ডেঙ্গু রাজার মনটা বেশিই খারাপ আজ। নানা রকম মশক সঙ্গীত, ব্লাডি কোল্ড ড্রিংকস কিংবা কীটং নৃত্য দেখেও তার মনটা ভালো হচ্ছে না। আর হবেই বা কি করে বলুন, যে সমস্যা কারণে রাজামশাইয়ের মনটা খারাপ সেটারই তো কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তবে এটা যেনতেন সমস্যা নয়, মশাদের ভাষায় “মশকতর” (গুরুতর) সমস্যা!
“ভুংভাং” শহরে মাস চারেক হলো সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে আস্তানা গেড়েছেন ডেঙ্গু রাজা। ইনি আবার প্রকরণে “মোবাইল রাজা” মানে ভ্রাম্যমাণ রাজা আরকি। বেশি দিন এক জায়গায় স্থায়ী হন না। ভ্রমণের উপরেই থাকেন। তার ভাষায়- মায়া বড় কঠিন জিনিস, এক জায়গায় বেশিদিন থাকলে মায়া শিকড় গাড়ে। তাই রোগ বিস্তারে শিকড়বাদী হলেও নিজ ক্ষেত্রে শিকড়বিরোধী এই রাজা নানান জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পছন্দ করেন।
যাই হোক, যে কথা বলছিলাম। “ভুংভাং” শহরে ডেঙ্গু রাজার কাজকর্ম ভালোই চলছে। পারফরম্যান্স ‘আপ টু দা মার্ক’ যাকে বলা চলে। সমানে মানুষ কামড়ে চলেছে তার দল। বহাল তবিয়তে ডেঙ্গু ছড়িয়ে যাচ্ছেন। একেবারে ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থা। শহর জুড়ে আতঙ্ক, সবখানে তার নাম। অফিস আদালত, হাসপাতাল, পাড়া মহল্লা, অলি গলিতে, পেপার পত্রিকা, টিভিতে, নেট দুনিয়ায় কোথাও বাদ নেই, সবখানে তার নাম জপছে সবাই। মানুষও মরছে দেদারসে। “পাল্টা উল্টা” দেশের মহা মহা ব্যাক্তিদেরও কামড়াতে ছাড়েনি ডেঙ্গু রাজার সাঙ্গপাঙ্গরা। শহরের প্রেমিকরা প্রেমিকার নামও অতবার নেয় না, যতবার ডেঙ্গুর নাম নেয়!
এত খ্যাতির পরও মনে শান্তি নেই ডেঙ্গু রাজার। রাজার আবার একটু যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব পছন্দ। কিন্তু এই “ভুংভাং” শহরে এসে উনি সেটা পাচ্ছেন না। শহরকর্তা তার বাহিনীকে মারার তেমন ভালো চেষ্টাও করে না, ভুয়া ওষুধে মারতেও পারে না। সব জায়গায় ডেঙ্গু রাজার উইন সিচুয়েশন। কই ডেঙ্গু বাহিনীর ওপর সাঁড়াশি অভিযান আসবে, একটা এসপার-ওসপার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে; জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধ যেইটারে বলে আরকি। নাহ, এইখানে সেরকম হচ্ছেই না। কামড়াকামড়ির অবারিত সুযোগ। আজব শহর! মানুষ মরে ডজনে ডজনে তবু কর্তাগো হুঁশ নাই। এমন সুযোগ অন্য কোন শহরে পাইছিল কিনা, ডেঙ্গু রাজা মনে করতে পারলো না। এহেন কাণ্ডে শহরকর্তার মনের অবস্থা না জানলেও বিনাযুদ্ধে নিজেরে খুব বেহায়া লাগতাছে রাজা মশাইয়ের!
কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও “মশকতর” (গুরুতর) কারণটার জন্য ডেঙ্গু রাজার মনটা বেশিই খারাপ। যার কথা শুরুতে বলছিলাম। রাজার বাহিনী মারণে যখন শহর কর্তার জারিজুরি নাই, তখন ডেঙ্গু রাজার মনে একখান খায়েশ হইছে। “ভুংভাং” শহরের এহেন নাজেহাল পরিস্থিতিতে এই খায়েশটা খুব বেশি স্পর্ধার না, স্বাভাবিকই বলা যায়। ডেঙ্গু রাজার খায়েশটা হইলো, দেরি না কইরা শহরকর্তার ঘাড়ে যদি কুট্টুস কইরা একটা ডেঙ্গু কামড় দেওন যাইতো! ইশ, তাইলেই কারবার সারা! দেখা যাইতো খেলা কারে কয়। যুদ্ধ লাগতে আর বাকি থাকতো না। টনে টনে ওষুধ মাইরা শহরে মশার ওষুধের বন্যা হইয়া যাইতো।
ডেঙ্গু রাজা পায়ের তালু ঘইশা কয়, ইশ খালি একটা কামুড়! একজনমের স্বাদ, আহারে!
নাহ, তা আর হইলো কই। তাই, ডেঙ্গু রাজার মনটা বেশিই খারাপ। মশারা যা ভাবে সর্বদা তা হয় না।
“পু-ক্রিং” “পুউউ-ক্রিং” “পুউউউ-ক্রিং ক্রিং”!
অসময়ে আবার মশক ফোনটা বাইজা উঠলো কেন?
অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিরক্তি নিয়া ফোন ধরলো ডেঙ্গু রাজা। ওপাশ থেকে কি বলছে কে জানে, কিন্তু রাজার চোখ তো খুঁশিতে চকচক করতাছে। ফোন রেখেই, রাজা পায়ে তালি বাজিয়ে হাক দিল, মশালোগ তালিয়া বাজাও। মশক সঙ্গীত ধরো। আজ সারারাত ফুর্তি হবে, কামতো ঘইটা গেছে। শহরকর্তার ঘাড়ে একখান কামড় তো বইসা গেছে। খেলাতো শুরু হইয়া যাইবো। ওরে কে কোথায় আছিস ” আমারে এক প্যাগ ব্লাড মেরি দে…”।
রম্য গল্পটি লিখেছেন- ইব্রাহিম খলিল।
Leave a reply