চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের গ্রুপিং দ্বন্দ্বে খুলছে না ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রীনিবাস’। জেলার দূর-দূরান্তের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নারী শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এ হোস্টেল। দেড় বছর আগে নির্মাণকাজ শেষ হলেও ‘বিশেষ পরিস্থিতি’র কারণে হলটি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়নি কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল।
কলেজের অন্য ৪ ছাত্র ও ১ ছাত্রী হলের সঙ্গে এটিও বন্ধ থাকে। তিন মাস আগে উদ্বোধন হওয়ায় দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মনে আশার সঞ্চার হয়েছিল। কিন্তু কলেজ ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ঠেলাঠেলিতে যাচাই-বাছাইয়ে মনোনীত হয়েও ৪৭ শিক্ষার্থী হলে উঠতে পারছেন না। অন্যদিকে হল খোলার আশ্বাস পেয়ে ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ছাত্রী হলের নির্মাণকাজ শুরু হয়। পরে এর নামকরণ করা হয় ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রীনিবাস’। ২৫ কক্ষের পাঁচতলা হলটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৮ সালের শুরুর দিকে। জামায়াত-শিবির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত নগরীর ঐতিহ্যবাহী দুটির মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজ একটি। সে সময় ‘বিশেষ পরিস্থিতি’র কথা বিবেচনা করে কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল হলটি চালুর সিদ্ধান্ত নেয়নি। নগরীর সরকারি কলেজগুলোয় বঙ্গবন্ধু পরিবারের কোনো সদস্যের নামে তৈরি প্রথম স্থাপনা এটি। এর দেড় বছর পর ২৪ মে ছাত্রী হোস্টেলের উদ্বোধন হয়। শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল একশ’ আসনের হলটি উদ্বোধন করেন। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবুল হাসানসহ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিল।
অভিযোগ রয়েছে, কলেজ ছাত্রলীগের একটি পক্ষ চাইলেও অপর পক্ষের বাধার মুখে পড়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। হল চালুর বিষয়ে কর্তৃপক্ষ উভয় সংকটে পড়েছেন। ফলে নগর বিশেষ শাখার (সিটিএসবি) রিপোর্টের দোহাই দেয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের। কলেজ কর্তৃপক্ষ বলছেন, সিটিএসবি রিপোর্ট হাতে পেলেই শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন। অন্যদিকে সিটিএসবি বলছে তার উল্টো।
কলেজ বিজ্ঞপ্তি সূত্র জানায়, ৩ আগস্ট ছাত্রীনিবাসে ভর্তি সংক্রান্ত নোটিশ দেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ৭ ও ৮ আগস্ট আগ্রহী শিক্ষার্থীরা ২০০ টাকা ফি জমা দিয়ে আবেদনপত্র সংগ্রহ করেন। ১৮ আগস্ট আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নেন যাচাই-বাছাই কমিটি। এরপর মনোনীত ৪৭ ছাত্রী ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে ২৩ আগস্ট হলে ওঠার কথা ছিল। এ কারণে অনেক ছাত্রী হলে ওঠার আশায় ভাড়া বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনুমতি না মেলায় এসব শিক্ষার্থী চরম বিপাকে পড়েছেন।
চট্টগ্রাম কলেজ অধ্যক্ষ আবুল হাসান বলেন, পুলিশের রিপোর্ট পেলেই শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারবেন। বিষয়টি এখন পুলিশ রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে। তবে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম বলেন, ঈদের আগ দিয়ে ছাত্রী হোস্টেলের বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। এখানে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। তড়িঘড়ি করে জামায়াত-শিবিরের অনেক নারী নেত্রী হলে ঢুকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাছাড়া ঈদের সময় অনেক শিক্ষার্থী তাদের গ্রামের বাড়িতে ছিল। ফলে তারা আবেদন করতে পারেনি। এ কারণে হোস্টেল বরাদ্দের পুনঃবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে বলেছি।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মল্লিক বলেন, সাক্ষাৎকার শেষে ৪৭ নারী শিক্ষার্থী হলে ওঠার জন্য মনোনীত হয়। কিন্তু কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিটিএসবি’র রিপোর্টের কথা বলা হচ্ছে। রিপোর্ট পাওয়ার আগে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা।
সিএমপির উপপুলিশ কমিশনার (সিটিএসবি) আবদুল ওয়ারিশ বলেন, হোস্টেলে থাকবেন এমন শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে রিপোর্ট দেয়ার কিছু নেই। বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ চাইলে আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।
Leave a reply