একশ’ বছর পর পৃথিবীর জনসংখ্যা আর বাড়বে না

|

পৃথিবীর জনসংখ্যা এখন সাতশ’ সত্তর কোটি। যে হারে মানুষ বাড়ছে তাতে খুব শিগগিরই ১ হাজার কোটিতে পৌঁছে যাবে।

জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক কমিটি আইপিসিসি বলছে, বিপুলসংখ্যক এই মানুষকে খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখাই পৃথিবীর অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে খুব দ্রুতই শেষ হয়ে যাচ্ছে পৃথিবীর সম্পদ। অদূর ভবিষ্যতের এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় করণীয় কি তা নিয়ে আলোচনা ও গবেষণাও শুরু হয়েছে। অনেকেই আবার প্রশ্ন করছেন, পৃথিবীর জনসংখ্যা কি এভাবে বাড়তেই থাকবে। বাড়লে কতদূর পর্যন্ত বাড়তে পারে।

এমন প্রশ্নের জবাবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটা নির্দিষ্ট সময় পর জনসংখ্যা আর বাড়বে না। সেটা হতে পারে আগামী একশ’ বছরের মধ্যে। এরপর বাড়ার পরিবর্তে বরং কমতে থাকবে লোকসংখ্যা। জাতিসংঘের সাম্প্রতিক তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে জনতত্ত্ববিদরা বলছেন, ২১০০ সালের মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধি থেমে যাবে।

ততদিনে বিশ্বজুড়ে মানুষ বেড়ে হবে এগারশ’ কোটি। অর্থাৎ আগামী ৮০ বছরেই বাড়বে ৩৩০ কোটি। যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতনামা ম্যাগাজিন দ্য আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মানব ইতিহাসের অধিকাংশ সময়জুড়ে জনসংখ্যার বৃদ্ধি প্রকৃতপক্ষে খুব ধীরগতিতে হয়েছে। এখন থেকে ১২ হাজার বছর আগেও পৃথিবীর লোকসংখ্যা ছিল মাত্র ৪০ লাখ। এর পরবর্তী ১০ হাজার বছরে এ গ্রহের জনসংখ্যা এসে পৌঁছায় মাত্র ১৯ কোটিতে। এমনকি এখন থেকে ২০০ বছর আগে অর্থাৎ ১৮০০ সালেও মানুষের মোট সংখ্যা ছিল ১০০ কোটি।

কিন্তু এরপর থেকেই জনসংখ্যার বৃদ্ধি বিস্ময়করভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সেটা মূলত সম্ভব হয়েছে শিক্ষা ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অগ্রগতি এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা ও খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির সুবাদে। ১৯০০ সাল অর্থাৎ একশ’ বছর পরই জনসংখ্যা হয়ে যায় ১৬৫ কোটি। পরবর্তী একশ’ বছরে সেটা নাটকীয়ভাবে বেড়ে ৬০০ কোটি পার হয়ে যায়। এরপর মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে এ মুহূর্তে (২০১৯ সাল) সেটা ৭৭০ কোটি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী আগামী একশ’ বছর মানুষ বাড়তেই থাকবে। এরপর হঠাৎ করেই কমতে শুরু করবে। তবে সেটা অতি ধীরগতিতে। জনসংখ্যার এমন সংকোচন ইতিহাসের বিভিন্ন সময় মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে।

তবে সেগুলো ছিল প্রাকৃতিকভাবে। যেমন ১৩৪৭-৫১ সালে ‘ব্ল্যাক ডেথ’র মতো মহামারীতে ২০ কোটির বেশি মানুষ মারা গিয়েছিল। কৃষ্ণ সাগরের উপকূলবর্তী ইউরোপের দেশগুলো থেকে এ রোগ ছড়িয়ে পড়েছিল বিধায় একে ব্ল্যাক ডেথ বলা হয়।

ইউরোপের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষের প্রাণবায়ু কেড়ে নেয় এই মহামারী। কিন্তু এবার জনসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ একেবারেই ভিন্ন হবে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক টম ভোগেল বলছেন, ‘অতীতে পৃথিবীর জনসংখ্যা কমে যাওয়ার কারণ খুঁজলে দেখা যায়, কোনো মহামারীর ফলে একসঙ্গে বহু লোক মারা গেছে।’

ভোগেলের মতে, পৃথিবীর সেই বাস্তবতা বদলে গেছে। ভবিষ্যতে মানুষ কমে যাবে- কারণ সীমিতসংখ্যক সন্তান জন্ম দেবে মানুষ। এর কারণ হিসেবে ভোগেল মানুষের আয় ও শিক্ষার মান বৃদ্ধি বিশেষ করে বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোর নারীদের সমাজ সচেতনতার কথা বলেছেন।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply