শ্রীলঙ্কার মাটিতে যেন দাঁড়াতেই পারলো না বাংলাদেশের টাইগাররা। একে একে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রতিটিতেই তামিম ইকবালের নেতৃত্বে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে টাইগাররা। ফলে, হোয়াইটওয়াশের ‘কলঙ্ক’ জুটলো তাদের। প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৯১ রান ও ৭ উকেটে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ দল শেষ ম্যাচে হেরেছে ১২২ রানে।
বুধবার সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করে ৮ উইকেটে ২৯৪ রান করে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা। টার্গেট তাড়া করতে নেমে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৭২ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৯ রান করেন ওপেনার সৌম্য সরকার। তার ইনিংসটি ৮৬ বলে ৬টি চার ও এক ছক্কায় সাজানো।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২৯৫ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই উইকেটে হারাতে থাকে বাংলাদেশ দল। হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর ম্যাচে ১১৭ রানে ৭ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে পড়ে টাইগাররা।
দলীয় ৪ রানেই ফেরেন ওপেনার তামিম ইকবাল। সিরিজের তিন ম্যাচে মিলে তার সংগ্রহ মাত্র ২১ রান।এক বছর পর জাতীয় দলে ফিরে প্রত্যাশিত ব্যাটিং করতে পারেননি এনামুল হক বিজয়। মাত্র ১৪ রানে আউট হন এ ওপেনার।
প্রথম দুই ম্যাচে ৬৭ ও ৯৮* রান করে সিরিজের সেরা ব্যাটস্যানের দৌড়ে শীর্ষে থাকা মুশফিকুর রহিম বুধবার ফেরেন মাত্র ১০ রানে। ৪৬ রানে তামিম-বিজয়-মুশফিকের বিদায়ের পর দলীয় ৬০ রানে ফেরেন মিঠুন। আগের দুই ম্যাচে ১০ ও ১২ রান করা মিঠুন এদিন করেন মাত্র ৪ রান। দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ে হাল ধরতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
কলম্বোয় লঙ্কানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ৩ ও ৬ রানে আউট হওয়া এ অলরাউন্ডার বুধবার আউট হন মাত্র ৯ রানে।
ব্যাটিং বিপর্যয়ের ম্যাচে আশানুরূপ ব্যাটিং করতে পারেননি সাব্বির রহমান রুম্মন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ৭ ও ৮ রানে ফেরেন তারা। দলীয় ২৪.৪ ওভারে প্রথম সারির ৭ ব্যাটসম্যানের উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকেই কার্যত ছিটকে যায় টাইগাররা।
দলের ব্যাটিং বিপর্যয়ের দিনে একাই লড়াই করে যান সৌম্য সরকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ব্যাটিংয়ে নামা সৌম্য ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একাই প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। দলীয় ১৪৩ রানে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে বোল্ড হয়ে ফেরেন তিনি। আকিলা ধনাঞ্জয়ার স্পিনে বিভ্রান্ত হওয়ার আগে ৮৬ বলে ৫টি চার ও এক ছক্কায় ৬৯ রান করেন তিনি। ইনিংসের শেষ দিকে তাইজুল ইসলাম ১৭ বলে অপরাজিত ১৮ রান করে শুধু ব্যবধানই কমালেন। শেষ পর্যন্ত ১২২ রানের বড় জয় পায় লঙ্কানরা।
এর আগে, প্রথমে ব্যাট করে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ও কুশল মেন্ডিসের জোড়া ফিফটিতে ৮ উইকেটে ২৯৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে শ্রীলঙ্কা। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৮৭ রান করেন ম্যাথিউস। তার ইনিংসটি ৯০ বলে আটটি চার ও এক ছক্কায় সাজানো। এ ছাড়া ৫৪ রান করেন মেন্ডিস। ৪৬ ও ৪২ রান করেন করুনারত্নে ও কুশল পেরেরা।
