Site icon Jamuna Television

সেতুর অনিয়ম নিয়ে নিউজ করায় যুগান্তরের চাটমোহর প্রতিনিধিকে হুমকি

পাবনা প্রতিনিধি:

সেতু নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির নিউজ করার জন্য বক্তব্য নেওয়ার পর যুগান্তরের চাটমোহর উপজেলা প্রতিনিধি পবিত্র তালুকদারকে হুমকি দিলেন সিরাজুল ইসলাম নামে এক ঠিকাদার। মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে উপজেলার পরিষদের হলরুমের সামনে তিনি প্রকাশ্যে এ হুমকিসহ নানা ধরণের ভয়ভীতি দেখান। এ সময় পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আবু হায়াত মোহাম্মদ কামাল জুয়েলসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের সেতু/কালভার্ট শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫ লাখ ৭৪ হাজার ৬৭৯ টাকা ব্যয়ে শ্রীদাস খালি-রাউৎকান্দি রাস্তায় জাফরের জমির সামনে ৩২ ফুট দৈর্ঘ্যের সেতু/কালভার্ট নির্মাণের কাজ পায় সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর উপজেলার মেসার্স সাজেদা এন্ড আতাহার নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি তারা চাটমোহরের স্থানীয় ঠিকাদার মো. সিরাজুল ইসলামকে দিয়ে সম্পন্ন করায়।

শুরুতে এলাকাবাসী নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলে এর প্রতিবাদ জানালেও ঠিকাদারের লোকজন তাদের মতো করে কাজ চালিয়ে যান। এরপর ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. নুরুজ্জামান নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে সেতু নির্মাণের অভিযোগ এনে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়। এরপর যুগান্তরের চাটমোহর উপজেলা প্রতিনিধি পবিত্র তালুকদারসহ স্থানীয় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকার মানুষের সাথে কথা বলে এর সত্যতা পান।

পরে সাংবাদিক পবিত্র তালুকদার সংবাদ লেখার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কথা বলার পর রোববার বিকেলে ঠিকাদার মো. সিরাজুল ইসলামের মোবাইলে ফোন দিয়ে অভিযোগের ব্যাপারে তার বক্তব্য নেন। এরপর যুগান্তরে সংবাদটি প্রকাশ না হলেও অন্যান্য পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হলে ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম ক্ষিপ্ত হয়ে মঙ্গলবার সকালে উপজেলা পরিষদের হলরুমের সামনে সাংবাদিক পবিত্র তালুকদারকে হুমকিসহ নানা ভয়ভীতি দেখান।

এ সময় ঠিকাদার সিরাজুল ইসলাম প্রথমে গালি দেন (যা প্রকাশ যোগ্য নয়)। পরে তিনি বলেন, ‘দুই লাখ টাকার গাড়িতে চড়েন, কয় টাকার বেতনের চাকরি করেন, তুমি আমারটা নিয়ে চিন্তা করিস কেন? কাজটা ঠিক করেন নি। আপনি বহুত খেলতিছ্যান, খেলাটা বাদ দেন। খেলোয়াড় কিন্তু আরও আছে। দুই কলম লেখাপড়া শিখে এসে সাংবাদিক সাজিছেন নাকি? সাংবাদিক ছুটাবোনে তোমার। বেশি বেয়াদবি করো না। মাত্রা বেড়ে গেছে কিন্তু। লিডার হইছ্যাও। লিডার ছুটাবোনে।’

পরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং অপর ঠিকাদার কেরামত আলী কাজল হুমকি দাতা ঠিকাদার সিরাজুল ইসলামের সাথে বসে বিষয়টি মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে চলে যান।

এদিকে এ ঘটনার পর তাতক্ষণিক সাংবাদিক পবিত্র তালুকদার বিষয়টি চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি রকিবুর রহমান টুকুন, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জিত সাহা কিংশুককে জানালে তারাসহ প্রেসক্লাবের অন্যান্য সদস্যরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। এদিকে এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সাংবাদিক পবিত্র তালুকদার চাটমোহর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

ঘটনার ব্যাপারে চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি রকিবুর রহমান টুকুন বলেন, ‘সরকারের উন্নয়নকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এক শ্রেণীর অসাধু মানুষ নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করছে। সংবাদকর্মীরা এই বিষয়গুলো তুলে ধরার চেষ্টা করলেই নানা ধরণের হুমকি-ধামকি দেয়া হচ্ছে। যা মোটেই কাম্য নয়। আমরা এই ঘটনার প্রতিকার চাই।’

Exit mobile version