স্টাফ রিপোর্টার,গোপালগঞ্জ:
চলে গেলেন গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ভাষা সৈনিক শমসের উদ্দিন মোহাম্মদ (কাহার মাস্টার)।
শুক্রবার বেলা সোয়া ১১টায় বার্ধক্যজনিত কারণে গোপালগঞ্জ শহরে মেয়ের বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শুক্রবার বাদ মাগরিব রাতইল পূর্বপাড়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা মাঠে মরহুমের নামাজে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এদিকে,ভাষা সৈনিক শমসের উদ্দিনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছেন উপজেলা আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, রাতইল ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, শমসের উদ্দিন মোহাম্মাদ বাংলা ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ছিলেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যে ভাষা ও দেশের প্রতি তাঁর অকুণ্ঠ ভালবাসা নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করেছে। তিনি ১৯২৯ সালের ৭ অক্টোবর গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার রাতইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাল্যকাল থেকেই তিনি খুবই স্বাধীনচেতা ছিলেন। কলকাতা বালিকা বিদ্যামন্দিরে তার পাঠ গ্রহণের সূচনা হয়। পরবর্তীতে কোলকাতার এটি-মিত্র ইন্সটিটিউশনে দশম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করার পর দেশ বিভাগের কারণে নিজ গ্রামে ফিরে আসেন।
অতঃপর ১৯৪৮ সালে যশোর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রাম কাঞ্চন একাডেমি থেকে কৃতিত্বের সাথে ম্যাট্রিক পাস করার পর ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে আই,এ পাস করার পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ভাষা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। পাকিস্তান সরকারের রোষানলে পড়ে তিন বার জেল খেটেছেন তিনি। ১৯৫৪ সালে বিএজি পাস করার পর শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন। ১৯৬০-৬৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাতইল নায়েবুন্নেছা ইনস্টিটিউশনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
১৯৬৫-৭০ সাল পর্যন্ত সাফল্যের সাথে নারায়নগঞ্জ বন্দর হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ে তিনি জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। তিন বছর বিরতির পর ১৯৭৩ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে গোপালগঞ্জ হাই স্কুলে যোগদান করেন এবং ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সেখানে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮৫ সালে গোপালগঞ্জের খন্দকার শামস উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ওই স্কুল থেকে ১৯৯২ সালে অবসরে যান তিনি।
Leave a reply