একই উত্তর ১৮ জনের খাতায়, সবার সাজা

|

এইচএসসি পরীক্ষার খাতায় ১৮ জনের উত্তরপত্র হুবহু মিলে যাওয়ায় শাস্তি দিয়েছে বরিশাল শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। তাদের ২০১৯ সালের পরীক্ষা বাতিল করার পাশাপাশি আগামী তিন বছর পরীক্ষা দেওয়ার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষাবোর্ড। শিক্ষাবোর্ডের শৃঙ্খলা কমিটির ৩৪তম সভার এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনোয়ারুল আজিম স্বাক্ষরিত নোটিশ থেকে জানা গেছে, ১৯৮০ সালের পাবলিক পরীক্ষা গ্রহণ ও শাস্তির ৪২ নম্বর আইনের ৮ ধারা অনুযায়ী পরীক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

শাস্তিপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের রোল হলো: ১০০৩২৭, ৬০০২১৩, ১০১০৯৯, ১০১১১৫, ১০২৫৮০, ৬০১৬৭৭, ১০৯৭৬১, ১০৯৭৬৭, ৬০৪৭৬৯, ১০০৯১৯, ৬০০২৫২, ১০১০৮৭, ৯০০০২৫, ১০৪০৩৭, ১০৫৮৪২, ১০৯৭৯০, ৬০৪৭৩৫, ১১২০১৪।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের এইচএসসি পরীক্ষার উচ্চতর গণিতের লিখিত পরীক্ষায় নম্বর ছিল ৫০। এর মধ্যে ক অথবা খ যে কোনও গ্রুপ থেকে কমপক্ষে দুটিসহ ৫টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। কিন্ত শাস্তিপ্রাপ্ত চারজন পরীক্ষার্থী ফাঁস করা উত্তরপত্র দেখে সব অঙ্কই একই গ্রুপ থেকে তুলে রাখে। ফলে তাদের ৪০ দেয়া হয়। বাকি ১৪ জন পেয়েছে ৫০ এর মধ্যে ৫০। শুধু তাই নয় একটি অঙ্ক ছিল যেটি বেশ জটিল। এটি করতে গেলে যে কারও একাধিকবার কাটাছেঁড়া করতে হবে। অথচ ওই ১৮ পরীক্ষার্থী নিখুঁতভাবে সেই অঙ্ক খাতায় তুলে রাখায় বিষয়টি ধরা পড়ে।

জানা যায়, এবার এইচএসসির উচ্চতর গণিতের খাতা নিরীক্ষণের দায়িত্ব পান নলছিটি সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মো. আবু সুফিয়ান। এ বছর উচ্চতর গণিতের ২০০টি উত্তরপত্র নিরীক্ষণ করেন তিনি। তবে খাতা নিরীক্ষা করতে গিয়ে ১৮টি খাতায় সমস্যা পান। ওইসব খাতায় উত্তর এমনভাবে লেখা হয়েছে যেখানে নম্বর কাটার কোনও উপায় নেই। শুধু তাই নয় ১৮টি খাতায় একটি দাঁড়ি, কমাও ভুল ছিল না। সুফিয়ান মিলিয়ে দেখেন শিক্ষাবোর্ড থেকে উচ্চতর গণিত বিষয়ের উত্তরপত্র যেভাবে তৈরি করা ঠিক সেভাবেই ওই ১৮টি খাতায় উত্তর লেখা হয়েছে। সেখানে কোনও ভুল নেই। বিষয়টি দেখে সন্দেহ হলে তিনি প্রধান পরীক্ষকের সঙ্গে আলোচনা করেন। প্রধান পরীক্ষক খাতাগুলো নিয়ে আসেন শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের কাছে। তখনই বিষয়টি ধরা পড়ে।

৯ আগস্ট শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেস ক্লাবে ওই ১৮ পরীক্ষার্থীর অভিভাবকরা এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের ছেলেদের ফল অনৈতিকভাবে স্থগিত রাখার অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে তদন্ত ও জিজ্ঞাসাবাদের নামে এক পরীক্ষার্থীকে রুমের মধ্যে আটকে মারধরের অভিযোগও করা হয় বোর্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস বলেছিলেন, অভিভাবকরা চাইলে আইনি সহায়তাও নিতে পারেন। কিন্তু আমরা বোর্ডের নিয়মের বাইরে যেতে পারি না। ওই ১৮ পরীক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বোর্ডের অফিস সহকারী গোবিন্দকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে তিনি জানান।


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply