কোরবানির অর্থ উৎসর্গ করা। বান্দা তার রবকে সন্তুষ্টি করার লক্ষ্যে নিজের প্রিয় বস্তু কোরবানি করে থাকেন।
তবে অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, কিভাবে কোরবানি করলে আল্লাহর কাছে কবুল হতে পারে?
এ সম্পর্কে মাওলানারা বলেন, আর্থিক ইবাদত হলো কোরবানি। আর এই ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য রয়েছে দুটি প্রধান শর্ত।
প্রথম শর্তটি হলো, ইখলাছুন নিয়ত বা নিয়তকে খাঁটি করা। তাই কোরবানি হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য। কারো মনোরঞ্জন বা প্রেস্টিজ রক্ষার জন্য নয়। তাই তো আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তাদেরকে তো এ ছাড়া আর কোনো হুকুম দেওয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করবে।’ (সূরা আল-বাইয়েনা : ৫)
যারা নামাজ, রোজা ও যাকাত আদায় করে না কিন্তু কোরবানির ক্ষেত্রে বড় গরু দিতে বদ্ধপরিকর, তাদের নিয়ত যে ভেজালযুক্ত এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে কোরবানির ক্ষেত্রে তাকওয়ার বিষয়টিও সামনে রাখতে হবে। কেননা, বিশ্ব পরিচালক আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘এ (পশু)গুলোর গোশত ও রক্ত আল্লাহর নিকট পৌঁছে না। কিন্তু তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের মনের তাকওয়া।’ (সূরা আল-হজ্জ : ৩৭)
দ্বিতীয় শর্তটি হলো, কোরবানি হতে হবে প্রিয় নবীর অনুসরণ ও অনুকরণে। এর অন্যথা হলে নিয়ত ঠিক থাকলেও কোরবানি সহীহ হবে না। কোরবানিদাতার উপার্জন হালাল হওয়ার বিষয়টি সর্বাগ্রে স্থান পাবে। এতে গরমিল হলে হাশরের ময়দানে ব্যক্তিকে এক কদমও সরতে দেওয়া হবে না। তার কোরবানি গ্রহণের প্রশ্ন তো দূরে থাক।
এছাড়া কোরবানি সহিহ বা কবুল হওয়ার জন্য অন্য যে বিষয়গুলো রয়েছে তা হলো:
১. কোরবানির যোগ্য প্রাণী সংগ্রহ করে কোরবানি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রাণীর বয়স, সুস্থ বা নিরোগ হওয়ার বিষয়ে অবগত হতে হবে।
২. শরিকদের বিষয় খোঁজ-খবর নিতে হবে। কেননা কোনো এক শরিকের উপার্জনে ভেজাল থাকলে সবার কোরবানি বাতিল হয়ে যাবে।
৩. পশু কোরবানি করার পর অনুমান করে গোশত ভাগ করা চলবে না; বরং পাল্লা দিয়ে সঠিকভাবে মেপে নিতে হবে। যাতে কারো মনে সন্দেহের অবকাশ না থাকে।
৪. পশুর জবাই থেকে শুরু করে গোশত প্রস্তুত করা পর্যন্ত কোনো শ্রমিকের প্রাপ্য হক সঠিকভাবে আদায় না করে গোশত দিলে চলবে না। তবে তার মজুরি দেওয়ার পর অতিরিক্ত হিসেবে গোশত দেওয়া যাবে।
৫. কোরবানি যার ওপর ওয়াজিব হয়েছে, তার নিজের পক্ষ থেকে দেওয়ার পর অন্যদের পক্ষ থেকে দিতে পারবে। তবে নিজের পক্ষ থেকে না দিয়ে অন্যের পক্ষ থেকে দিলে তা সহিহ হবে না। নিজের পক্ষ থেকে দেওয়ার পর মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকেও দিতে পারবে।
৬. কোরবানিদাতা প্রাপ্ত গোশত তিন ভাগ করে এক ভাগ নিজে রাখবে, অপর দুই ভাগের এক ভাগ আত্মীয়স্বজন এবং অপর ভাগ গরিবদের মধ্যে বণ্টন করে দেবে। আর এটি মুস্তাহাব।
৭. আমরা প্রায়ই বলে থাকি- আমার নামে বা মায়ের নামে অথবা অমুকের নামে। এটি একটি প্রচলিত ভুল। সব কোরবানি হতে হবে আল্লাহর নামে। কথাটি হবে আমার পক্ষ থেকে, মায়ের পক্ষ থেকে অথবা অমুকের পক্ষ থেকে।
Leave a reply