ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ভোট দিতে এসে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার পৌর মেয়রের হাতে মার খেলেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যরা। এর থেকে বাদ যাননি প্রতিদ্বন্ধী এক প্রার্থী ও তার পরিবারের সদস্যরাও।
বৃহস্পতিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য নির্বাচনে আখাউড়া উপজেলা পরিষদ মিলনায়তন কেন্দ্রে এই ঘটনা ঘটে।
বিকেলে হামলায় আহত চেয়ারম্যান ও সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন বাতিল করার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে তার সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রটি দখল করে রাখেন। প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করেন। এতে আপত্তি করায় হামলা চালিয়ে মারধর করা হয় ভোটারদের (ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য)। ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কাশেম ভূইয়া গত ৩১শে মার্চ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় পদটি খালি হয়। বৃহস্পতিবার এই পদে উপ-নির্বাচন হয়। বিজয়নগর উপজেলার সিংগারবিল (দক্ষিণ), বিষ্ণুপুর, পাহাড়পুর ও আখাউড়া উপজেলার মোগড়া, আখাউড়া উত্তর, আখাউড়া দক্ষিণ ও আখাউড়া পৌরসভা নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। ভোটার ৯৩ (মেয়র, কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান ও সদস্য) জন। মোহাম্মদ আলী ভূইয়া (তালা প্রতীক) ও এ কে এম আতাউর রহমান (হাতি) নামে দুই প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এই পদে।
ভোটাররা অভিযোগ করেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র কাজল হাতি প্রতীকের আতাউর রহমানের পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট নেয়ার ঘোষণা দিয়ে কেন্দ্রের ভেতরে তার সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে ভোটের শুরুতে অবস্থান নেন। ভোটারদের প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বিজয়নগর উপজেলার ৪১ জন ভোটার ভোট দিতে গেলে প্রকাশ্যে হাতিতে ভোট দিতে বলেন মেয়র কাজল। এতে রাজি না হওয়ায় মেয়র দলবল নিয়ে তাদের ওপর চড়াও হন। লাঞ্ছিত করেন ও তাদের সবাইকে পেটান। এই হামলায় আহত হন ৩ জন চেয়ারম্যান ও ৫ জন সদস্য। তারা হচ্ছেন সিংগারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ভূইয়া, বিষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন ভূইয়া ও পাহাড়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, সিংগারবিল ইউপি সদস্য মামুন চৌধুরী, বাচ্চু মিয়া, জালাল উদ্দিন,ফাতেমা বেগম ও কাকলী। তারা জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে তারা হামলার ঘটনার বর্ননা দেন।
পাহাড়পুর ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন ভোট দিতে কেন্দ্রে প্রবেশ করার পরই হাতি ব্যাতীত ভোট দেয়া যাবে না বলে জানান কাজল। হাতিতে ভোট না দিলে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমার সাথে এর প্রতিবাদ করায় মেয়র সিংগারবিল ইউপি চেয়ারম্যান মনিরুলকে গলাধাক্কা দিয়ে কেন্দ্র থেকে বের করে দেন। পরে তার লোকজন কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তাদের হামলায় আমাদের ভোটাররা ছুটে পালান। মনিরুল ও আজাদ বলেন আমরা আওয়ামী লীগ করি। প্রার্থী দুজনও এই দলেরই। এখানে দল থেকে কেউ মনোনীত ছিল না। তারা বলেন হামলার শিকার হয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিনা আক্তারের কাছে গিয়ে অভিযোগ করি। কিন্তু তিনি নির্বাচনের কোনো দায়িত্বে নেই জানিয়ে আমাদের নিরাপত্তা দিতে আপারগতা প্রকাশ করেন। এই ঘটনার সময় পুলিশ ও প্রশাসন উপস্থিত থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। সদস্য পদ প্রার্থী মোহাম্মদ আলী ভূইয়াও ভোট চলাকালে প্রকাশ্যে ভোট দেয়ার প্রতিবাদ করায় মেয়র কাজল ও তার লোকজনের হামলার শিকার হন। মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী শামছুন্নাহার বেগমকেও মারধোর করা হয়।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা অভিযোগ করেছেন আখাউড়া পৌরসভার মেয়র তাকজিল খলিফা কাজল। তার দাবি, অভিযোগকারীরা উদ্দেশ্য মূলক ভাবে কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছেন।
এই বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেনপ্রার্থী মোহাম্মদ আলী ভূইয়া। এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত উদদৌলা খান সাংবাদিকদের জানান তিনি নির্বাচন কমিশনে বিষয়টি জানাবেন।
Leave a reply