মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলেন কাজের সন্ধানে। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর রিনিউ করতে পারেননি। এরপর ভাগ্য বিড়ম্বনায় মালয়েশিয়ার জঙ্গলে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন ১৬ জন প্রবাসী শ্রমিক।
এদের মধ্যে অনেকের কাজের পারমিট বাতিল করে দেয়া হয়েছে। নিয়োগদাতাদের কাছ থেকে পালাতে গিয়ে জঙ্গলে অস্থায়ী খুপরিতে নিয়েছেন তারা। ধরা পড়লে দেশে ফেরত আসতে হবে। প্রায় এক বছর ধরে জঙ্গলেই অছেন এসব শ্রমিক।
শ্রমিকদের দুর্বিসহ জীবনের চিত্র উঠে এসেছে মালয়েশিয়ান সংবাদমাধ্যম মালয়েসিকিনি ও বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম কালের কণ্ঠের এক যৌথ অনুসন্ধানে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত বছর মালয়েশিয়ায় কাজ হারিয়েছেন এমন ১৬ বাংলাদেশি কুয়ালালামপুরের কাছে একটি হাইওয়ের কাছে জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। তারা আশায় আছেন কবে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তারা নতুন করে অনুমোদন পাবেন।
সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ধরা পড়লেই দেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে এমন আতঙ্কে এই ১৬ জনের মতো আরও বহু বাংলাদেশি শ্রমিক জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন।
পালিয়ে থাকা ওই শ্রমিকদের মধ্যে একজন সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশে তাদের বাড়িতে থাকা গরুও তাদের চেয়ে ভালোভাবে দিন কাটাচ্ছে। তারা সেলানগরের একটি ছাপা কারখানায় কাজ করতেন। সেখানে শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত মেসে থাকতেন। তবে শ্রমিক সংখ্যা বেশি হওয়ায় চারজনের কক্ষে ২০ জন পর্যন্ত থাকতে কখনো।
অতিরিক্ত লোক থাকায় গত বছর তাদের মজুরি কমিয়ে দেয়া হয়। নিয়োগদাতাদের এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানালে অনেককে চাকরিচ্যুত করা হয়। নিয়োগদাতা ও বাংলাদেশ হাই কমিশনের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হওয়ায় তাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়নি। দেয়া হয়নি নতুন কাজের পারমিট। প্রাপ্য বেতনও পরিশোধ করা হয়নি। এরপর তারা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন জঙ্গলে।
জঙ্গলে বাসরত একজন কিশোরগঞ্জের নোয়াকান্দি গ্রামের মান্নান মিয়া জানান, মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য কামাল চন্দ্র দাস নামের এক দালালকে ১২ হাজার রিঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তার কাছে ওই লেনদেনের কোনো কাগজপত্র নেই। ওই দালাল তার টাকা মেরে দিয়েছে। তাকে বৈধ কাগজপত্র দেয়া হয়নি। প্রফেশনাল ভিসায় গিয়েও অবৈধ রয়ে গেছেন তিনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশি দূতাবাসের এক কর্মকর্তা অনুসন্ধানকারীদের জানান, ফোনে কথা বলা, ধুমপান করা, নিয়মভঙ্গসহ বিভিন্ন অপরাধে এসব শ্রমিককে শাস্তি দিয়েছে কোম্পানি। আর শেষ পর্যন্ত অনেক শ্রমিককেই দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, মালয়েশিয়ায় গত এক বছরে প্রতিদিন গড়ে দুজন করে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। বেশিরভাগেরই মারা যাচ্ছেন হার্ট এটাকে। তাদের বয়স ১৮ থেকে ৩২ বছরের মধ্যে। গত এক বছরে অন্তত ৭৩৬ জন শ্রমিকের এরকম মৃত্যু হয়েছে ।
Leave a reply