দলীয় ১৩ রানে লঙ্কান ওপেনার অভিস্কা ফার্নান্দোকে এলবিডব্লিউ করে টাইগার শিবিরে স্বস্তির পরশ এনে দেন পেসার শফিউল ইসলাম। ওয়ান ডাউনে ব্যাটিংয়ে নামা কুশল পেরেরাকে সঙ্গে নিয়ে ইনিংস মেরামত করেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে।
দ্বিতীয় উইকেটে ৮৩ রানের জুটি গড়েন। তাদের এই জুটি ভাঙেন তাইজুল ইসলাম। ওয়ানডে ক্রিকেটে তিন বছর পর খেলতে নেমে উইকেটের সাফল্য পান তাইজুল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরের পর গত রোববার ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে নেমে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কোনো সাফল্য পাননি এই বাঁহাতি স্পিনার।
বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নেকে আউট করেন তাইজুল। এদিন ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ ম্যাচে তাইজুল শিকার করলেন ষষ্ঠ উইকেট। তার স্পিনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দেয়ার আগে করুনারত্নে করেন ৬০ বলে ৪৬ রান।
এরপর মাত্র ২ রানের ব্যবধানে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে যাওয়া কুশল পেরেরাকে ফেরান রুবেল হোসেন। তার বিদায়ে ৯৮ রানে ৩ উইকেট হারায় লঙ্কানরা। এরপর কুশল মেন্ডিসকে সঙ্গে নিয়ে অনবদ্য জুটি গড়েন শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। এই জুটিতে তারা ১০১ রান যোগ করেন।
বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ম্যাথিউস-মেন্ডিসের মধ্যকার জুটি ভাঙেন সৌম্য সরকার। ফিফটি তুলে নেয়া কুশল মেন্ডিসকে আউট করেন সৌম্য। তার আগে ৫৮ বলে ৫৪ রান করেন তিনি। তার বিদায়ে ৪১.৩ ওভারে ১৯৯ রানে ৪ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা।
ছয় নম্বরে ব্যাটিংয়ে নেমে রীতিমতো তাণ্ডব চালান দাসুন শানাকা। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে যান তিনি। পঞ্চম উইকেটে ম্যাথিউসের সঙ্গে মাত্র ২৮ বলে ৫২ রানের জুটি গড়েন শানাকা। একের পর এক বাউন্ডারি হাঁকিয়ে মাত্র ১৪ বলে ৩০ রান করা শানাকাকে দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন শফিউল। সাব্বির রহমান রুম্মনের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন শানাকা।
দুর্দান্ত ব্যাটিং করে সেঞ্চুরির পথেই ছিলেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। শতরানের মাইলফলক স্পর্শ করতে ইনিংসের শেষ ওভারে তার প্রয়োজন ছিল ১৩ রান। সৌম্য সরকার শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে শুরুতেই ওয়াইড দেন। পরের ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন ম্যাথিউস। ফেরেন ৯০ বলে ৮৭ রানে। ঠিক পরের বলে আকিলা ধনাঞ্জয়ার উইকেট তুলে নেন সৌম্য। তবে শেষ দুই বলে ডি সিলভার ব্যাক টু ব্যাক বাউন্ডারিতে শ্রীলঙ্কার স্কোর দাঁড়ায় ২৯৪।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৯৪/৮ (ম্যাথিউস ৮৭, মেন্ডিস ৫৪, করুনারত্নে ৪৬, কুশল পেরেরা ৪২, শানাকা ৩০, শিহান জয়সুরিয়া ১৩, ডি সিলভা ১২*; সৌম্য ৩/৫৬, শফিউল ৩/৬৮, রুবেল ১/৫৫, তাইজুল ১/৩৪)।
বাংলাদেশ:৩৬ ওভারে ১৭২/১০ (সৌম্য ৬৯, তাইজুল ১৮*, বিজয় ১৪, মুশফিক ১০, মাহমুদউল্লাহ ৯, মিরাজ ৮, সাব্বির ৭, মিঠুন ৪, তামিম ২, শফিউল ১; দাসুন শানাকা ৩/২৭, কুমারা ২/২৬)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ১২২ রানে জয়ী।
Leave a reply