কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে পেঁয়াজের চাহিদা বাড়ে। আর এ সুযোগে অতি মুনাফা করতে মরিয়া হয়ে ওঠে অসাধু ব্যবসায়ীরা। এবারও কোরবানির ঈদের এক মাস আগে কারসাজি করে তারা পণ্যটির দাম বাড়িয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন মহল থেকে চাপ আসায় বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পর দাম কিছুটা কমায় ব্যবসায়ীরা।
কিন্তু ভোক্তার বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়ে ঈদের চার-পাঁচ দিন পরই ফের দাম বাড়াতে শুরু করেছে তারা। যদিও পণ্যটির পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ঈদের আগে প্রতি কেজি পেঁয়াজের যে দাম ছিল, এখন তার থেকে ৫-৮ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। ভোক্তাদের অভিযোগ, ঈদের পর বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সাধারণ মানুষের পকেট কাটতে শুরু করেছে মুনাফাখোর ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, নয়াবাজার, শান্তিনগর কাঁচাবাজার ও রামপুরা বাজার ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সোমবার প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪৫-৫০ টাকা। যা এক দিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৪০-৪৫ টাকা। নয়াবাজারে দেশি পেঁয়াজ ৫২-৫৪ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদিন আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকা। যা এক দিন আগে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ টাকা।
এদিকে পণ্যটির দাম পাইকারি বাজারেও বেড়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজার পেঁয়াজের পাইকারি আড়ত ঘুরে ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজ মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৪ টাকা। যা গত দু’দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩৮-৪২ টাকা। এ ছাড়া আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা। যা দুই দিন আগে বিক্রি হয়েছে ২৮-৩২ টাকা।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার ও পাইকারি আড়ত ঘুরে পেঁয়াজের কোনো ধরনের সংকট দেখা যায়নি। কারওয়ান বাজার ও শ্যামবাজার পেঁয়াজের আড়তে পর্যাপ্ত সরবরাহ দেখা গেছে। প্রত্যেকটি আড়তে থরে থরে সাজিয়ে রাখা আছে পেঁয়াজের বস্তা। এ ছাড়া খুচরা বাজারেও কোনো ধরনের সংকট নেই। সরবরাহ স্বাভাবিক। তবুও বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।
এর কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. হাসেম আলী বলেন, বাজারে সরবরাহ ঠিক আছে, কিন্তু বেশি দাম দিয়ে আনতে হয়েছে। যে কারণেও বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে। বেশি দাম দিয়ে আনার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, পেঁয়াজের মৌসুম শেষ হচ্ছে। যে কারণে পেঁয়াজের সরবরাহ কমতির দিকে। নতুন মৌসুমে পেঁয়াজ আবাদ হলে দাম কমতে থাকবে।
নয়াবাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, পাইকারি বাজারে দাম বাড়তি।
তাই বেশি দাম দিয়ে এনে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। এই বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. জামিল বলেন, এমন এক দেশে বাস করি যেখানে বিক্রেতারা তাদের মনমতো পণ্যের দাম বাড়ায় আবার কমায়। কিন্তু দেখার কেই নেই। তিনি বলেন, কোরবানির ঈদের সময় মাংস রান্নায় পেঁয়াজের চাহিদা থাকায় ঈদের এক মাস আগ থেকে পেঁয়াজের দাম বাড়াতে শুরু করে বিক্রেতারা।
ঈদের আগে কমলেও এখনও পণ্যটির চাহিদা সমানভাবে থাকায় তারা একজোট হয়ে পণ্যটির দাম আবার বাড়াতে শুরু করেছে। দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বিক্রেতারা বলছেন, নিলে নেন, না নিলে না নেন। জামিল বলেন, আমরা তাদের কাছে জিম্মি। যখন যেভাবে দাম চায় সেভাবে টাকা দিয়ে পণ্য কিনতে হয়। প্রতিবাদ করলে সব বিক্রেতা একজোট হয়ে কথা বলে। তখন ক্রেতারা অসহায় হয়ে পড়ে। রামপুরা বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা জোবায়দা বেগম বলেন, বাজারে এসে দেখি পেঁয়াজের দাম আবার বেড়েছে।
কারণ সবার বাসার ফ্রিজে এখনও মাংস আছে। আর রান্নাও হচ্ছে। যে কারণে পেঁয়াজও লাগছে। আর এ সুযোগটা কাজে লাগাচ্ছে বিক্রেতারা। তারা পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ টাকা বাড়িয়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, এখন যা নেয়ার নিয়ে নেন, কারণ সামনে দাম আরও বাড়বে। জোবায়দা বেগম অভিযোগ করেন, ‘বাজারে কোনো তদারকি নেই।
যে কারণে সব সময় ক্রেতাদের ঠকতে হচ্ছে। জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঈদের পর থেকে বাজার মনিটরিং শুরু হয়েছে। কোনোভাবে যদি কারসাজি করে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয়, তাহলে অসাধুদের ছাড় দেয়া হবে না।
Leave a reply