হাসপাতালেই ঈদ কাটবে রাবেয়া-রোকেয়ার

|

হাসপাতালেই ঈদ কাটছে দেশজুড়ে আলোচিত জমজ শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার। গত ১ আগস্ট সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) জোড়া মাথার এই দুই শিশুর জটিল অপারেশন সম্পন্ন হয়। অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এই অপারেশন সাফল্যের সাথে সম্পন্ন করেন হাঙ্গেরি ও বাংলাদেশের চিকিৎসকদল। তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

শনিবার রাবেয়ার জ্ঞান ফিরে এসেছে। জ্ঞান ফেরার পরই ‘আম্মু’ বলে ডেকেছে সে। কোলে নিতে বলেছে। তবে, রোকেয়ার এখনও জ্ঞান ফেরেনি।

অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে ২-৩ মাস পর তাদের আরও একটি অপারেশন করতে হতে পারে। গত ১ আগস্ট ৩৩ ঘণ্টা সিএমএইচে ধরে রাবেয়া ও রোকেয়ার জোড়া মস্তিস্কের অপারেশন করা হয়। বাংলাদেশে ও হাঙ্গেরির একদল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যৌথভাবে এই জটিল অপারেশনটি সম্পন্ন করেন।

পাবনার রফিকুল ইসলাম ও তাসলিমা বেগম দম্পতির ঘরে ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই জন্ম গ্রহণ করে জোড়া মাথার যমজ শিশু রাবেয়া ও রোকেয়া। যাদেরকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘Craniopagus twinsz’। ২.৫ মিলিয়ন জীবিত জমজ বাচ্চাদের মধ্যে মাত্র একটি মাথা জোড়া লাগানো বাচ্চা জন্ম নেয়। প্রায় ৪০% মাথা জোড়া লাগানো শিশু মৃত অবস্থায় জন্ম নেয় এবং আরো এক তৃতীয়াংশ শিশু ২৪ ঘন্টার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। তবে শতকরা ২৫ ভাগ শিশু বেঁচে থাকে জমজ মাথা নিয়ে যাদের শল্য চিকিৎসার মাধ্যমে আলাদা করবার সুযোগ থাকে। এটি একটি বিরল ধরনের অপারেশন। সারা বিশ্বেই খুব অল্প পরিমাণে হয়েছে। সাফল্যের হারও খুব বেশি নয়।

এই দুই শিশুর জন্মের পরই পিতামাতাকে সমাজের কুসংস্কারচ্ছন্নতার শিকার হতে হয়। তারা সাহায্য চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পত্র লিখেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের নেয়া হয়। এরপর হাঙ্গেরির অ্যাকশন ফর ডিফেন্সলেস পিপল এর ডাঃ গ্রেগ পাটাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎকালে এই জটিল এই শল্য চিকিৎসা করা সম্ভব বলে মত দেন। শল্য চিকিৎসাটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথম ধাপে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ থেকে হাঙ্গেরিতে ৪৮টি ছোট বড় সার্জারি সম্পন্ন হয়। গত ২২ জুলাই রাবেয়া এবং রোকেয়ার অস্ত্রপচারের সবচাইতে জটিল অংশ ‘জমজ মস্তিষ্ক’ আলাদাকরণের কাজটি সম্পন্নের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় তাদেরকে ঢাকা সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। এই জটিল অপারেশনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সিএমএইচ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন সেনাপ্রধান।

অস্ত্রপচারে হাঙ্গেরির বিশেষজ্ঞদের সাথে সিএমএইচ’এর নিউরো অ্যানেসথেসিওলজিস্টদের তত্ত্বাবধানে নিউরো ও প্লাষ্টিক সার্জনগণসহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউট, হার্ট ফাউন্ডেশন, নিউরো সায়েন্স ইনস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও শিশু হাসপাতালের প্রায় শতাধিক সার্জন ও অ্যানেসথেসিওলজিস্ট এই জটিল অপারেশনে কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত ছিলেন।

বর্তমানে তারা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল ঢাকার পোষ্ট এ্যানেসথেটিক কেয়ার ইউনিট বা (PACU) তে অবস্থান করছে এবং সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে এবং শিশু হাসপাতালের নিউরো ইনটেনসিভিস্টদের তত্ত্বাবধানের রয়েছে।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply