বাংলাদেশের গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ২০১৬ সালের নভেম্বরে সাঁওতালদের একটি পল্লীতে হামলার ঘটনায় ৯০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তা প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করছেন সাঁওতালরা।
বিক্ষোভকারী সাঁওতালদের কয়েকজন বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, পুলিশের চার্জশীটে মূল আসামীদের বাদ দেওয়া ও পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি উঠে না আসার প্রতিবাদে তারা গোবিন্দগঞ্জে রাস্তা অবরোধ করেছেন।
সাঁওতালদের একটি সংগঠন, ভূমি উদ্ধার সমিতির সভাপতি সিলিমন বাসকে অভিযোগ করেন, “সেসময় ঐ ঘটনার পেছনে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের একজন নেতা জড়িত ছিলেন – যার নাম উঠে আসেনি পিবিআইয়ের তদন্তে।”
ক্ষমতাসীন দল অবশ্য শুরু থেকেই ঐ ঘটনার সাথে তাদের কোন প্রকার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
“ঘটনার সময় ছবি ও ভিডিওর মাধ্যমে সারা পৃথিবী দেখেছে যে পুলিশই আগুন লাগিয়েছে। তারপরও পিবিআইয়ের তদন্তে পুলিশের জড়িত থাকার বিষয়টি না আসা দু:খজনক।”
তবে পিবিআইয়ের তদন্তে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে তারা।
পিবিআইয়ের গাইবান্ধা জেলার অতিরিক্ত এসএসপি আবদুল হাই সরকার বিবিসিকে জানান, “ঐ ঘটনায় জেলা পুলিশের একজন অতিরিক্ত এসপি’র নেতৃত্বে পরিচালিত বিভাগীয় তদন্ত এবং বিচার বিভাগীয় তদন্তের প্রতিবেদনে পাওয়া তথ্যের সাথে পিবিআইয়ের তদন্তের পাওয়া তথ্যের মিল রয়েছে।”
“তাদের তদন্তেও ঐ ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি, এবং আমাদের তদন্তেও আমরা পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাইনি।”
যদিও ঘটনার পরপরই অভিযোগ ওঠে যে পুলিশের উপস্থিতিতেই একটি বিরোধপূর্ণ জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের সময় তাদের ঘরবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়। এরকম একটি ভিডিও তখন সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছিল।
এমনকি ঘটনার কয়েকদিন পর বিচার বিভাগীয় এবং পুলিশের বিভাগীয় তদন্তেও উঠে আসে যে ঐ ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে -এমন খবর সেসময় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল।
ঐ ঘটনায় কয়েকজন সাঁওতাল নিহত হন এবং অন্তত কুড়িজন সাঁওতাল আহত হন।
কী ঘটেছিল সেসময়?
২০১৬ সালের ৬ই নভেম্বর গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের চিনিকলের বিরোধপূর্ণ জায়গা থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদের সময় স্থানীয়দের সাথে সাঁওতালদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সেসময় আল জাজিরা টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদন প্রচারিত হয়, যার ভিডিওতে দেখা যায় সাঁওতালদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ হচ্ছে। সাঁওতালদের বসতির পাশেই দাঁড়িয়ে পুলিশকে গুলি এবং কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে দেখা যায় ঐ ভিডিওতে।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে তাদেরই মধ্য থেকে মাথায় হেলমেট এবং বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পড়া একজন পুলিশ সদস্য সাঁওতালদের বাঁশ এবং ছনের তৈরি ঘরের কাছে গিয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা যায়।
ভিডিওতে পুলিশকে আগুন দিতে দেখা গেলেও ঐ অভিযোগ শুরুতে অস্বীকার করে আসছিল তারা।
পরে আদালত ঐ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেয়।
সেসময় হওয়া বিচার বিভাগীয় তদন্তে পুলিশের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বলে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
পরে মার্চ মাসে পুলিশের বিভাগীয় তদন্তেও উঠে আসে যে ‘আগুন লাগানোর ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে’।
পুলিশ মহাপরিদর্শকের পক্ষ থেকে আদালতে দাখিল করা একটি প্রতিবেদনে সরাসরি আগুন লাগানোর সাথে জড়িত থাকায় দুইজন পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে উঠে আসে।
ঐ প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার দিন দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৫৮ জন সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
শুরুতে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ঐ ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকলেও বিচার বিভাগীয় তদন্ত শুরু হওয়ার পর তারা তদন্ত কাজ বন্ধ রাখে।
এরপর তদন্তের দায়িত্ব আসে পিবিআইয়ের ওপর – প্রায় আড়াই বছর তদন্তের পর রবিবার তারা ৯০ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
Leave a reply