছেন সে এখন ভালো আছে।

ঢাকা মেডিকেলের শিশু ওয়ার্ডের দায়িত্বরত ডাক্তার হাবিবা বুধবার রাতে জানান, বাচ্চাটির অবস্থা এখন ভালো। খাবার খাচ্ছে। তার কোনো অভিভাবককে পাওয়া গেছে কিনা সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাতে পারেননি।

এসআই জিয়া জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হয়েছে বাচ্চাটির আইনি কোনো অভিভাবককে খোঁজে পাওয়া যায় কিনা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কাউকে পাওয়া যায়নি।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply