পৃথিবীতে এমন কিছু পেশা আছে যাকে আপনি চাকরি হিসেবে ভাবতেই পারবেন না৷ বিশ্বজুড়ে বহু মানুষ এই সমস্ত চাকরির সঙ্গে যুক্ত৷ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও সম্প্রতি এই অদ্ভুত পেশাগুলি জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। কর্মজীবনে একঘেয়ে লাগলে আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন এমনই অদ্ভুত পেশাগুলি।
পারসোনাল শপার:
শপিং করতে তো অনেকেই পছন্দ করেন, তবে শপিং করতে গিয়ে ঠকতে হয় অনেক সময়েই। শপিং-এর বিষয়ে সবকিছু জানা থাকলেও কেনার মোক্ষম সময়ে গিয়ে ভালো পোশাক বাছা থেকে দামাদামি অবধি হয়ে ওঠেনা সকলের। তাই বর্তমানে ঘন্টায় ষাট ডলারের বিনিময়ে শপিং-এর জন্য আপনি পেয়ে যাবেন শপিং-এ পটু একজন পারসোনাল শপারকে। যিনি কেবল একজন ক্রেতাকে তার পছন্দসই পণ্য কিনতে সহায়তা করবেন। দৈনিক পাঁচ ঘন্টা কাজ করে একজন পারসোনাল শপার বছরে এক লক্ষ ডলারের বেশি আয় করেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকার সমান।
ওয়াটার স্লাইড পরীক্ষক:
সকলকে সুস্থ রাখতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ওয়াটার স্লাইড টেস্টার আগে থেকেই স্লাইডটি পরীক্ষা করে নেয়। এই স্লাইডে কোনও ধরনের দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কা আছে কি না, এটা দেখার দায়িত্ব তাঁদের। প্রত্যেক বছর হাজার হাজার আবেদনকারী এই পদের জন্য আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে থেকে মাত্র কয়েকজন এই কাজের সুযোগ পান। বছরে মাত্র ছয় মাস এই চাকরী করার সুযোগ থাকে। আর তার জন্য বছরে চৌত্রিশ হাজার ডলার পান ওয়াটার স্লাইড পরীক্ষকরা। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি।
পারসোনাল স্নাগলার বা আলিঙ্গনকারী:
একাকিত্ব বোধ এবং মানসিক জটিলতায় যাঁরা ভুগছেন, সেই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে বিশ্বজুড়ে প্রচলন বাড়ছে এই নতুন পেশার। পারসোনাল স্নাগলার বা আলিঙ্গনকারী হল মানসিক জটিলতা থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জড়িয়ে ধরে বসে থাকা বা ঘুমিয়ে থাকা! একজন অপরিচিত মানুষকে আলিঙ্গন করে বসে থাকা বা ঘুমিয়ে থাকাই এই পেশার কাজ। একজন পেশাদার স্নাগলার ঘন্টায় গড়ে সত্তর ডলার আয় করে। দৈনিক তিন ঘন্টা কাজ করলে এই পেশা থেকে বছরে আয় হয় ছিয়াত্তর হাজার ডলার যা প্রায় ৬৫ লক্ষ টাকার সমান।
লাইন স্ট্যান্ডিং:
অফিসে, স্কুলে, ব্যাংকে, ডাক্তারখানায় কিংবা অন্য কোনও প্রতিষ্ঠানে, ঘন্টার পর ঘন্টা দীর্ঘ লাইন দিয়ে পরিষেবা পেতে হয়, এই সমস্যা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানেন। এই বিরক্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য লাইন সিটার বা লাইন স্ট্যান্ডিং -এর পরিষেবা দিচ্ছে বিদেশের অনেক কোম্পানি। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে লাইন স্ট্যান্ডিং ভাড়া করতে পারবেন, যিনি আপনার হয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকবে। একজন লাইন স্ট্যান্ডিং দৈনিক একশো ডলার আয় করেন। এই পেশায় যাঁরা নিযুক্ত তাঁরা বছরে আয় ছত্রিশ হাজার ডলার অবধি আয় করতে পারেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৩০ লক্ষ টাকারও বেশি।
ম্যাট্রেস পরীক্ষক:
আরামদায়ক বিছানায় দৈনিক ছয় থেকে আট ঘন্টা শুয়ে ঘুমিয়ে থাকাই হল এই পেশার কাজ। যাঁরা ঘুমোতে ভালবাসেন তাদের জন্য এটি হতে পারে স্বপ্নের চাকরি। এই পেশায় আপনাকে বিভিন্ন শো-রুমে নানান ম্যাট্রেসে ঘুমিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, ম্যাট্রেসের মান। গ্রহকেরা যাতে সঠিক মানের ম্যাট্রেস পান তার জন্যই নিয়োগ করা হয় এই পেশাদার ম্যাট্রেস পরীক্ষকদের। এই পেশায় যারা নিযুক্ত তাঁরা কেবলমাত্র ঘুমানোর জন্য বছরে পঞ্চান্ন থেকে ষাট হাজার ডলার আয় করতে পারেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার সমান।
পেপার টাওয়েল স্নিফিং:
বিশ্বের অদ্ভুত কাজগুলোর মধ্যে সবচেয়ে সহজতম হচ্ছে পেপার টাওয়েল স্নিফিং। এই পেশার কাজ বলতে, গন্ধ শোকার প্রখর শক্তি থাকলেই এই কাজের জন্য উপযুক্ত। কোম্পানির পেপার টাওয়েলগুলো বাজারে বিক্রি হওয়ার আগে এই পেশার ব্যক্তিরা পেপার টাওয়েলগুলো শুঁকে পরীক্ষা করে দেখেন, তাতে কোনও অস্বস্তিকর গন্ধ আছে কিনা! দুর্মূল্যের বাজারে সকলেই অল্প পরিশ্রমে অধিক আয়ের চাকরি খোঁজেন। তাই এমন পেশা থাকলেও তাতে নিযুক্ত হওয়া ভাগ্যের বিষয়। এই পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা হাজার ডলার প্রত্যেক সপ্তাহে আয় করেন। বছরে বাহান্ন হাজার ডলার। যা প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার সমান।
পেট ফুড পরীক্ষক:
খাবারের স্বাদ কীভাবে আরেকটু ভালো করা যায় তার চেষ্টার শেষ নেই। মানুষ মাত্রই কম-বেশি খেতে পছন্দ করেন। তবে পোষা প্রাণীর খাবার কতটা সুস্বাদু তা কি আপনি কখনও চেখে দেখেছেন! এমনই পেশায় যুক্ত রয়েছেন বিশ্বের অনেক মানুষ। তাঁদের বলা হয় পেট ফুড পরীক্ষক। বিশ্বের কয়েকটি অদ্ভুত চাকরির মধ্যে এটি অন্যতম একটি। এই পেশায় নিযুক্ত ব্যক্তিদের কাজ হল, পোষা প্রাণীর খাবারের স্বাদ পরখ করে দেখা এবং সেগুলো সম্পর্কে নিজের মন্তব্য দেওয়া। এই কাজ করে বছরে চল্লিশ হাজার ডলার আয় করে থাকেন একজন পেট ফুড পরীক্ষক। যা প্রায় ৩৩ লক্ষ টাকার সমান।
গলফ বল ডাইভিং:
নদী বা সাগরের তলদেশে ডুব দিয়ে কোনও কিছু উদ্ধার করে আনা যথেষ্ট দুঃসাহসিক কাজ। তবে সেই সম পরিমাণ আয় যদি পুকুর নালার মতো অগভীর জলে ডুব দিয়ে করা যায়! গলফ মাঠের সংলগ্ন পুকুরে বল চলে গেলে, সে বল পুকুরের তলদেশ থেকে উদ্ধার করে আনতে হবে। আর তার বিনিময়ে বছরে আয় করতে পারবেন পঞ্চাশ হাজার ডলার। আপনি যদি একজন দক্ষ সাঁতারু হন, তবে আপনি নিঃসন্দেহে বছরে ৪২ লক্ষ টাকার সমান আয় করতে পারবেন এই পেশার থেকে।
Leave a reply