টাইগারদের বিপক্ষে ২৩৯ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে উড়ন্ত সূচনা করে শ্রীলংকা। উদ্বোধনী জুটিতে অভিস্কা ফার্নান্দোকে সঙ্গে নিয়ে ৭১ রান যোগ করেন দিমুথ করুনারত্নে। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা এই জুটি ভাঙেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তার অফ স্পিনে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে ২৯ বলে ১৫ রান করেন লংকান অধিনায়ক করুনারত্নে।
মুশফিকুর রহিমের একার লড়াইয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে টাইগারদের সম্মানজনক স্কোর। বাংলাদেশ দলের এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যানের অপরাজিত ৯৮ রানের দায়িত্বশীল ইনিংসে ভর করে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৩৮ রান তুলতে সক্ষম হয় টাইগাররা।
১০৩ বলে ৮০ রান করা মুশফিক, শেষ দুই ওভারে সেঞ্চুরির জন্য আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেন। ৪৯তম ওভারে লংকান পেসার ইসুর উদানাকে দুই চার ও এক ছক্কা হাঁকিয়ে ১৫ রান আদায় করে নেন মুশফিক।
সেঞ্চুরির জন্য শেষ ওভারে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৫ রান। শেষ ওভারে অসাধারণ বোলিং করেন নুয়ান প্রদীপ। লংকান এ পেসারের বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে ব্যর্থ হন তিনি। শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করতে শেষ দুই বলে মুশফিকের প্রয়োজন ছিল মাত্র ৩ রান। পঞ্চম বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ব্যর্থ হন তিনি।
ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা ফিল্ডার যখন বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠান তার আগে সিঙ্গেল রান নেয়ার সুযোগ পান মুশফিক-মোস্তাফিজ। অবশ্য সেই সিঙ্গেল না নিয়ে মুশফিক যদি শেষ বলে স্টাইকে থাকতেন তাহলে বাউন্ডারি হলেও হতে পারত!
কিন্তু দলের স্বার্থে সেঞ্চুরির চিন্তা করে দাঁড়িয়ে না থেকে, সিঙ্গেল নিয়ে স্টাইক বদল করেন মুশফিক। আর তাতেই সেঞ্চুরির স্বপ্ন ভঙ্গ হয় এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের। শেষ বলে মোস্তাফিজ ডাবল রান নেয়ায় বাংলাদেশ থামে ২৩৮ রানে। ১১০ বল খেলে ৬টি চার ও এক ছক্কায় ৯৮ রান করে অপরাজিত থাকেন মুশফিক।
তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ৩১৫ রান তাড়ায় ৯১ রানে হেরে যায় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে হারলেই সিরিজ হাতছাড়া। এমন সমীকরণের ম্যাচেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলটি।
রোববার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে চরম বিপর্যয়ে পড়ে যায় বাংলাদেশ দল। ৩১ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর ব্যাটিংয়ে নামেন মুশফিক। প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাটিং বিপর্যয়ে দলের হাল ধরেন তিনি।
লংকান বোলারদের তোপের মুখে পড়ে একেরপর এক উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে বাংলাদেশ।সৌম্য, তামিম, মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, সাব্বির, মোসাদ্দেকের অসহায় আত্মসমর্পণের কারণে দলীয় ১১৭ রানে ছয় ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সেই অবস্থা থেকে দলকে টেনে তুলতে বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন মুশফিক। উইকেটের এক পাশ আগলে রেখে একাই লড়াই করে যান জাতীয় দলের এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান।
সপ্তম উইকেটে মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গে গড়েন ৮৪ রানের জুটি। ৪৯ বলে ছয়টি চারের সাহায্যে ৪৩ রান করে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন মিরাজ।
মিরাজের বিদায়ের পরও উইকেটে অবিচল ছিলেন মুশফিক। শেষ দিকে লেজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে লড়াই চালিয়ে যান তিনি।
শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম খেলায় ৩০ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ, রোববার ৫২ রানে হারায় ৩ উইকেট। এরপর ১৬ রানের ব্যবধানে নেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কারণে রান আউট সাব্বির রহমান রুম্মন।
আগের ম্যাচের মতো আজও বাংলাদেশ দলের প্রথম সারির চার ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ মিঠুন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন।
বিশ্বকাপ থেকেই অফ ফর্মে রয়েছেন বাংলাদেশ সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। আগের ম্যাচে শূন্য রানে বোল্ড হওয়া তামিম এদিন ফেরেন ৩১ বলে ১৯ রান করে। তার আগে দলীয় ২৬ রানে আউট হন সৌম্য সরকার। প্রথম ওয়ানডেতে ১৫ রান করা এ ওপেনার দ্বিতীয় খেলায় ফেরেন মাত্র ১১ রানে।
৩১ রানে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর হাল ধরতে পারেননি মোহাম্মদ মিঠুন। লংকান সিরিজ শুরুর আগে প্রস্তুতি ম্যাচে ৯১ রানের ইনিংস খেলা এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান প্রথম ওয়ানডেতে আউট হন ১০ রানে।
আজ মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ২১ রানের ছোট জুটি গড়তেই আকিলা ধনাঞ্জয়ার অফস্পিনের শিকার হন মিঠুন। নিজের প্রথম ওভারে বোলিংয়ে এসেই ২৩ বলে ১২ রান করা মিঠুনকে ফেরান আকিলা।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট তুলে নেন আকিলা। তার অফ স্পিনে বোল্ড হয়ে ১৮ বলে ৬ রানে ফেরেন রিয়াদ। আগের ম্যাচে ১০ বলে মাত্র ৩ রান করেছিলেন তিনি।
আগের ম্যাচে ৩৯ রানে চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেছিলেন মুশফিক-সাব্বির। পঞ্চম উইকেটে তারা ১১১ রানের জুটি গড়েছিলেন। আজও দলের বিপর্যয়ে তাদের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন টাইগার সমর্থকরা। কিন্তু ১৯ বলে ১১ রানে আউট হয়ে ফেরেন সাব্বির। তার বিদায়ে ২৪.৩ ওভারে ৮৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৩৮/৮ (মুশফিক ৯৮*, মিরাজ ৪৩, তামিম ১৯, মোসাদ্দেক ১৩, মিঠুন ১২, সৌম্য ১১, সাব্বির ১১, মাহমুদউল্লাহ ৬, তাইজুল ৩, মোস্তাফিজ ২*)।
Leave a reply