স্টাফ রিপোর্টার, নেত্রকোণা:
গলাকাটা আতঙ্ক এখন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এ ভয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে আসা যাওয়াও অনেক কমে গেছে। কিন্তু ব্লেড দিয়ে হাতের তালু কেটে গলা কেটে নেয়ার নাটক সাজাতে গিয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ল কেন্দুয়ায় তানিম নামের এক কিশোর।
এ ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাতে নেত্রকোণা কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের পেরীর চর গ্রামে। তানিম সান্দিকোনা বাজারের সানরাইজ কিন্ডার গার্টেনের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্র বলে পুলিশকে জানায়।
তার বাড়ি নেত্রকোণা জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার গাজিপুর গ্রামে। তানিমের বাবার নাম গোলাপ মিয়া। তিন বছর আগে সান্দিকোনার পেরীর চর গ্রামের খালার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করার জন্য আসে। তার খালার নাম সেলিনা আক্তার এবং খালুর নাম নাজিম উদ্দিন।
কেন্দুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাশেদুজ্জামান জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে বিভিন্ন মোবাইল থেকে ফোন আসে সান্দিকোনা ইউনিয়নের পেরীরচর গ্রামে একটি ছেলের মুখে অজ্ঞানের স্প্রে দিয়ে তাকে উঠিয়ে নিয়ে বাড়ির পাশে নির্জন রাস্তায় গলাকাটার উদ্দেশ্যে আঘাত করে ফেলে রেখে যায় দূর্বৃত্তরা। তাকে মুমূর্ষ অবস্থায় স্বজনরা কেন্দুয়া উপজেলা আদমপুর হাসপাতালে ভর্তি করেছে।
এ খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যায় পুলিশ। হাসপাতালে গিয়ে তানিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে একেক সময় একেক রকম তথ্য প্রদান করতে থাকে। বিষয়টি নেত্রকোণার পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়াকে অবগত করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেন্দুয়া থানার ওসিকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে ও ঘটনাস্থলে যান। হাসপাতালে গিয়ে তানিমের বক্তব্যে সন্দেহ হলে পেরীর চর গ্রামে গিয়েও ঘটনাস্থলের আশেপাশে ও বাড়ির লোকজনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
তানিমের খালার বাড়িতে তার পড়ার টেবিলের ওপর থেকে একটি রক্তমাখা সার্ফ ব্লেড উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশের সন্দেহ হলে তানিমকে নিয়ে থানায় আসে। থানায় আনার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সে পুলিশকে জানায়, তার খালা এবং খালুর পরামর্শে গলাকাটা গুজব রটাতে সে এরকম ঘটনা সাজায়। এ ঘটনাটি এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
সান্দিকোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম জানান, গলাকাটার নাটক সাজাতে এরকম একটি বানোয়াট ঘটনা প্রচার করা হচ্ছে। কেন তারা এমনটি করেছে এ বিষয়ে তিনি বলেন, পুলিশের তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে।
নেত্রকোণার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিক তদন্তে বেড়িয়ে এসেছে তানিমকে দিয়ে গলাকাটার গুজব ছড়াতেই এরকম একটি ঘটনা সাজানো হয়েছিল। এ বিষয়ে আরো তদন্ত চলছে, ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বুধবার দুপুরে নেত্রকোণা জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী জানান, এই ঘটনার পিছনে কারো মদদ আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদি কেউ থেকে থাকে তবে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
Leave a reply