হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশটির ‘জনগণ’কে ২০২০ সালের জন্য শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছেন নরওয়ের এক রাজনীতিক।
মঙ্গলবার এক টুইটবার্তায় নরওয়ের পার্লামেন্ট সদস্য গুরি মেলবি বরেন, ২০২০ সালের নোবেল পুরস্কারের জন্য আমি হংকংয়ের জনগণকে মনোনীত করেছি। যারা তাদের বাকস্বাধীনতা এবং মৌলিক গণতন্ত্রের দাবিতে নিজেদের জীবন বাজি রেখেছেন।
এদিকে হংকংয়ের গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনকারীদের প্রতি কড়া সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট কংগ্রেস। চীনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানান দিয়ে কংগ্রেসের নিুকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদ চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিল পাস করেছে।
এর মধ্যে ‘হংকং ডেমোক্রেসি অ্যাক্ট’, ‘প্রটেক্ট হংকং অ্যাক্ট’, হংকংয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের স্বীকৃতি সংক্রান্ত বিল অন্যতম। মঙ্গলবার পরিষদের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট সদস্যরা কণ্ঠভোটে এ বিলগুলো পাস করেন।
এর মাধ্যমে হংকংয়ে জ্বলতে থাকা বিক্ষোভ-আগুনে যুক্তরাষ্ট্র ঘি ঢালল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জবাবে চীন তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। চীনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নাক না গলাতে হুশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।
এদিকে পার্লামেন্টে বার্ষিক ভাষণ (স্টেট অব ইউনিয়ন) দিতে গিয়ে বুধবার বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতাদের তোপের মুখে পড়েন হংকংয়ের নির্বাহী প্রধান ক্যারি ল্যাম।
রয়টার্স বলছে, বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের আলোচনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে এ বিলগুলো পাস হল। প্রতিনিধি পরিষদের সদস্যরা জানান, তারা চীনের বিরুদ্ধে আগ্রাসী অবস্থান নিতে এবং চার মাস চলা হংকংয়ের আন্দোলনে সমর্থন প্রকাশেই বিলগুলোর পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
‘হংকং হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি অ্যাক্ট’ বিলে হংকংকে বিশেষ সুবিধা দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবছর শহরটির স্বায়ত্তশাসন বলবৎ আছে কি না, সে সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রত্যয়নপত্র নেয়ার কথা বলা হয়েছে।
‘প্রটেক্ট হংকং অ্যাক্ট’ বিলে শহরটির প্রশাসনের কাছে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে পারে এমন সামরিক ও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রপাতি বিক্রি বন্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে বলা হয়েছে।
তৃতীয় বিলটিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হংকংয়ের সম্পর্কের স্বীকৃতি এবং শহরটির বাসিন্দাদের আন্দোলনের অধিকারে সমর্থন জানানো হয়। চতুর্থ বিলটিতে চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের নির্বাহী মেং ওয়ানঝুকে যুক্তরাষ্ট্রে বহিঃসমর্পণে চীনের বিরোধিতার প্রতিক্রিয়ায় কানাডার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে।
গত বছরের ডিসেম্বরে মেং কানাডায় গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক জালিয়াতি ও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইরানে হুয়াওয়ের ব্যবসা করার অভিযোগ রয়েছে।
হংকংয়ের স্থিতিশীলতাকে ঝুঁকিতে ফেলার দুষ্ট উদ্দেশ্যে মার্কিন আইনপ্রণেতারা এসব বিল এনেছেন বলে অভিযোগ করেছে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গ্যাং শুয়াং বলেন, সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির স্বার্থ রক্ষায় চীন কার্যকর ব্যবস্থা নেবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
বিলগুলো আইনে পরিণত হতে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন লাগবে। এরপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাক্ষর বা ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়ার সমাপ্তি ঘটবে।
এদিকে হংকংয়ের নেতা ক্যারি ল্যাম বুধবার পার্লামেন্টে বার্ষিক ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ ভাষণ প্রদানকালে বিভিন্ন প্রশ্নের মুখে তা স্থগিত করতে বাধ্য হন।
বিবিসি জানায়, টানা বিক্ষোভের পর এদিন প্রথমবারের মতো পার্লামেন্ট অধিবেশন বসে। এ অধিবেশনেই প্রত্যর্পণ বিলটি প্রত্যাহারের সুযোগ ছিল। কিন্তু ল্যাম অধিবেশনের শুরুতেই তার বক্তব্য শুরু করেন।
এ সময় বিরোধীরা চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। তাদের অনেকে টেবিলের ওপর উঠে যান। এ সময় তারা ‘পাঁচটি দাবি- একটিও কম নয়’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
বিরোধী নেত্রী তানিয়া চ্যান হংকংয়ের সংকটের জন্য ল্যামকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ক্যারি ল্যামের দুই হাত রক্তে রঞ্জিত। আমরা তার পদত্যাগ চাই। তার সরকার চালানোর মতো কোনো যোগ্যতা নেই।
বিক্ষোভকারীদের ৫টি দাবি হল : ১. বিক্ষোভকে দাঙ্গা হিসেবে না দেখা। ২. গ্রেফতার নেতাকর্মীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা। ৩. পুলিশি নৃশংসতার নিরপেক্ষ তদন্ত হতে হবে। ৪. সর্বজনীন ভোটাধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ৫. প্রত্যর্পণ বিল প্রত্যাহার করতে হবে।
Leave a reply